Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

টাকা নিয়ে চাকরি-চক্রের বলি? আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের জলাশয়ে যুবকের দেহ

প্রসেনজিতের দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ছিল। গোটা শরীরে কালশিটের দাগ।

নিথর: প্রসেনজিৎ সিংহ। আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। —নিজস্ব চিত্র।

নিথর: প্রসেনজিৎ সিংহ। আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতর থেকে উদ্ধার হল মালদহের বাসিন্দা প্রসেনজিৎ সিংহ (২৮) নামে এক যুবকের মৃতদেহ। শনিবার সকালে দেহটি বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরের একটি জলাশয়ে ভাসতে দেখা যায়। এই ঘটনায় খোদ পুলিশের বিরুদ্ধেই ওয়াটগঞ্জ থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করছে ওই যুবকের পরিবার। চাকরির টোপ দিয়ে প্রসেনজিতের কাছ থেকে পুলিশেরই এক কর্মী টাকা নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই টাকা ফেরত চাইতেই প্রসেনজিৎ কলকাতায় এসেছিলেন বলে পরিবার সূত্রে দাবি।

প্রসেনজিতের দেহটি ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। তবে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, মৃতদেহের মাথায় ক্ষত ছিল। গোটা শরীরে কালশিটের দাগ। পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার ভোরে বডিগার্ড লাইন্সের জলে একটি দেহ ভাসতে দেখে ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের জানান এক পুলিশকর্মী। দেহটি উদ্ধার করে এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো হয়। মৃতের বাবা উত্তমকুমার সিংহ উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার একটি পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল। খবর পেয়ে শনিবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছে হাসপাতালে যান উত্তমকুমারেরা। রবিবার তিনিই বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং ইন্দ্রজিৎ মণ্ডল নামে দু’জনের বিরুদ্ধে ওয়াটগঞ্জ থানায় ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন।

উত্তমকুমার এ দিন জানান, তাঁর পরিবারের প্রায় সকলেই পুলিশে চাকরি করেন। কলা বিভাগে স্নাতকোত্তর পাশ করা প্রসেনজিৎও পুলিশে চাকরি করতে চাইতেন। সে জন্য পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। মালদহে পুখুরিয়া থানার মুরচা গ্রামে তাঁদের বাড়ি। অভিযোগ, পাশের গ্রাম হরিপুরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ এবং ইন্দ্রজিৎ দুই ভাই। তাঁরাই প্রসেনজিৎকে কলকাতা পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেন। ইন্দ্রজিৎ নিজে কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের কর্মী এবং বিশ্বজিৎ ডাক বিভাগের কর্মী বলে উত্তমকুমারের দাবি। ইন্দ্রজিৎ কলকাতার পাতিপুকুর এলাকায় কর্মরত বলেও জানিয়েছেন উত্তমকুমার। তাঁর কথায়, ‘‘চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ইন্দ্রজিতেরা আমাদের থেকে ছ’লক্ষ টাকা চায়। ছেলের জন্য এখনকার মতো কোনও মতে তিন লক্ষ টাকার ব্যবস্থা করি। তিন দফায় ওরা মোট তিন লক্ষ টাকা নেয়। কিন্তু ছেলের চাকরি হয়নি। টাকা ফেরত চাইলে অনেক বার ঘুরিয়েছে, শেষে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলায় টাকা ফেরত দিতে রাজি হয়েছিল।’’

গত ৯ অগস্ট টাকা ফেরত নিতেই প্রসেনজিৎ কলকাতায় আসেন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। বাবার পুলিশের চাকরির সুবাদে বডিগার্ড লাইন্সেই তিনি থাকছিলেন। উত্তমকুমার বলেন, ‘‘শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায় ছেলের সঙ্গে শেষ বার কথা হয় আমাদের। বলে, টাকা দেয়নি ওরা। রবিবার সকালে বাড়ি ফিরে আসবে বলেছিল ও। কিন্তু তা ওরা হতে দেয়নি। তার আগেই আমার ছেলেকে মেরে জলে ভাসিয়ে দিয়েছে।’’

এ দিন রাত পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের তরফে মুখ খোলা হয়নি। ওয়াটগঞ্জ থানা সূত্রের দাবি, মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। বডিগার্ড লাইন্সের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রবিবার রাতে ছেলের মৃতদেহ নিয়ে গ্রামে ফেরার পথে উত্তমকুমার বলেন, ‘‘আর দু’বছর আমার পুলিশে চাকরি রয়েছে। যে পেশায় জীবন কাটালাম, সেই পেশার লোকই ছেলেটাকে মেরে ফেলবে ভাবিনি।’’ পুখুরিয়ার স্থানীয় সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, প্রসেনজিতের মৃত্যুর কথা জানাজানি হওয়ার পর থেকে ইন্দ্রজিৎ এবং বিশ্বজিতের পরিবারের লোকজনকে দেখা যায়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Death Murder Malda Alipore Bodyguard Line
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy