বাঁধের উপরে মোমের আলোতেই পড়াশোনা। হিঙ্গলগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
দিনে-রাতে ঝোড়ো হাওয়া দিলে তাঁবু থেকে বেরিয়ে এসে দড়ি ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন উপেন বৈদ্য। মাঝরাতে ঘুমচোখে উঠে বসে গৌর মণ্ডল টর্চ জ্বেলে দেখে নেন, পায়ের কাছে সাপ ঘুরে গেল না তো!
সামনের বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ব্রততী বিশ্বাস। তার কথায়, ‘‘সন্ধের দিকে পড়াশোনা আর কিছু হয় না। একে তো আলো নেই। তার উপরে একটু হাওয়া দিলেই তাঁবুর মধ্যে মোমবাতি নিভে যায়। পড়ব কী করে?’’
শহর কলকাতা থেকে মেরেকেটে ৭০ কিলোমিটার দূরে হিঙ্গলগঞ্জের বাইনাড়া গ্রামে থাকেন এঁরা। বাড়িঘর ভেঙেছে আমপানের তাণ্ডবে। সেই থেকে ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে তাঁবু, প্লাস্টিক টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
এক দিকে যখন পঞ্চায়েত প্রধান, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা দোতলা-তেতলা অক্ষত বাড়ির নিশ্চিন্ত ছাদের তলায় থেকেও বাড়ি ভাঙার ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন, তখন আমপানের পরে পাঁচ সপ্তাহ কেটে গেলেও শ’তিনেক পরিবার এ ভাবেই বেঁচে আছে উত্তর ২৪ পরগনার আমপান-বিধ্বস্ত এই অঞ্চলে।
আরও পড়ুন: গাছ বিক্রি নিয়ে তৃণমূল-বিজেপির ‘গুলি-বোমা’, তপ্ত খেজুরি
রবিবার এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, জল নেমে গিয়েছে। তবে বিদ্যুৎ পরিষেবা স্বাভাবিক হয়নি। কিছু বাড়িতে বিদ্যুৎ ফিরলেও তালতলা থেকে কেওড়াতলিপাড়া এলাকায় আলো আসেনি। কেওড়াতলি পাড়ারই ১০২টি পরিবার ডাঁসা নদীর বাঁধের উপরে আমপানের রাত থেকে এখনও আশ্রয় নিয়ে আছে। তাঁদের মাটির বাড়িগুলো আর বাসযোগ্য নেই। তাই তাঁবুতেই মাথা গুঁজে আছেন। তাঁবুর ভিতরে সাপ ঢোকে। মশা-মাছির উপদ্রব। তার মধ্যে রাত হলেই কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা এলাকা। বাচ্চাদের নিয়ে মশারির ভিতরে বসে ভাত খেতে হয় বলে জানালেন অর্চনা মণ্ডল। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। বললেন, ‘‘কখনও কখনও রাত জেগে বাচ্চাটাকে হাওয়া করি। এমনিও ঘুম আসে না। সাপখোপের ভয় তো আছেই।’’ পাশের গ্রামে কয়েক দিন আগে সাপের ছোবলে এক কিশোরীর মৃত্যু হয়েছে। সেই কথা শোনার পর থেকে আরও ভয় ঢুকেছে মনে।
আরও পড়ুন: আমপানে নৌকো ভেঙে যাওয়ায় জীবিকায় টান
প্রথম কিছু দিন সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ পেয়েছিলেন বলে জানালেন ষষ্ঠী মণ্ডল। বেসরকারি ভাবে অনেকে এখনও ত্রাণ দিচ্ছেন। তারই সঙ্গে মোমবাতি যা পেয়েছেন, সেটুকুই সম্বল। কেরোসিন কিনে কুপি জ্বালানোর মতো অবস্থা নেই বেশির ভাগ পরিবারের। দিনমজুরির কাজ করে সংসার চলত। এখন এলাকায় তেমন কাজ নেই। একশো দিনের প্রকল্পে কেউ কেউ কয়েক দিন বাঁধের কাজ করে কিছু টাকা পেয়েছিলেন।
পরিস্থিতিটা অজানা নয় পঞ্চায়েত প্রধানের। কিন্তু ক্ষতিপূরণ কেন এখনও অমিল? রূপমারি পঞ্চায়েতের প্রধান সনাতন সর্দারের যুক্তি, ‘‘বাইনাড়া গ্রামের মানুষ যে-হেতু বিপদের মধ্যে ছিলেন, তাই তাঁদের তথ্য দ্রুত জমা পড়েনি। দ্বিতীয় দফায় ওঁরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।’’ তবে বিদ্যুৎহীন এলাকায় বাঁধের উপরে যাঁরা রাত কাটাচ্ছেন, তাঁদের জন্য সৌরশক্তিচালিত আলোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান প্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy