কিছুদিন আগেই আমপানের ক্ষতিপূরণের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে উত্তাল হয়েছিল দেগঙ্গা।—ফাইল চিত্র।
ঘূর্ণিঝড় আমপানের তাণ্ডবে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আবার সত্যি সত্যি ক্ষতিগ্রস্ত না-হয়েও নানান কায়দায় টাকা পেয়ে গিয়েছেন অনেকেই। ক্ষতিপূরণের বিলিবণ্টন নিয়ে শোরগোল ও ক্ষোভ-বিক্ষোভে ভয় পেয়ে এ বার সেই টাকা ফেরত দেওয়ার হিড়িক পড়েছে জেলায় জেলায়। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, এটা একটা নজিরবিহীন পরিস্থিতি।
সংশ্লিষ্ট শিবিরের ব্যাখ্যা, অনেকেই এখন স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গিয়ে টাকা ফেরতের পদ্ধতি জানতে চাইছেন। কেউ কেউ সরাসরি চেক নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছেন জেলা স্তরের কার্যালয়ে। তাঁরা প্রশাসনিক কর্তাদের জানাচ্ছেন, ভুল করে টাকা চলে এসেছে তাঁদের অ্যাকাউন্টে। তাই তাঁরা তা ফেরত দিতে চান। প্রশাসন কী করছে? সরকারি ভাবে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “কেউ সরকারি টাকা ফেরত দিতে চাইলে আরটি-সেভেন ফর্মের মাধ্যমে তা করা যায়। যাঁরা টাকা ফেরাতে আসছেন, সেই পদ্ধতিতেই তাঁদের থেকে টাকা ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
জেলা কর্তাদের অনেকের বক্তব্য, ক্ষতিপূরণের টাকা কে পেয়েছে, তা লোকে জেনে গিয়েছেন। তাই প্রকৃত উপভোক্তা নন, এমন কারও পক্ষে সেই টাকা হজম করা বেশ কঠিন। তার উপরে বিরোধীরা চাপ বাড়াচ্ছেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তর থেকে চাপ আসছে জেলা প্রশাসনের উপরে। স্থানীয় রাজনৈতিক স্তরেও সেই বার্তা পৌঁছচ্ছে সুস্পষ্ট ভাবেই। ফলে টাকা ফেরত না-দিলে প্রশাসন তাঁদের অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ়’ করতে পারে, এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে অসাধুদের মধ্যে। জেলার এক কর্তা বলেন, “এই ধরনের কয়েক জনের অ্যাকাউন্টের লেনদেন সাময়িক ভাবে বন্ধ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত দিলে তবেই অ্যাকাউন্ট সচল করা হবে। তাতে কাজ হচ্ছে।”
আমপান-তাণ্ডবের কিছু দিন পরে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছিল রাজ্য। তড়িঘড়ি অর্থ মঞ্জুর করে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু তার পর থেকে জেলায় জেলায় অভিযোগ ওঠে, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকের নামই ক্ষতিপূরণের তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে। এই নিয়ে ক্ষোভ ধূমায়িত হতে থাকে। অভিযোগ ওঠে শাসক দলের কিছু ছোট-মাঝারি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগের আঁচ পৌঁছয় নবান্নে। কিছু দিন আগে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, ক্ষতিপূরণ থেকে কেউ বঞ্চিত হলে তিনি স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। তার পরেও অভিযোগ ওঠা থেমে যায়নি। তাই সাত দিনের মধ্যে বঞ্চিত প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের নাম তালিকাভুক্ত করে ক্ষতিপূরণের অর্থ তাঁদের হাতে পৌঁছে দিতে জেলাশাসক ও বিডিওদের ক্ষমতা দিয়েছে সরকার।
সরকারি সূত্রের খবর, ক্রমশ বাড়তে থাকা সমস্যা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ক্ষতিপূরণ বিলিবণ্টনের প্রকৃত ছবিটা বুঝতে নবান্নের নির্দেশে যুগ্মসচিব পর্যায়ের অফিসারেরা জেলায় জেলায় যাবেন। নবান্নের নির্দেশ তৃণমূল স্তর পর্যন্ত পৌঁছচ্ছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখবেন তাঁরা। সেই সব তথ্য রিপোর্ট আকারে প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে জমা দেওয়ার কথা। ক্ষতিপূরণ বিলির ঘাটতি মেটাতে বাড়তি ব্যবস্থা করতে হয়েছে বিভিন্ন জেলা প্রশাসনকে। “বিষয়টির দু’টি দিক আছে। ১) যাঁদের মাথার উপর থেকে চাল উড়ে গিয়েছে, দ্রুত তাঁদের হাতে টাকা পৌঁছে দেওয়া জরুরি ছিল। ২) তড়িঘড়ি সেই কাজ করতে গিয়ে কে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত আর কে নয়— তা যাচাইয়ের সময় পাওয়া যায়নি,” বলছেন এক জেলা-কর্তা।
বুধবার সর্বদলীয় বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁর কাছে ২১০০ অভিযোগ পৌঁছেছে। প্রশাসনের অনেকে জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিতে আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। জেলা ও রাজ্য স্তরে সরকারের গড়া কমিটি রোজ ভিডিয়ো-বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কারা, তা যাচাইয়ের প্রক্রিয়া আরও জোরদার হওয়া উচিত ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy