ছবি পিটিআই।
সময়মতো ত্রাণ শিবির করে লক্ষ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে আমপানে প্রাণহানি যে অনেকটাই ঠেকানো গিয়েছে, তা মেনে নিয়েছেন সকলেই। ১৭৩৭ সালের পর এত ভয়ঙ্কর ঝড় যে কলকাতা দেখনি, তা নিয়েও সংশয় নেই। তবু ঝড়ের ৭২ ঘণ্টা পরও ঝড়বিধ্বস্ত এলাকায় ত্রাণ ও জীবনযাত্রায় বিঘ্ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
যেমন কলকাতায় গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা বিষয়টি। কলকাতার ক্ষেত্রে সমস্যা ঠিক কী হল?
পুরসভার একাধিক প্রাক্তন পুর কমিশনার জানাচ্ছেন, যে কোনও ঝড়-বৃষ্টির পরে কলকাতার মূল সমস্যা হল গাছ পড়া আর জল জমা। বিদ্যুতের লাইনে গাছ পড়ার পিছু পিছু আসে বিদ্যুৎ বিভ্রাট এবং জল সঙ্কট। সেই কারণে বিপর্যয়ের পর প্রথমেই গাছ কাটার দল যায় জলের পাম্প আর নিকাশির পাম্প চালু রাখার কাজ করতে। দ্বিতীয় ধাপে বিদ্যুতের পরিবহণ-সংবহন সংক্রান্ত যন্ত্রাংশের উপর গাছ পড়লে তা সরানোর কথা। এরপর বিদ্যুৎ সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে পুরসভার গাছ কাটার দলের এলাকা ধরে ধরে যাওয়ার কথা। যাতে গাছ সরানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। যে ভাবে কলকাতায় তিন দিন পরেও গাছ সরানো যায়নি, তাতে গাছকাটার সাধারণ নিয়মগুলি অনুসরণ করা হয়েছে বলে তাঁরা মনে করছেন না।
কলকাতা পুরসভার এক কর্তা বলেছেন, ‘‘প্রতিটি বরোতে পাঁচ-ছ’জনের গাছ কাটার দল রাখা ছিল। এক-একটি ওয়ার্ডেই ২০০-৩০০ গাছ পড়েছে। ফলে সরস্বতী ঠাকুরের পুরুত ধরার মতোই ‘প্রভাবশালীরা’ যে যেমন পেরেছেন গাছ কাটার দলকে নিয়ে গিয়েছেন। তাতে দিশেহারা হয়ে দু’দিন পর শনিবার সকাল থেকে পুরসভা ঠিকাদার নামিয়ে গাছ কাটার বরাত দিয়েছে। তাতেও পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে না।’’ ওই কর্তা জানান, কোনও এলাকায় গাছ কাটা হয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সংযোগ আসছে না। কারণ, সিইএসসি এলাকা ধরে বিদ্যুৎ বন্ধ করে রেখেছে। সিইএসসি’র সঙ্গে পুরসভার সমন্বয়ের অভাব মেনে নিয়েছেন কর্তারা।
আরও পড়ুন: করোনা, ঝড়ের কোপে আন্তর্জেলা বাস পরিষেবা
রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ এলাকাতেও প্রায় আড়াই লাখ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। অথচ রাজ্যের হাতে রয়েছে এখন ৭৫ হাজার খুঁটি। সেই কারণে খুঁটি জোগাড় করে নতুন করে প্রত্যন্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া খুবই কঠিন কাজ বলে জানাচ্ছেন বণ্টন কর্তারা। এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘ওড়িশা থেকে খুঁটি আনবার পরিকল্পনা করছে। নিজেরাও বরাত দেব। কত দিনে স্বাভাবিক হবে তা বলার মতো অবস্থায় আমরা নেই।’’
আরও পড়ুন: ক্ষতিগ্রস্ত সাবস্টেশনের ৯০ শতাংশ সচল, বলল রাজ্য বিদ্যুৎ সংস্থা
জল সরবরাহ শুধু কলকাতাতে নয়, জেলা এবং প্রত্যন্ত এলাকাতেও মার খেয়েছে। জনস্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, এখন আর হাতকলের ব্যবহার হয় না। গ্রামেও সাবমার্সিবল বা পাইপে জল দেওয়া হয়। ফলে বিদ্যুৎ না থাকলে জল সঙ্কট হতে বাধ্য। বিপর্যস্ত এলাকায় ত্রিপল বা খাবারের অভাবও দেখা দিয়েছে। প্রাক্তন এক মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘ যদি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খাবারের হাহাকার পড়ে, তা হলে বুঝতে হবে খাবার পঞ্চায়েতস্তরে পর্যন্ত মজুত ছিল না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy