Advertisement
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
COVID-19

Covid-19: তরুণের মৃত্যু করোনায় নয়, হাই কোর্টে মা

বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোম করোনা পজ়িটিভের রিপোর্ট দেওয়ায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে অনেক টানাপড়েনের পরে শুভ্রজিৎকে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২১ ০৬:৩৮
Share: Save:

একটি নার্সিংহোম করোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট দেওয়ার পরে কলকাতার চার-চারটি হাসপাতালে ঠোক্কর খেয়ে শেষ পর্যন্ত তাঁর ঠাঁই হয় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে তাঁর মৃত্যুর এক বছর পরে জানা গেল, শুভ্রজিৎ চট্টোপাধ্যায় (১৮) নামে ওই তরুণের আদৌ করোনা হয়নি। এই নতুন তথ্যের ভিত্তিতে আইনি লড়াইয়ে নেমেছেন তাঁর মা সর্বাণী চট্টোপাধ্যায়। “আদালতের উপরে আমার আস্থা আছে। আশা করি, এ বার ন্যায্য বিচার পাবই,” বলছেন সন্তানহারা মা।

বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোম করোনা পজ়িটিভের রিপোর্ট দেওয়ায় ২০২০ সালের জুলাইয়ে অনেক টানাপড়েনের পরে শুভ্রজিৎকে কলকাতা মেডিক্যালে ভর্তি করানো হলেও শেষরক্ষা হয়নি। তিনি মারা যান। ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালতের দ্বারস্থ হন তাঁর বাবা-মা। আদালত মৃতদেহের ময়না-তদন্ত এবং অন্য সব পরীক্ষা করার নির্দেশ দেয়। সেই সব রিপোর্ট থেকে যখন জানা গেল যে, শুভ্রজিতের করোনা হয়নি, তত দিনে বছর ঘুরে গিয়েছে!

ছেলের মৃত্যুর পরেই বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়, বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো আইনজীবীরা আইনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন চট্টোপাধ্যায় পরিবারের দিকে। বিক্রমবাবু সোমবার বলেন, কিসের ভিত্তিতে মিডল্যান্ড নার্সিংহোম কোভিড পজ়িটিভ রিপোর্ট দিয়েছিল, সেই ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য আদালতে আর্জি জানাবেন তাঁরা।

বিক্রমবাবু জানান, শুভ্রজিৎকে প্রথমে ইএসআই হাসপাতাল এবং সেখান থেকে মিডল্যান্ড নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানেই করোনা-আক্রান্ত সন্দেহে তাঁকে অন্যত্র পাঠানো হয়। চারটি হাসপাতাল ঘুরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গেলেও সহজে জায়গা মেলেনি। সর্বাণীদেবী আত্মহত্যার হুমকি দিলে শেষ পর্যন্ত ওই তরুণকে ভর্তি নেওয়া হয়।

পরিবার জানিয়েছে, ২০২০-র ১০ জুলাই বিকেলে শুভ্রজিৎকে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়। পরের দিন ভোরে ছেলের মৃত্যুর খবর আসে। ওই হাসপাতালের সুপারের সঙ্গে দেখা করলে তিনি জানান, শুভ্রজিতের কোভিড হওয়ায় তাঁর দেহ নিয়ে যাবে পুরসভা। বেলঘরিয়ার মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের রিপোর্টের ভিত্তিতেই কোভিডের কথা জানিয়েছিল মেডিক্যাল কলেজ। শোকাহত মা-বাবা ১২ জুলাই বেলঘরিয়া থানায় অভিযোগ জানান। শুরু হয় আইনি যুদ্ধ। ছেলের ময়না-তদন্ত করিয়ে তার রিপোর্ট চান সর্বাণীদেবী। কলকাতা হাই কোর্টে ওই মহিলার দাবি ছিল, তাঁর ছেলে সত্যিই করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন কি না, সেটাই বলুক পুলিশ-প্রশাসন।

শুভ্রজিতের আইনজীবীরা জানান, হাই কোর্টের পাশাপাশি মিডল্যান্ড নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য কমিশনে মামলা হয়েছিল। সেই মামলা লড়েন জয়ন্তনারায়ণবাবু। কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় ওই নার্সিংহোমের পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা করেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় ওই নার্সিংহোম। সেই মামলাও চলছে উচ্চ আদালতে।

বিক্রমবাবু জানান, আদালতের নির্দেশে ময়না-তদন্ত হলেও প্রশাসনের কাছ থেকে তার পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট কিছুতেই মিলছিল না। নানা ভাবে চেষ্টা করে এবং শুভ্রজিতের পরিবারের তরফে তথ্যের অধিকার আইনে (আরটিআই) আর্জি জানিয়ে সেই রিপোর্ট বার করা হয়। তাতেই আসল তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE