আন্তর্জাতিক নাম-তালিকা অনুযায়ী নতুন ঘূর্ণিঝড় পরিচিত হবে ‘অশনি’ নামে। সে বঙ্গভূমিতে কোনও রকম প্রত্যক্ষ হামলা চালাবে না বলে আবহাওয়া দফতর বার বার অভয় দিলেও ওই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব উপকূলের জন্য কোনও অশনি-সঙ্কেত বহন করছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
প্রতীকী ছবি।
আন্দামান সাগরের আঁতুড়ঘরে বাড়তে থাকা নিম্নচাপ থেকে এ বার বাংলার কোনও আশঙ্কা নেই বলে আগে থেকেই আশ্বাস দিয়ে চলেছে হাওয়া অফিস। গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে আন্দামানে দুর্যোগ শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লির মৌসম ভবনের হিসেব, সোমবার গভীর রাতেই আন্দামানের অদূরে ওই গভীর নিম্নচাপ শক্তি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে যেতে পারে। তবে ওই ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাবে মায়ানমারের দিকে। পশ্চিমবঙ্গে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।
আন্তর্জাতিক নাম-তালিকা অনুযায়ী নতুন ঘূর্ণিঝড় পরিচিত হবে ‘অশনি’ নামে। সে বঙ্গভূমিতে কোনও রকম প্রত্যক্ষ হামলা চালাবে না বলে আবহাওয়া দফতর বার বার অভয় দিলেও ওই ঘূর্ণিঝড় পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব উপকূলের জন্য কোনও অশনি-সঙ্কেত বহন করছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের একটি বড় অংশ জানাচ্ছেন, অশনি-সঙ্কেত কেন, তা বুঝতে হলে দু’টি রিপোর্ট— রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) এবং ভারত সরকারের ক্লাইমেট হ্যাজ়ার্ড অ্যাটলাস মাথায় রাখা প্রয়োজন। ওই দু’টি রিপোর্টই বলছে, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ক্রমাগতই ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাড়তেই থাকবে এবং তার জেরে বিপদ বাড়বে পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা পূর্ব উপকূলেরই।
আবহবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার যে-ক’টি শর্ত রয়েছে, সাগরজলের উষ্ণতা তার অন্যতম। সাধারণ ভাবে সমুদ্রের জলতলের উষ্ণতা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলেই ঘূর্ণিঝড় তৈরির পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। বর্তমানে মার্চ মাসে সাগরজলের তাপমাত্রা যেখানে পৌঁছেছে, তাতে ভরা গ্রীষ্মে সেটা আরও বাড়বে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন ও উৎকণ্ঠা রয়েছে। আবহবিদদের অনেকেই জানান, গত কয়েক দশকের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে, বঙ্গোপাসাগরের উষ্ণতা বৃদ্ধির গড় হার অনেকটাই বেশি। সেই দিক থেকে এ বছর মার্চ মাসে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা কিছুটা আশঙ্কা তৈরি করেছে তো বটেই।
গত এক দশকে বঙ্গোপসাগরে বেশ কয়েকটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় দানা বেঁধেছে। তার পিছনে সাগরজলের উষ্ণতাকে অনেকাংশে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। গত তিন বছরে গ্রীষ্মে তিনটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় তৈরি হতে দেখা গিয়েছে। তার মধ্যে ২০২০ সালের আমপান এবং ২০২১ সালে ইয়াস দক্ষিণবঙ্গেই আছড়ে পড়েছিল।
অনেক আবহবিদের পর্যবেক্ষণ, ঘূর্ণিঝড় তৈরির পরে সে কোন দিকে বয়ে যাবে তার পিছনে কয়েকটি কারণ ক্রিয়াশীল থাকে। বায়ুমণ্ডলের উপরি স্তরের বায়ুপ্রবাহের গতি ও অভিমুখ তার অন্যতম। এপ্রিল-মে মাসে গাঙ্গেয় বঙ্গ-সহ পূর্ব উপকূলে যে-ধরনের বায়ুপ্রবাহ চলে, তাতে ঘূর্ণিঝড় বাংলায় বা কাছেপিঠে আছড়ে পড়তে দেখা যায়। বর্ষার পরে আবার ঠান্ডা, শুকনো বায়ুর প্রভাবে ঘূর্ণিঝড় দুর্বল হতেও দেখা গিয়েছে। তাই এপ্রিল-মে মাসে কোনও শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে সে বঙ্গে হানা দিতে পারে।
তবে মার্চে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই তা অশনি-সঙ্কেত, এখনই এটা মেনে নিতে রাজি নন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ। তাঁর মতে, ঘূর্ণিঝড় দানা বাঁধার মূলত দু’টি পর্ব আছে। প্রাক্-বর্ষা এবং বর্ষা-পরবর্তী সময়। প্রাক্-বর্ষায় মূলত এপ্রিল-মে মাসে ঘূর্ণিঝড় বেশি তৈরি হয়। তবে মার্চে কোনও ঘূর্ণিঝড় হয় না বা হতে পারে না, এমন নয়। মার্চেও বঙ্গোপসাগর এবং আরব সাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরির নজির রয়েছে। তবে মার্চে ঘূর্ণিঝড় তুলনায় কম হয় বলে জানাচ্ছেন ওই আবহবিদ।
গোকুলবাবুর ব্যাখ্যা, সূর্য নিরক্ষরেখার উপরে অবস্থান করলে নিরক্ষীয় অঞ্চলে সাগরজলের তাপমাত্রা বাড়ে। সেই সময় ঘূর্ণিঝড় তৈরির সম্ভাবনা বেশি। তাই অশনির সঙ্কেত বুঝতে সবিস্তার গবেষণা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy