পাথরপ্রতিমার কুয়েমুড়ি গ্রামে জলের তলায় ঘরবাড়ি। নৌকাতেই দিন কাটছে বহু পরিবারের। রবিবার। ছবি: দিলীপ নস্কর
বানভাসি তল্লাটে কোথাও জেগে রয়েছে ডাঙা। সকাল হতেই সেখানে কলমি শাক খুঁজতে বের হন শ্রীমতী মণ্ডল। সন্তানদের সেদ্ধ করে দেবেন। নিজেরাও শাকসেদ্ধ দিয়ে দু’মুঠো ভাত খাবেন।
নোনা জলে ঘর ডুবে যাওয়ায় ইয়াসের পর থেকে নৌকায় দিন কাটছে পাথরপ্রতিমার হেড়ম্বগোপালপুর পঞ্চায়েতের কুয়েমুড়ি গ্রামের কংস মণ্ডল, তাঁর স্ত্রী শ্রীমতী এবং তাঁদের দুই মেয়ের। নৌকাতেই সংসার পেতেছেন তাঁরা। রবিবার দেখা গেল, দুই মেয়েকে শাকসেদ্ধ দিয়ে ভাত খাওয়াচ্ছেন শ্রীমতী। নদীর কাছেই জলে ডোবা বাড়ির দিকে দেখিয়ে বলেন, “এখনও জল নামেনি। জামাকাপড়, রান্নার সরঞ্জাম সব কিছুই ভেসে গিয়েছে।”
দুর্গতদের জন্য ত্রাণ দিচ্ছে সরকার। কিন্তু সরকারি ত্রাণ শিবির পেরিয়ে গ্রামে ঢুকছে না বলে অভিযোগ শ্রীমতীর মতো অনেক দুর্গতেরই। অর্জুন তাঁতি এবং সমরেন্দ্রনাথ মণ্ডল নামে আরও দুই দুর্গত জানান, ঘর ডোবার পর অনেকেই গ্রামে কোনও পাকা বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে রয়েছেন। কেউ কেউ নৌকায় রাত কাটাচ্ছেন। অনেকে রাস্তায় থাকছেন। কিন্তু গ্রামে কোনও ত্রাণ আসছে না। খাওয়ার জলও আসেনি। পুকুরের জল ব্যবহার করা যাচ্ছে না। গ্রামের ছ’হাজার মানুষের জন্য একটাই মাত্র নলকূপ। ফলে, খুবই সমস্যায় কাটছে।
কুয়েমুড়ি গ্রামের এক দিকে বঙ্গোপসাগর, এক দিকে নাগচরা নদী এবং আর এক দিকে মণি নদী। ইয়াসের দিন বিভিন্ন প্রান্তের প্রায় তিন কিলোমিটার নদী ও সমুদ্রবাঁধ ভেঙে গ্রাম প্লাবিত হয়। এখনও গ্রামের হাজার হাজার বিঘা কৃষিজমি, কয়েকশো মাছের পুকুর নোনা জলের তলায়। ভেঙে পড়েছে অধিকাংশ মাটির বাড়ি। গ্রামের কাছেই একটি হাই স্কুলে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে। সেখানে প্রায় দেড়শো মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে অনেকে ফিরে যান। এ দিন শিবিরে গিয়ে দেখা গেল, এখনও অন্তত ৫০ জন রয়েছেন। গ্রামের একটি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রেও শিবির হয়েছে। সেখানে ৩০ জন রয়েছেন। শিবিরে ঠাঁই নেওয়া অমর হালদার, মহম্মদ আলিফরা জানান, পঞ্চায়েত থেকে চাল-ডাল দিয়েছে। তা দিয়েই রান্না হচ্ছে।
তা হলে গ্রামের ভিতরে ত্রাণ পৌঁছচ্ছে না কেন? পাথরপ্রতিমার বিধায়ক সমীর জানা বলেন, “প্রতিটি পঞ্চায়েতের মাধ্যমে ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোথাও ত্রাণ না পৌঁছলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাঁধ মেরামতও দ্রুত শুরুর প্রস্তুতি চলছে।”
গ্রামটি কৃষিপ্রধান। গত বছর আমপানেও গ্রাম ডুবেছিল। তার পর থেকে এখনও ধান চাষ হয়নি। ফের জল ঢোকায় এ বছরও চাষ হবে না বলেই জানান গ্রামবাসীরা। কোথাও কোথাও অবশ্য আনাজের চাষ হয়েছিল। কিন্তু নোনা জলে সে সবই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। গ্রাম জুড়ে এখন পচা মাছের দুর্গন্ধ। ভেসে গিয়েছে অনেকের গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগিও। সে সবও মরে ভাসছে ইতিউতি।
গ্রামবাসীরা জানান, অবিলম্বে চুন, ব্লিচিং পাউডার, কার্বলিক অ্যাসিডের দরকার। কোনও মেডিক্যাল টিমও এলাকায় আসেনি বলে তাঁদের অভিযোগ। অমাবস্যার কটাল আসছে। গ্রামবাসীদের আশঙ্কা, কটালে ফের জল ঢুকবে। রাজকুমার মণ্ডল নামে এক দুর্গতের আক্ষেপ, “বাঁধ মেরামত করেও কটালের জল আটকানো মুশকিল। যতদিন না পাকা বাঁধ হচ্ছে, আমাদের মুক্তি নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy