দিঘায় উত্তাল সমুদ্রে জলোচ্ছাস। —নিজস্ব চিত্র
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আতঙ্কে কাঁপছে দিঘা। শুনশান রাস্তাঘাট থেকে সৈকত। অল্প যে কয়েকজন পর্যটক রয়েছেন, তাঁরা হোটলবন্দি। দোকানপাট খোলেনি। বহু মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে প্রশাসন। দুপুরের পর থেকে শুরু হয়েছে প্রবল ঝড়বৃষ্টি। সতর্ক নজর রয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। সব মিলিয়ে পর্যটকদের আনাগোনায় দিনভর যেখানে সরগরম থাকে, সেই সৈকত শহরই যেন ভয়ে গুটিয়ে। একইরকম তটস্থ শঙ্করপুর, তাজপুর, মন্দারমণি এলাকাও। বিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ। ফলে কার্যত অন্ধকারে ডুবে গোটা দিঘা শহর। পশ্চিম মেদিনীপুরেও কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঘাটালের সাংসদ দেব।
আবহাওয়া দফতরের শেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, দিঘা এবং সাগরদ্বীপ উপকূলের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করছে বুলবুল। কিন্তু উপকূলে আছড়ে পড়ার আগেই কার্যত বিপর্যস্ত পর্যটন শহর দিঘা। সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া ছিল উপকূলে। সঙ্গে বৃষ্টি। কিন্তু দুপুরের পর বেড়েছে ঝড়-বৃষ্টির দাপট। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঢেউয়ের উচ্চতা। স্থানীয়রা জনিয়েছেন, দুপুরের দিকে ভাটা থাকায় ততটা বোঝা যায়নি। কিন্তু বিকেলের পর জোয়ার শুরু হতেই বিশাল বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়তে থাকে উপকূলে। শঙ্করপুর, তাজপুর মন্দারমণি— সব জায়গাতেই জলোচ্ছ্বাস দেখা গিয়েছে। যে কোনও সময় উপকূল ছাপিয়ে শহরে জল ঢুকে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন হোটেলকর্মী ও স্থানীয়রা।
দিঘা থেকে অধিকাংশ পর্যটকই শুক্রবার ফিরে গিয়েছেন। নামমাত্র কিছু পর্যটক যাঁরা তার মধ্যেও থেকে গিয়েছেন, তাঁরা হোটেলবন্দি। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক তপন মাইতি বলেন, ‘‘এই সময়ের জন্য আগে থেকে যাঁরা বুকিং করে রেখেছিলেন বিভিন্ন হোটেলে, তাঁদের অধিকাংশই বুকিং বাতিল করেছেন। শনিবার ট্রেন-বাস সবই ফাঁকা এসেছে।’’ তপনবাবু আরও জানান, বিকেলের পর থেকে যে ভাবে ঝড়বৃষ্টি শুরু হয়েছে, তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সৈকতের ধারের অস্থায়ী দোকানগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা। কিন্তু গ্রামের দিকে আরও বেশি ক্ষতি হতে পারে।’’ একটি বেসরকারি হোটেলের ম্যানেজার বলেন, ‘‘আমাদের হোটেলে কয়েকজন পর্যটক রয়েছেন। তবে তাঁদের কাউকেই বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।’’
আরও পড়ুন: বাঁক নিয়েছে অতি ভয়ঙ্কর বুলবুল, গতিবেগ ১২০ কিমি, রাতে বড় ছোবল সুন্দরবনে?
পর্যটকদের সঙ্গে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারাও। প্রচুর মানুষকে উপকূল এলাকা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের রাখা হয়েছে দিঘার রতনপুর, জলধা ও চাঁদপুরে আয়লা সেন্টারে। শনিবার থেকে সেখানেই খাবার দেওয়া শুরু হয়েছে। রবিবারের জন্য মজুত রয়েছে শুকনো খাবার।
বিপর্যয়ের মোকাবিলায় শুক্রবারই দিঘা-শঙ্করপুরে পৌঁছে গিয়েছিল এনডিআরএফ। সতর্ক রয়েছেন জওয়ানরা। পাশাপাশি শনিবারও জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। দিঘা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ওই বৈঠকে পুলিশ, প্রশাসন, হাসপাতাল থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতিনিধিরাই উপস্থিত ছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই উপকূলে প্রচুর ঝাউগাছ ও কাঁচা বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সতর্কবার্তা পেয়ে শুক্রবারই সমুদ্র থেকে ফিরে এসেছেন মৎস্যজীবীরা।
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টের রায়: অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির হবে, মসজিদ বিকল্প জায়গায়
বুলবুলের প্রভাবে ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা পশ্চিম মেদিনীপুরেও। ঘাটালের সাংসদ দীপক অধিকারী দেব টুইট করেছেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হল কন্ট্রোল রুম। যে কোনও সমস্যা ও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে সরাসরি কন্ট্রোলরুমে যোগাযোগ করুন। এ ছাড়াও যে কোনও অসুবিধায় জেলা পরিষদেও যোগাযোগ করতে পারেন।’
আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড়ের সাতকাহন
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy