Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

দেওয়ালের মাটি ধুয়ে বেরিয়ে গিয়েছে বাঁশ-কাঠ

সকাল থেকেই দমকা হাওয়া দিচ্ছিল। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। ফলে, কাজকর্ম কিছু হয়নি। বিঘে তিনেক জমিতে ধান বুনেছিলাম। দুপুরে ভিজে ভিজে গিয়ে দেখে এসেছি।

বুলহুলের দাপটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

বুলহুলের দাপটে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে।

প্রদ্যুৎ হালদার (সাগরদ্বীপের কচুবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা)
শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:০০
Share: Save:

গ্রামের অনেকে বাড়ি ছেড়ে ত্রাণ শিবিরে চলে গিয়েছেন। অনেকে বলেওছিলেন ত্রাণ শিবিরে যেতে। কিন্তু বাবা দীর্ঘদিন ধরে গুরুতর অসুস্থ। তার উপরে বাড়ি থেকে ত্রাণ শিবির অনেকটা দূরে। শয্যাশায়ী বাবাকে কাদা রাস্তায় এত দূর নিয়ে যাওয়া কঠিন। তাই বাড়িতেই রয়েছি। কিন্তু রাত যত হচ্ছে, যত ঝড়ের গতিবেগ বাড়ছে, ততই ভয় বুকে চেপে বসছে। বাড়ির দরজা, জানলা বন্ধ করে বসে আছি। বৃষ্টির ছাঁট লেগে মাটির বাড়ির দেওয়াল ধুয়ে গিয়ে দু’-এক জায়গায় বাঁশ-কাঠ বেরিয়ে পড়েছে। সেখানে প্লাস্টিক, কাঁথা চাপা দিয়েছি। কিন্তু হাওয়ার দাপটে সবই প্রায় উড়ে যাওয়ার জোগাড়। বাচ্চারা সবাই কুঁকড়ে রয়েছে। বাবাকে ঘিরে বাকিরা বসে আছি। আজ রাতে আমাদের সবার ঘুম গেল।

সেই সকাল থেকে বিদ্যুৎ নেই। কেরোসিনের কুপি জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু ঘরের ফাঁকফোঁকর গলে হাওয়া ঢুকছে। সেই হাওয়ায় কুপি নিভে যাচ্ছে বারবার।

সকাল থেকেই দমকা হাওয়া দিচ্ছিল। সেই সঙ্গে বৃষ্টি। ফলে, কাজকর্ম কিছু হয়নি। বিঘে তিনেক জমিতে ধান বুনেছিলাম। দুপুরে ভিজে ভিজে গিয়ে দেখে এসেছি। গোটা মাঠের উপর দিয়ে কেউ যেন মই চালিয়ে গিয়েছে। পান বরজের অবস্থাও তেমনই। দড়িদড়া দিয়ে শক্ত করে টান দিয়ে এসেছি। ঝড়ের মুখেও যাতে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু এখন যা ঝড়ের বেগ!

বিকেলে হাওয়ার বেগ বাড়তে বাড়িতে এসে ঢুকেছি। বেলা থাকতেই রান্নাবান্নার কাজ সারা হয়েছে। আলুসেদ্ধ ভাত। বাচ্চাদের খাইয়ে দিয়েছি। বড়রা কেউ খাইনি।

নদীর পাশেই বাড়ি। দুপুরেই দেখেছিলাম নদী ফুঁসছে। বাঁধের অবস্থাও ভাল নয়। বাঁধের যে অংশে পাইলন দেওয়া হয়েছিল জোয়ারের ঢেউ লেগে মাটি ধুয়ে গিয়েছে। রাতে যদি নদীবাঁধ ভাঙে তা হলে কী হবে জানি না।

মোবাইলের সামান্য চার্জ আছে। ফোন করে আশপাশের লোকের খবর নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু নেটওয়ার্ক তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। শ্বশুরবাড়ির লোকজন সকলে ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। সেখান থেকে বারবার ফোন করছে। বলছে শিবিরে চলে যেতে। কিন্তু কী করে যাব।

শুনছি, রাত যত বাড়বে ঝড়ের বেগ তত নাকি বাড়বে। পোঁটলাপুঁটলি বাঁধা রয়েছে। তেমন বেগতিক
দেখলে বাড়ি ছাড়তে হবে। কিন্তু অসুস্থ বাবাকে নিয়ে, আমার বছর পাঁচেকের ছেলেকে নিয়ে ওই ঝড়ের মধ্যে কী ভাবে বাড়ি ছাড়ব, তা-ই ভেবে কিনারা পাচ্ছি না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy