Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Darjeeling

দার্জিলিঙে বিমলের ছবি, সোনাদায় বিনয়দের মিছিল, নয়া সমীকরণ নিয়ে জল্পনা পাহাড়ে

গুরুং প্রকাশ্যে আসার পর থেকে মুখ খোলেননি বিনয়। কিন্তু এ দিনের মিছিলে এটুকু স্পষ্ট যে, তাঁরা গুরুংয়ের জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখবেন না।

দু’পক্ষের মিছিল ঘিরে ফের উত্তেজনা বাড়ছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। —নিজস্ব চিত্র

দু’পক্ষের মিছিল ঘিরে ফের উত্তেজনা বাড়ছে পাহাড়ের রাজনীতিতে। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২০ ১৯:০৮
Share: Save:

গীতাংদারার ছাদে পতপত করে উড়ছে বিমল গুরুংয়ের ছবি দেওয়া হলুদ-সবুজ পতাকা। অক্টোবরের পাহাড়ের আকাশে মেঘের চিহ্ন নেই। পতাকার নীচে সিঁড়িতে স্লোগান উঠছে— ‘বিমল গুরুং জিন্দাবাদ’।

দার্জিলিঙের প্রাণকেন্দ্রে চকবাজার এলাকার মোটর স্ট্যান্ডের তিনতলা বাজার শহরে যে কোনও সমাবেশের মঞ্চ হিসাবে পরিচিত। ক’দিন আগেও পাহাড়ের বুকে গুরুংয়ের নাম উচ্চারণ করতেও বুক কাঁপত বিমলের অতিবড় সমর্থকেরও। শনিবার সেই বিমলের নামে জয়ধ্বনি দিয়ে শহরের প্রাণকেন্দ্রে তাঁর ছবি-সহ পতাকা তুলছেন সমর্থকরা। বিমলের পাহাড়ে প্রত্যাবর্তনের আগাম ঘোষণা। কারণ, পঞ্চমীর সন্ধ্যায় প্রায় ৩ বছর অজ্ঞাতবাস কাটিয়ে কলকাতায় বসে দ্রুত পাহাড়ে ফেরার কথাই বলেছিলেন বিমল।

সেই প্রত্যাবর্তন কতটা ‘মসৃণ’ হবে, তা নিয়েই পাহাড়ের আনাচেকানাচে চলছে জল্পনা। শনিবার বিমলপন্থীদের পতাকা তোলার পর দিন রবিবার সকালে সোনাদায় বড় মিছিল করেছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার যুব শাখা। নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সকলে পাহাড়ে বিনয় তামাঙের অনুগামী বলেই পরিচিত। সেই মিছিলে বিমলের নাম না-করা হলেও একাধিক স্লোগানে তাঁকে ‘ক্ষমতালোভী’ বলে ধিক্কার দেওয়া হয়েছে। বিনয় বা তাঁর শিবিরের প্রথম সারির কোনও নেতা ওই মিছিলে ছিলেন না। কিন্তু মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা এবং স্লোগানে স্পষ্ট যে, নিজেদের পাহাড়ে ‘মূল শক্তি’ হিসাবে প্রমাণ করতেই বিনয়পন্থীদের ওই মিছিল। গুরুং প্রকাশ্যে আসার পর থেকে মুখ খোলেননি বিনয় বা অনীত থাপা। কিন্তু এ দিনের মিছিলে এটুকু স্পষ্ট যে, তাঁরা গুরুংয়ের জন্য লাল কার্পেট বিছিয়ে রাখবেন না।

আরও পড়ুন: পুজোয় অনুদান, বীরভূম জুড়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ধন্যবাদ দিদি আর ভাই কেষ্টকে

২০১৭ সাল থেকে পাহাড়-ছাড়া গুরুং। কিন্তু দীর্ঘ অনুপস্থিতিতেও যে তাঁর জনপ্রিয়তায় খুব ভাটা পড়েনি, তার প্রমাণ মিলেছিল গত লোকসভা নির্বাচন এবং দার্জিলিং বিধানসভার উপনির্বাচনের ফলাফলে। দুই ক্ষেত্রেই তৃণমূল এবং বিমল-বিরোধী বিনয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার জোট পর্যুদস্ত হয়েছিল বিজেপি প্রার্থীদের কাছে। পাহাড়ের মানুষ জানেন, সশরীরে না থেকেও বিজেপি-র পিছনে ছিলেন গুরুংয়ের সমর্থকরা। পাহাড়ের মানুষের সহানুভূতি ছিল গোর্খাল্যান্ডের জন্য ‘লড়াই’ করতে গিয়ে ‘ফেরার’ বিমল দাজুর প্রতি।

আরও পড়ুন: সীমান্তে শান্তি চায় ভারত, চিনকে ১ ইঞ্চি জমি না ছাড়ারও বার্তা রাজনাথের

সেই দাজুই (দাদা) প্রকাশ্যে এসে ভোলবদল করেছেন রাজনৈতিক অবস্থানের। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে পাহাড়ে কার্যত সশস্ত্র আন্দোলনের পথে হেঁটেছিলেন গুরুং। অজ্ঞাতবাস থেকে ফিরে সেই মমতারই প্রশংসায় পঞ্চমুখ গুরুং কার্যত ‘নতজানু’ তৃণমূলের সামনে। যদিও তাঁর সিদ্ধান্তকে স্বাগতই জানাচ্ছেন গুরুংয়ের ঘনিষ্ঠরা। লেবংয়ের এক কট্টর গুরুংপন্থী নেতার কথায়, ‘‘বিভিন্ন মামলায় অভিযুক্ত হয়ে প্রায় ৫,০০০ গুরুং সমর্থক আর সক্রিয় কর্মী পাহাড়-ছাড়া। তাঁরা খানিকটা স্বস্তি পাবেন এই সিদ্ধান্তে।”

কিন্তু আমজনতা? যারা এতদিন গুরুংকে ‘শহিদ’-এর মর্যাদা দিয়েছে, তারা কী ভাবে দেখবে ওই সিদ্ধান্তকে?

পাহাড়ের রাজনীতিতে ‘ছোট শরিক’ বলে পরিচিত অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগ বা সিপিআরএমের নেতারা খুব একটা মুখ খুলছেন না এখন। বহুবার প্রশ্নের পর তাঁদের একজন বললেন, ‘‘এখন দেখার সময়। আমরা শুধু পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি।” সিপিআরএমের এক নেতার ইঙ্গিত, ‘‘গুরুং পাহাড়ে ফিরলেও কতদিন থাকতে পারবে তা নিয়ে সংশয় আছে।”

বস্তুত, গোটা দার্জিলিং পাহাড়ই এখন সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Darjeeling Bimal Gurung GJM Binay Tamang
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy