—ফাইল চিত্র।
এক দিকে অতিমারি কোভিড, অন্য দিকে ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সেই সঙ্গেই মিউকরমাইকোসিস বা ছত্রাক সংক্রমণের চোখরাঙানি। ত্র্যহস্পর্শ!
তিন ফলায় বিদ্ধ বাংলায় কোভিড মোকাবিলার কাজ যাতে কোনও ভাবেই ব্যাহত না-হয়, সে-দিকে বিশেষ নজর দিচ্ছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেয়ে আগেভাগে কাজের রূপরেখা ছকে নিয়েছে কলকাতার প্রায় সব কোভিড হাসপাতালই।
মেডিক্যাল কলেজ-সহ প্রতিটি সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, ক্রিটিক্যাল কেয়ার টেকনিশিয়ান-সহ সব শ্রেণির কর্মী মিলিয়ে ১০০-২০০ জনের দল তৈরি করা হয়েছে। হাসপাতালের কোয়ার্টার, নার্সিং হস্টেল, অফিসভবন ছাড়াও সংলগ্ন হোটেল, অতিথিনিবাসে চিকিৎসক ও নার্সদের থাকা এবং খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আজ, মঙ্গলবার থেকে রবিবার পর্যন্ত বিশেষজ্ঞ থেকে জুনিয়র চিকিৎসক মিলিয়ে ৭০ জন করোনা মোকাবিলায় থাকবেন। তাঁদের জন্য কলেজ স্ট্রিট, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে হোটেলের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। ডিউটিতে থাকবেন নার্সেরা। থাকবেন লিফটম্যান, বিদ্যুৎকর্মী। ঝড়ে আচমকা বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে কত তাড়াতাড়ি ‘পাওয়ার ব্যাকআপ সিস্টেম’ বা বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা যায়, সোমবার তার মহড়াও হয়।
বেলেঘাটা আইডি, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, এমআর বাঙুর-সহ সব মেডিক্যাল কলেজ ও সরকারি সব কোভিড হাসপাতালে ঝড়ের মোকাবিলায় জরুরি ব্যবস্থা চালু করতে এ দিন বৈঠক করেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। অক্সিজেন সিলিন্ডার, ওষুধ-ইঞ্জেকশন, খাবার তৈরির কাঁচামাল, পানীয় জল যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত থাকে, তার ব্যবস্থা করছে সব হাসপাতাল। হাইমাস্ট আলো নীচে নামিয়ে আনতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে ছাঁটা হবে গাছের ডালপালাও। সার্চলাইট, ছাতা, গামবুট এবং অন্যান্য পরিকাঠামো আর সরঞ্জামও প্রস্তুত রাখছে হাসপাতালগুলি।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, সব হাসপাতালকে জেনারেটর এবং তা চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি মজুত রাখতে বলা রয়েছে। অক্সিজেনের পাইপলাইনগুলি ভাল ভাবে পরীক্ষা করে নিতে বলা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘উপকূলবর্তী এলাকার হাসপাতালে অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে জেনারেটরের মাধ্যমে অন্তত কনসেন্ট্রেটর চালিয়ে সঙ্কটাপন্ন রোগীর চিকিৎসা করা যাবে।’’ তিনি জানাচ্ছেন, সাগরদ্বীপের মতো উপকূলবর্তী এলাকার কোভিড হাসপাতাল থেকে সঙ্কটজনক করোনা রোগীদের কাকদ্বীপ ও ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। প্রতিটি জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ২৪ ঘণ্টা যোগাযোগ রাখার জন্য এ দিন বেলা ১২টা থেকে ২৮ মে রাত ৯টা পর্যন্ত স্বাস্থ দফতরে কন্ট্রোল রুম চালু থাকছে। শীর্ষ কর্তা, চিকিৎসক-সহ সকলকেই ১২ ঘণ্টা করে কন্ট্রোল রুমে ডিউটিতে রাখা হচ্ছে। তাঁদের জন্য পৃথক পরিবহণ ব্যবস্থাও থাকছে।
ঝড়ের পূর্বাভাস মিলতেই রাজ্যের সব সরকারি ও বেসরকারি কোভিড হাসপাতালকে পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। ঝড়ের মোকাবিলায় কী ধরণের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, সেই বিষয়ে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তারা এ দিন বৈঠক করেন বলে জানাচ্ছেন আমরি হাসপাতালের কর্তা তথা পূর্ব ভারতে বেসরকারি হাসপাতাল সংগঠনের সভাপতি রূপক বড়ুয়া। সরকারি নির্দেশিকা মেনে বেসরকারি হাসপাতালগুলিও বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে বলে জানান তিনি। ফর্টিস হাসপাতাল নিজস্ব বিপর্যয় মোকাবিলা দল গড়েছে। ছ’ঘণ্টা অন্তর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে হাসপাতালের শীর্ষ কর্তাকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বাগবাজারের সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর ঘিরেও বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। কারণ, সেখানে অন্যান্য ওষুধের পাশাপাশি রয়েছে করোনার প্রতিষেধকও। যে-সব সংস্থা স্টোরের ফ্রিজ দেখভাল করে, তাদের কর্মীদের ২৪ ঘণ্টা থাকতে বলা হয়েছে। সিইএসসি-র কাছ থেকে জেনারেটর আনা হয়েছে। দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে দমকল বাহিনী, পুলিশ এবং স্টোরের কর্মীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy