রাজভবনের কর্মীদের সতর্ক করলেন রাজ্যপাল। —ফাইল চিত্র।
রাজভবনে রাজনৈতিক দলের কার্যকলাপ চলছে। ‘অশুভ’ উদ্দেশ্যে এক ব্যক্তিকে রাজভবনে ঢোকানো হয়েছে। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ নিয়ে শোরগোলের আবহে বিবৃতি দিয়ে এমনই বার্তা দেওয়া হল রাজভবনের তরফে। সতর্ক করা হল রাজভবনের কর্মীদের। রাজভবন জানিয়েছে, একটি গোপন রিপোর্ট তাদের হাতে এসেছে। শুধু তা-ই নয়, একটি অডিয়োবার্তা প্রকাশ করে এ ব্যাপারে রাজভবনের কর্মীদের সতর্কও করেছেন রাজ্যপাল বোস।
বৃহস্পতিবার রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন এক মহিলা। পুলিশের কাছে তিনি নিজেকে রাজভবনের অস্থায়ী কর্মী বলে জানিয়েছেন। মহিলার দাবি, রাজভবনে দু’বার শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার রাতেই বিবৃতি দিয়ে মহিলার ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাজ্যপাল। বোসের বিবৃতি, ‘‘সত্যের জয় হবেই। সাজানো অভিযোগে আমি ভয় পাই না। আমাকে অপবাদ দিয়ে কেউ ভোটের ফয়দা খুঁজলে, ঈশ্বর তাঁদের করুণা করুন। তবে বাংলার দুর্নীতি এবং হিংসার বিরুদ্ধে কেউ আমার লড়াই থামাতে পারবে না।’’ এই আবহে রাজভবন বিবৃতি দিয়ে জানাল, রাজভবনে অশুভ উদ্দেশ্যে কার্যকলাপ চালাচ্ছে একটি রাজনৈতিক দল।
শুক্রবার রাজভবনের কর্মীদের উদ্দেশে একটি বার্তা প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, ‘‘রাজভবন একটি গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে, অশুভ উদ্দেশ্যে রাজভবনে আর এক ব্যক্তিকে ঢোকানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে দিয়ে বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। এগুলি নির্বাচনে ফয়দা তোলার কৌশল ছাড়া আর কিছু নয়।’’ বোস একটি অডিয়োবার্তাও প্রকাশ করেছেন। সেখানে রাজনৈতিক দলের অশুভ কার্যকলাপের কথা বলেছেন রাজ্যপাল। সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তিনি পিছু হটবেন না। বাংলায় তিনি বলেন, ‘‘আমি লড়াই করব। আমি লড়াই করব।’’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হেয়ার স্ট্রিট থানায় গিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ তুলেছেন ওই মহিলা। পুলিশের কাছে করা মহিলার অভিযোগপত্রের একটি ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার রাতে। আনন্দবাজার অনলাইন সেই অভিযোগপত্রের ছবিরও সত্যতা যাচাই করেনি। তাতে দেখা যাচ্ছে, মহিলা রাজভবনের ওসির কাছে ওই অভিযোগপত্রটি জমা দিয়েছেন। তাতে মহিলা জানিয়েছেন, তিনি রাজভবনের কোয়ার্টারে থাকেন। অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করেন রাজভবনে। তাঁর দাবি, গত ১৯ এপ্রিল রাজ্যপাল তাঁকে বলেছিলেন সময় করে সিভি নিয়ে দেখা করতে। এর পর তিনি গত ২৪ এপ্রিল দুুপুর ১২টা ৪৫ মিনিটে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময় রাজ্যপাল তাঁকে আলোচনার সময়ে কুপ্রস্তাব দেন। অভিযোগকারিণীর দাবি, রাজ্যপাল তাঁর শরীরেও হাত দেন। ওই দিনে তিনি কোনও ক্রমে সেখান থেকে সরে যান।
অভিযোগকারিণী আরও দাবি করেছেন, গত ২৪ এপ্রিলের ঘটনার পর বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২ মে আবার তাঁকে ডাকেন রাজ্যপাল। আগের দিনের ঘটনার কথা ভেবে মহিলা তাঁর সুপারভাইজ়ারকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালের কাছে যান। তাঁদের কনফারেন্স রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছু ক্ষণ আলোচনার পর রাজ্যপাল সুপারভাইজ়ারকে কনফারেন্স রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। মহিলার দাবি, এর পর তাঁকে চাকরিতে পদোন্নতির প্রলোভন দেখিয়ে কথাবার্তা চালাতে থাকেন রাজ্যপাল। রাতে ফোনও করবেন বলে জানান রাজ্যপাল। কিন্তু মহিলা যাবতীয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাজ্যপাল তাঁর সঙ্গে অভব্য আচরণ করেন বলে দাবি করেছেন অভিযোগকারিণী।
মহিলার অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের ডিসি (সেন্ট্রাল) ইন্দিরা মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আজ বিকেল ৫টা নাগাদ রাজভবনের আউটপোস্টে একটি অভিযোগ আসে। এক জন মহিলা, যিনি রাজভবনের কর্মী, উনি শ্লীলতাহানির একটি অভিযোগ এনেছেন। অভিযোগটি রাজভবনের আউটপোস্টে জমা পড়ে। সেটিকে হেয়ার স্ট্রিট থানায় ফরোয়ার্ড করা হয়। আমরা অভিযোগটি নথিভুক্ত করেছি এবং তদন্ত শুরু করেছি।’’ ইন্দিরা আরও বলেন, ‘‘অভিযোগটি রয়েছে মাননীয় রাজ্যপালের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিণী থানায় এসে সবিস্তারে অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযোগটি সংবেদনশীল হওয়ায় আমরা আপাতত বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি। এর পাশাপাশি আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সেই আলোচনাও করা হচ্ছে।’’ ডিসি সেন্ট্রাল বলেন, ‘‘কবে কী ঘটনা ঘটেছে, তা অভিযোগকারিণী আমাদের জানিয়েছেন। তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়। তবে তদন্তপ্রক্রিয়া কী ভাবে এগোবে, তা আপনাদের এখনই জানাতে পারছি না। আপনারা ধীরে ধীরে সব জানতে পারবেন।’’
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রেক্ষিতের ত্রিপুরার প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেছিলেন, ‘‘সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৬১ অনুসারে, রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালদের বিরুদ্ধে কোনও ফৌজদারি পদক্ষেপ করা যায় না। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ রয়েছে রাজ্যপালের। তবে জমিজমা সংক্রান্ত কোনও দেওয়ানি মামলা করা যেতেই পারে। এই ধরনের অভিযোগ অতীতে উঠেছে বলে আমার মনে পড়ছে না। ফলে আদালতে বিষয়টি গেলে কী হবে, তা আমার জানা নেই। সুপ্রিম কোর্ট একে কী ভাবে ব্যাখ্যা করবে, তা তো বোঝা সম্ভব নয়।’’ লালবাজার সূত্রে খবর, পুলিশের তরফেও আপাতত আইনি পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশের কী করণীয়, তা জানতে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গেও কথা বলছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy