Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

ফিরতি বর্ষার ধাক্কা, অন্ধ্রের পথে কুমির

এ যেন বর্ষার বদলা নেওয়া! বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দেশের বর্ষার আগমনের নির্ঘণ্ট তালগোল পাকিয়ে দিয়েছিল। ফিরতি পথের বর্ষা তালগোল পাকিয়ে দিল ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্তের গতিপথের। মায়ানমারের কাছ থেকে ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে আসার পথে মুখ ঘুরে গিয়েছিল তার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:২৬
Share: Save:

এ যেন বর্ষার বদলা নেওয়া!

বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু দেশের বর্ষার আগমনের নির্ঘণ্ট তালগোল পাকিয়ে দিয়েছিল। ফিরতি পথের বর্ষা তালগোল পাকিয়ে দিল ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্তের গতিপথের। মায়ানমারের কাছ থেকে ওড়িশা-বাংলা উপকূলের দিকে আসার পথে মুখ ঘুরে গিয়েছিল তার। ক্রমশ সরতে সরতে বুধবার অন্ধ্রের কাছাকাছি পৌঁছেছে সে। মৌসম ভবনের আবহবিদদের মতে, ফিরতি বর্ষের বর্ষা বা উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর ধাক্কাতেই এমন দশা হয়েছে তার।

ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্তের নাম দিয়েছে মায়ানমার। সে দেশের বাসিন্দা মোন উপজাতির ভাষায় এর অর্থ কুমির। আবহবিজ্ঞানীদের অনেকেই বলছেন, উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু জোরালো ভাবে দক্ষিণ ভারতের দিকে বইছে। ওড়িশা-বাংলা উপকূলে পৌঁছতে হলে কুমিরকে সেই হাওয়ার বাধা টপকে আসতে হতো। কিন্তু সাগর থেকে সেই বাধা পেরনোর শক্তি জোগাড় করতে পারেনি সে। তাই পূর্ব ভারতের দিকেও আর পৌঁছতে পারেনি। উল্টে বাঁক নিতে নিতে দক্ষিণ ভারতের দিকে সরে গিয়েছে কিয়ান্ত।

ফিরতি বর্ষার ঠেলায় বঙ্গোপসাগরের ‘কুমির’ এমন দিগভ্রান্ত হয়ে পড়ে যে তার মতিগতি বুঝতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তাবড় তাবড় আবহবিজ্ঞানীরাও। কুমির শেষে ডাঙায় উঠবে নাকি পাক খেয়ে সাগরেই ফিরে যাবে, তা-ও বোঝা যাচ্ছিল না। এ দিন অবশ্য কুমিরের মতিগতি ধরতে পেরেছে মৌসম ভবন। জানিয়েছে, অন্ধ্রপ্রদেশের ওঙ্গোল এবং নেল্লোরের মাঝামাঝি কোনও জায়গা দিয়ে ডাঙায় উঠতে পারে কুমির। তবে তার থেকে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম। সাগরপাড়ি দিতে দিতে দুর্বল হয়ে পড়বে সে। ডাঙায় ওঠার আগে কুমির ঘূর্ণিঝড় থেকে অতিগভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে বলেও মৌসম ভবনের পূর্বাভাস।

কুমির এ রাজ্যে না এলেও তার লেজের ঝাপ্টায় বদলেছে আবহাওয়া। পুজোর পর থেকে যে নীল আকাশ বা হাওয়ায় হেমন্তের আভাস মিলছিল তা উধাও হয়েছে। এ দিন সকাল থেকেই আকাশ মেঘলা, মিলেছে ভ্যাপসা গরম। হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, পুজোর পর বর্ষা বিদায় নিতে শুরু করায় ঝাড়খণ্ড-বিহার থেকে শুকনো ঠান্ডা হাওয়া গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বয়ে আসছিল। ঘূর্ণিঝড় কিয়ান্ত এ রাজ্যের দিকে না এলেও তার প্রভাবে বঙ্গোপসাগর থেকে জোলো বাতাস দক্ষিণবঙ্গের পরিমণ্ডলে ঢুকছে। সেই জোলো হাওয়া ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করছে। তার ফলেই ভ্যাপসা গরম মিলছে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস এ দিন জানান, কিয়ান্তের প্রভাবে আজ, বৃহস্পতিবার ও কাল, শুক্রবার কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে হাল্কা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। শনিবার কালীপুজোর দিন বৃষ্টির আশঙ্কা তুলনায় কম। ‘‘কালীপুজোয় বড়জোর হাল্কা বৃষ্টি হতে পারে,’’ মম্তব্য আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তার।

গত কয়েক বছরে আমবাঙালির অভিজ্ঞতা, হেমন্ত ঋতুটাই যেন হারিয়ে যেতে গিয়েছে। এ বার দশমীর পর থেকে হেমন্তের আভাস মেলায় কিছুটা উল্লসিত হয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু কুমিরের লেজের ঝাপ্টায় সেই উল্লাস থেমে গিয়েছে। অনেকেরই প্রশ্ন, কুমির ডাঙায় ওঠার পরে কি হেমন্ত ফিরবে?

আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক বার আবহাওয়ার ছন্দ বিগড়োলে খুব দ্রুত তা ফিরে আসে না। এ ক্ষেত্রেও সাগরের হাওয়া ঠেলে ফের উত্তুরে বাতাসকে রাজ্যে ঢুকতে বেগ পেতে হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Andhra pradesh Kiante
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy