Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

শুকনো চিড়ে কিসে ভিজিয়ে খাব? কোথায় জল?

সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাটে যে দিকে চোখ যায়, একটাও টিউবওয়েল মাথা তুলে নেই। জোয়ার এলে গোটা এলাকা ডুবে যাচ্ছে বুকজলে। ভাটায় জল সরে হাঁটু সমান। 

সরস্বতী সর্দার। নিজস্ব চিত্র

সরস্বতী সর্দার। নিজস্ব চিত্র

নির্মল বসু 
ন্যাজাট শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০৪:০৫
Share: Save:

সরকারি ত্রাণের প্যাকেট থেকে এক মুঠো চিঁড়ে বার করে কেঁদে ফেললেন সরস্বতী। রবিবার সকালে। বললেন, ‘‘বাবুরা বলছেন, সবই তো পাচ্ছিস, তা হলে এত রাগ কেন! কিন্তু বলতে পারেন, এই শুকনো চিঁড়ে কি চিবিয়ে খাব? একটু ভিজাতে তো হবে। কোথায় জল!’’

জল নিয়ে এই হাহাকার এখন সন্দেশখালি ১ ব্লকের সর্বত্র। ব্লক প্রশাসনের হিসেব, ২ লক্ষ ৩০ হাজার মানুষের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় ৯০ শতাংশই। রবিবার পর্যন্ত ২০ হাজার পাউচ জল পৌঁছে দেওয়া গিয়েছে। একটা পাউচ মানে, ২৫০ মিলিলিটার জল। তা দিয়ে কত ক্ষণ চলে? কত জনই বা পেলেন? হিসেব কষতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে লাগে না। সন্দেশখালি ১ ব্লকের ন্যাজাটে যে দিকে চোখ যায়, একটাও টিউবওয়েল মাথা তুলে নেই। জোয়ার এলে গোটা এলাকা ডুবে যাচ্ছে বুকজলে। ভাটায় জল সরে হাঁটু সমান।

তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে চাঁদপাড়া গ্রামে সংসার সরস্বতী সর্দারের। স্বামী তেমন কাজকর্ম করেন না। দিনমজুরি করে সংসার টানতেন সরস্বতী। লকডাউনে এমনিতেই কাজকর্ম না-থাকায় আধপেটা খাচ্ছিলেন। আমপান বেঁচে থাকার সমস্ত রসদই কেড়ে নিল। আয়লার সময়ে স্বামী-স্ত্রী ভেসে গিয়েছিলেন জলে। গাছের ডালে আটকে প্রাণে বেঁচে যান সরস্বতীরা। ফিরে এসে দেখেছিলেন, বাড়ি বলতে যতটুকু অবশিষ্ট আছে, সেখানে আর কোনও জিনিসপত্র নেই। থালা-বাসনটুকুও নিয়ে গিয়েছে চোরে। তাই এ বার জেদ ধরেছিলেন, যা-ই হোক, ত্রাণশিবিরে যাবেন না। কিন্তু বুধবার রাত ৯টার পরে ঝড়ের দাপটে সেই জেদ আর টেকেনি। সপরিবার ঘর ছেড়ে বেরোনো মাত্র চোখের সামনে উড়ে গেল সব। দৌড়ে গিয়ে উঠলেন কাছের স্কুলবাড়িতে। কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেতনি নদীর বাঁধ ভাঙল।

আরও পড়ুন: পেয়ারা গাছের ডাল আঁকড়ে সাত ঘণ্টা

সন্দেশখালি ১-এর বিডিও সুপ্রতিম আচার্যর বক্তব্য, ‘‘ব্লকে শতাধিক জায়গায় বাঁধ ভেঙেছে বা বাঁধ ছাপিয়ে জল ঢুকেছে। ন্যাজাট ১ ও ২, সেহেরা রাধানগর, বয়ারমারি ও কালীনগরে বড়সড় ভাঙন হয়েছে বাঁধে।’’ তিনিই জানালেন, জল পাঠানো হয়েছে ২০ হাজার পাউচ। আরও যাচ্ছে। রবিবার মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী গ্রামে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন সূত্রের খবর, ক্ষোভের আশঙ্কায় পুলিশ তাঁকে ফিরে যেতে বলে। শনিবার এলাকায় এসে ক্ষোভের মুখে পড়েছিলেন বিধায়ক সুকুমার সর্দার। তার পরে রবিবার নিজে দাঁড়িয়ে বাঁধ সারানোর কাজ তদারক করেছেন। দুপুরে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমরা সাধ্য মতো কাজ করছি। বিরোধীরা চক্রান্ত করে অভিযোগ তুলছেন।’’

আরও পড়ুন: খুঁটি ধরে দু’ঘণ্টা ঠায় দাঁড়িয়ে ছিলেন পুণ্যলক্ষ্মী

মাহাতোপাড়ার রমা মাহাতো, রুমা মাহাতো, দক্ষিণ আখড়াতলার সুশান্ত মাহাতো, বিষ্ণু মাহাতোদের অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথাই বলছে। সকলেই জানালেন, বড় রাস্তার আশপাশে যাঁরা আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা জল না-পেলেও চিঁড়ে-মুড়িটুকু পেয়েছেন। কিন্তু গ্রামের ভিতরে যাঁরা রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের কোনও খবরই নেই। ডাক ছেড়ে কাঁদতেও সাহস পাচ্ছেন না কেউ। পাছে গলা আরও শুকিয়ে যায়!

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Cyclone Water Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy