Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

‘শেষ সম্বলটুকুও কেড়ে নিল আমপান, এ বার বিষ খেয়ে মরতে হবে’

এক দিকে ব্যাঙ্কের ঋণ, তার পর ধারদেনা, সন্তানদের কী ভাবে খাওয়াবেন— বুধবারের পর থেকে এতগুলো চিন্তা যেন সব তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছিল সিদ্ধেশ্বরের।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০২০ ২০:১০
Share: Save:

মাথার উপর ছাউনিটা উড়ে গিয়েছে। কঙ্কালসার অবস্থায় শুধু পড়ে রয়েছে শুধু বাঁশ, দরমার বাড়িটা। ভাঙা ঘরের মাঝে দাঁড়িয়েই হতাশ চোখে তাকিয়ে ছিলেন সিদ্ধেশ্বর মাজি। দূরে সশব্দে আছড়ে পড়ছিল উত্তাল সমুদ্রের ঢেউগুলো। বুধবারই এখান দিয়ে বয়ে গিয়েছে ঘূর্ণিঝড় আমপান (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন)।
পেশায় এক জন মত্স্যজীবী সিদ্ধেশ্বর। পরিবার বলতে স্ত্রী আর দুই সন্তান। পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে একটা ছোট হোটেল রয়েছে তাঁর। খুবই সামান্য আয়। স্বামী-স্ত্রী খেটে তার মধ্যেও সংসারটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। প্রথম ধাক্কাটা এল মাস দুয়েক আগে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াল দেশ জুড়ে। বাদ পড়েনি এ রাজ্যও। লকডাউন চালু হল। ফলে পর্যটক আসাও বন্ধ হয়ে গেল। পর্যটক এলে আয় হয়, না হলে কোনও আয় নেই। এমনটাই জানান সিদ্ধেশ্বর।

কিন্তু তার মধ্যেও গড়িয়ে গড়িয়ে সংসারটা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জোর ধাক্কাটা এল বুধবার। সব গুঁড়িয়ে নিমেষে স্তব্ধ করে দিয়ে গেল আমপান। বুধবার দুই ২৪ পরগনা, কলকাতা, হাওড়া, হুগলির পাশাপাশি পূর্ব মেদিনীপুরেও ব্যাপক তাণ্ডব চালায় আমপান। সেই ঝড়েই সিদ্ধেশ্বরের উপার্জন, মাথা গোঁজার ঠাঁই সব উড়ে গিয়েছে।

কান্নাভেজা গলায় সিদ্ধেশ্বর বললেন, “লকডাউনের জেরে খুব সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। সংসার চালানোর জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছিলাম। গত দু’মাস ধরে কোনও উপার্জন নেই। কিন্তু এ বার মাথার ছাদটাও গেল।” এর পরই তিনি বলেন, “জানি না কী খাব। ঘুম উড়ে গিয়েছে। দোকানে কোনও কিছু অবশিষ্ট নেই। আমরা না খেয়ে থাকতে পারব, কিন্তু কী ভাবে অভুক্ত রাখব সন্তানদের?”

স্ত্রী কল্পনাও এমন পরিস্থিতিতে মুষড়ে পড়েছেন। সন্তানদের কী ভাবে খাবার জোটাবেন, কী ভাবে সংসারটা চলবে তা নিয়েই দুশ্চিন্তা করছেন। আর বলছেন, ‘ঝড় আমাদের জীবনের সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়ে গেল।’

আরও পড়ুন: ‘চাষের জমি গিলেছে নোনা জল, আমপানের পর ফিরে দেখি বাড়িটাও নেই’

আরও পড়ুন: আমপানে তছনছ বাংলা, মৃত অন্তত ৭২, ‘এসে দেখে যান’, মোদীকে বললেন মমতা

হোটেলটাকে আরও একটু সাজিয়ে গুছিয়ে তুলতে বেশ কয়েক মাস আগে ব্যাঙ্ক থেকে লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন সিদ্ধেশ্বর। তখনও করোনা বা লকডাউন পর্ব শুরু হয়নি। স্থানীয় কয়েক জনের কাছ থেকেও কিছু টাকা ধার করেছিলেন। ব্যাঙ্কের কিছু টাকা শোধ করতে পেরেছেন। কিন্তু মার্চ থেকেই জীবনটা যেন বদলে গিয়েছে সিদ্ধেশ্বরের। হোটেল খোলা নিষিদ্ধ ছিল লকডাউনের কারণে। ফলে সরকারের দেওয়া চাল, ডালের উপরই ভরসা করে পেট চালাচ্ছিলেন। কিন্তু এ ভাবে কত দিন?— নরম গলায় প্রশ্নটা আওড়ালেন সিদ্ধেশ্বর।

এক দিকে ব্যাঙ্কের ঋণ, তার পর ধারদেনা, সন্তানদের কী ভাবে খাওয়াবেন— বুধবারের পর থেকে এতগুলো চিন্তা যেন সব তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছিল সিদ্ধেশ্বরের। তাঁর কঙ্কালসার বাড়িটার মতোই বিধ্বস্ত সিদ্ধেশ্বর বলে ওঠেন, “আর বাঁচার কোনও পথ দেখছি না। হয় বিষ খেতে হবে, না হলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করতে হবে। মানসিক ও শারীরিক ভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত আমি।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy