ভাঙচুরের পরে। দুর্গাপুরের কুমারমঙ্গলম পার্কে। নিজস্ব চিত্র
পার্কে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনকে কেন্দ্র করে শনিবার দুর্গাপুরের ডিএসপি টাউনশিপের কুমারমঙ্গলম পার্কে ধুন্ধুমার বাধল। পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থার কর্তাকে মারধর, পার্কের রেস্তরাঁয় ভাঙচুর এবং তিন রাউন্ড গুলি চালানোর অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কাউন্সিলর এবং তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। বেসরকারি সংস্থার কর্তারা সংবাদমাধ্যমের কাছে ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা গুলির খোলও দেখান। যদিও ওই কাউন্সিলর অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ঘটনাটি নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপি চাপান-উতোরও। পুলিশের দাবি, গুলি চলেনি। তবে ওই গুলির খোল কোথা থেকে এল তা দেখা হচ্ছে।
‘অন্তঃরাষ্ট্রীয় হিন্দি পরিষদ’ নামে একটি সংগঠন জানায়, আজ, রবিবার দুপুর দেড়টায় পার্কের ভিতরে ফুডপ্লাজ়ায় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা। সংগঠনের কর্তারা জানান, সেখানে যোগ দেওয়ার কথা রাজ্যের মন্ত্রী শশী পাঁজা, শান্তিরাম মাহাতো, দুর্গাপুর ও আসানসোল পুরসভার মেয়র এবং চার জন বিধায়কের।
এই অনুষ্ঠান ঘিরে শুরু হয় চাপান-উতোর। সংগঠনটি গত মঙ্গলবার পার্ক পরিচালনার দায়িত্বে থাকা বেসরকারি সংস্থাকে নিমন্ত্রণপত্র পাঠায়। সংস্থাটির কর্তা তথা বিজেপি সমর্থক হিসেবে পরিচিত দেবাশিস রায় বলেন, ‘‘নিমন্ত্রণপত্রে পার্কের নাম দেখে অবাক হই। উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে চাই, বিনা অনুমতিতে কী ভাবে অনুষ্ঠান করছেন তাঁরা। সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে লিখিত ভাবে বিষয়টি থানায় জানাই।’’
এই পরিস্থিতিতে শনিবার সকালে পার্কের ভিতরে ফুডপ্লাজ়ায় অনুষ্ঠান মঞ্চ বাঁধার কাজ শুরু হতেই তিনি প্রতিবাদ জানান দেবাশিসবাবু। তাঁর অভিযোগ, ‘‘কিছুক্ষণের মধ্যেই ৫০-৬০ জন বহিরাগত লাঠি, রড হাতে পার্কে ঢুকে চড়াও হয়। হাতে, মুখে চোট পাই। আমাকে বাঁচাতে এসে বাঁশের আঘাতে জখম হন দুই কর্মী। আমি বিজেপি সমর্থক বলে তৃণমূল কাউন্সিলর রাজীব ঘোষের নেতৃত্বে এই হামলা। রেস্তরাঁতেও ভাঙচুর চালানো হয়।’’ অতুল বাগদি নামে পার্কের এক কর্মীরও অভিযোগ, ‘‘আচমকা কয়েকজন এসে কেন বিজেপি করি, জানতে চেয়ে মারধর করেন। এক জন তিন রাউন্ড গুলিও ছোড়েন।’’ দেবাশিসবাবুদের অভিযোগ, পুলিশের উপস্থিতিতেই এই হামলা হয়। দুর্গাপুর থানায় অভিযোগ করে বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের তোপ, ‘‘দেবাশিসবাবু বিজেপি নেতা। তাই রাজীববাবুর নেতৃত্বে হামলা হয়েছে। গুলি চালানো হয়েছে। বাধা দিতে গিয়ে এখানে অন্য একটি দলীয় কর্মসূচিতে আসা আমাদের কর্মীরাও আক্রান্ত হন। পুলিশ কিছুই করেনি।’’
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলর রাজীববাবু বলেন, ‘‘অনুষ্ঠানে রাজ্যের দু’জন মন্ত্রী, দু’জন মেয়র থাকবেন। দলের ব্লক সভাপতি হিসেবে তাই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলাম। মারধর করা হয়নি। দেবাশিসবাবু জোর করে কাজ বন্ধ করে ডেকরেটর কর্মীদের মারধর করেছেন।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, রাতে ওই রেস্তরাঁয় ‘অবৈধ’ কারবার চলে। তাই ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীই হয়তো সেখানে চড়াও হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু দলের সঙ্গে এর কোনও যোগ নেই, দাবি রাজীববাবুর। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দেবাশিসবাবু।
পাশাপাশি, পার্ক পরিচালনার দায়িত্ব কার, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। রাজীববাবুর দাবি, পার্কটি ডিএসপি কর্তৃপক্ষের সম্পত্তি। দেবাশিসবাবুদের সংস্থার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। তাই অনুষ্ঠানে দেবাশিসবাবুর অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই। যে সংগঠনটি অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে, তাদের তরফে দেবব্রত দাস বলেন, ‘‘আমরা অরাজনৈতিক সংগঠন। দেশের যেখানে অনুষ্ঠান করি, সেখানেই মন্ত্রী ও স্থানীয় প্রশাসনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। ফুডপ্লাজ়ার সঙ্গে অনুষ্ঠান আয়োজনের চুক্তি হয়। দেবাশিসবাবু প্রথম থেকে ভাল ব্যবহার করলেও পরে তাঁর অনুগামীরা ডেকরেটরের কর্মীদের মারধর করেন। রেহাই পাননি ফুডপ্লাজ়ার মালিক ও কর্মীরাও।’’ এ দিকে দেবাশিসবাবুর দাবি, ‘‘ফুডপ্লাজ়ার সঙ্গে পার্কের চুক্তি ২০১৬-য় শেষ হয়েছে। তা ছাড়া, ফুডপ্লাজ়া শুধু খাবার সরবরাহ করতে পারে। সেখানে অনুষ্ঠান আয়োজিত হতে পারে না।’’
পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে লাঠি উঁচিয়ে এলাকা ফাঁকা করে দেওয়া হয়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (পূর্ব) অভিষেক গুপ্ত বলেন, ‘‘পুলিশ সব দিক খতিয়ে দেখছে।’’ তবে, অনুষ্ঠানের আয়োজকেরা দাবি করেছেন, রবিবার অনুষ্ঠান হবে। নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে পুলিশও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy