মেঘের চাদর: আসছে ঘূর্ণিঝড় আমপান। তার আগে গঙ্গার উপরে ঘনীভূত কালো মেঘ। মঙ্গলবার বাবুঘাটে। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
মহা আশঙ্কা জপছে বাংলা। এবং ওড়িশাও। তার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগোতে এগোতে খানিকটা শক্তি খোয়াল ঘূর্ণিঝড় আমপান। আবহাওয়া দফতর জানায়, মঙ্গলবার দুপুরে ‘সুপার সাইক্লোন’ থেকে মাত্রাগত বিচারে এক ধাপ নেমে সে ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। শক্তি-মাত্রার অবনমনের ফলে আজ, বুধবার বিকেলের পরে, আছড়ে পড়ার সময় ঝড়ের সম্ভাব্য গতিবেগ কিছুটা কম থাকবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
আমপান সুপার সাইক্লোনের তকমা হারালেও তার হামলার সম্ভাব্য সময়টাই বিপদের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী ঝড়ের অভিমুখ সাগরদ্বীপ ও সুন্দরবনের কাছাকাছি এলাকার দিকে। আজ বেলা ৩টে ১০ মিনিটে সাগরদ্বীপের কাছে জোয়ার শুরু হবে। ঝড়ে দুই ২৪ পরগনায় ৪-৫ মিটার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা আছে। জোয়ারের সময় প্রবল জলোচ্ছ্বাস মারাত্মক বিপত্তি ঘটাতে পারে।
আমপানের শক্তি বৃদ্ধির ধরনে আবহবিজ্ঞানীরা অবাক। সে দ্রুত শক্তি বাড়িয়ে সুপার সাইক্লোনের চেহারা নিয়েছিল। তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২৭৫ কিলোমিটারে উঠেছিল। এক দশকে এমন শক্তিশালী ঝড় দেখা যায়নি বলে আবহবিদেরা জানান। আমপানের শক্তি সঞ্চয়ের ব্যাপারটা রেকর্ড কি না, তা নিয়েও চর্চা চলছে।
আমপান চরিত
ঝড়ের নাম:• আমপান। অর্থ আকাশ।
নামকরণ করেছে: • তাইল্যান্ড।
অবস্থান: • সন্ধ্যায় দিঘা থেকে ৪৫০ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছে।
সম্ভাব্য গতিপথ: • আজ, বুধবার বিকেলের পর দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলে আছড়ে পড়বে।
প্রভাব: • উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলে ঘণ্টায় ১৫৫-১৬৫ কিমি বেগে ঝড়। সর্বাধিক বেগ হতে পারে ১৮৫ কিমি। অতিভারী বৃষ্টি। কোথাও কোথাও প্রবল ভারী বৃষ্টি।
• হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১১০-১২০ কিমি এবং কলকাতায় ১১০-১৩০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে। সঙ্গে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি। কোথাও কোথাও প্রবল ভারী বৃষ্টি। সব জেলায় বৃষ্টি হতে পারে।
• দুই ২৪ পরগনায় ৪-৫ মিটার এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৩-৪ মিটার জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা।
সম্ভাব্য ক্ষতির এলাকা: • নামখানা, সাগরদ্বীপ, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, গোসাবা, বাসন্তী (দক্ষিণ ২৪ পরগনা) • হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, হাসনাবাদ, মিনাখাঁ (উত্তর ২৪ পরগনা) • খেজুরি, নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, মহিষাদল, নন্দকুমার, কাঁথি, দিঘা, মন্দারমণি (পূর্ব মেদিনীপুর)
কিসের ক্ষতি: • কাঁচা বাড়ি, জরাজীর্ণ বাড়ি
• মাঠে থাকা আনাজ
• গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি, তার এবং মোবাইলের টাওয়ার
• উপকূলবর্তী নিচু এলাকায় প্লাবনের আশঙ্কা
• টিনের চাল, সাইনবোর্ড ভেঙে ও উড়ে গিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা
সূত্র: আলিপুর দফতর ও রাজ্য প্রশাসন
আবহবিজ্ঞানীদের কারও কারও মতে, বঙ্গোপসাগরের জলের বাড়তি তাপমাত্রা এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের আধিক্যের ফলে আমপান এমন শক্তির অধিকারী হয়ে উঠতে পারে। বস্তুত, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে সাগরজলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তার জেরে প্রবল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরির কথা রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের রিপোর্টে আগেই বলা হয়েছিল। আমেরিকার উটা স্টেচ ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞানী সাইমন ওয়াঙের মতে, এটা জলবায়ু বদল কি না, এখনই তা বলা যাবে না। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, উত্তর ভারত মহাসাগরীয় এলাকায় সমুদ্রজলের তাপমাত্রা বাড়ছে। জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি ও শক্তি বৃদ্ধির অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি করে।
আরও পড়ুন: দোকানপাট বন্ধ রাখার পরামর্শ, রাজ্যে সরানো হল ৪ লক্ষাধিক মানুষকে
আরও পড়ুন: অক্টোবর ছেড়ে আপাতত মে-তে নজর ঘূর্ণিঝড়ের
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বুধবার সকালেই কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলায় দুর্যোগ শুরু হবে। ক্রমে বাড়বে তার তীব্রতা। উপকূলের নিচু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। ক্ষতি হতে পারে আনাজের। তবে আগেই সতর্কবার্তা আসায় বেশির ভাগ বোরো ধানই কাটা হয়ে গিয়েছে। কলকাতা-সহ উপকূলবর্তী জেলায় মঙ্গলবারেই বৃষ্টির সঙ্গে দমকা হাওয়া বইতে শুরু করে। বিপদ এড়াতে আজ সকাল থেকে কলকাতাবাসীকে ঘরবন্দি থাকার পরামর্শ দিয়েছে হাওয়া অফিস।
বিপজ্জনক এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে দিচ্ছে প্রশাসন। অন্তত চার লক্ষ বাসিন্দাকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জলসীমান্তে লঞ্চ, ভাসমান চেকপোস্ট নোঙর করেছে বিএসএফ। প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য উদ্ধারকারী ও চিকিৎসক দলও তৈরি আছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy