—প্রতীকী ছবি।
একদল যাবেন জলপথে, ফিরবেন সড়কপথে। অন্য দল তার উল্টোটা। তবে দু’দলই কলকাতা থেকে রওনা হয়ে রাতে পৌঁছবেন ব্যারাকপুর। গঙ্গাপাড়ের অতিথিশালায় যে যাঁর পছন্দ মতো কড়া বা নরম পানীয় নেবেন, নৈশভোজ সারবেন, ডিজে-র সঙ্গে মাতবেন নাচগানে, রাত ১২টায় হই হই করে নতুন বছরকে স্বাগত জানাবেন আতসবাজি পুড়িয়ে। তার পরে বছরের প্রথম ভোরে কলকাতায় ফেরা।
পরিবারের নিজস্ব অনুষ্ঠান নয়। কর্পোরেটের পার্টিও নয়। নতুন বছর উদ্যাপনের অভিনব এই সরকারি প্যাকেজ কিনতে পারেন যে কেউই। প্যাকেজের দাম কত হবে, তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ পর্যটন উন্নয়ন নিগম এ সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেবে। নিগম সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, তাতে যাতায়াত, পানভোজন সব মিলিয়ে মাথাপিছু দু’-আড়াই হাজার টাকা খরচ পড়বে।
রবিবার নিগমের এক কর্তা বলেন, ‘‘মূলত কলকাতা ও আশপাশের মানুষের কথা মাথায় রেখেই আমরা প্রথম এই প্যাকেজ আনছি। যাতে শহর থেকে সামান্য দূরে অন্য পরিবেশে নববর্ষের উদ্যাপনে মাততে পারেন তাঁরা। ফিরতেও পারেন অল্প সময়ে।’’
পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের কথায়, ‘‘পরিকাঠামো ও প্রাকৃতিক সম্পদের অভাব নেই আমাদের। দরকার শুধু আকর্ষণীয় মোড়ক। সে কথা মাথায় রেখেই এই সংক্ষিপ্ত ট্যুর-প্যাকেজ।’’
নববর্ষ উদ্যাপনের এই প্যাকেজ কিনতে পারবেন মোট ১০০ জন। ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় পঞ্চায জনকে নিয়ে বাবুঘাট থেকে জলপথে ক্রুজ রওনা হবে ব্যারাকপুরের উদ্দেশে। বাকি ৫০ জন রাত ৮টায় বিবাদী বাগে ট্যুরিজম সেন্টারের সামনে থেকে বিলাসবহুল বাসে রওনা হবেন। নিগমের এক শীর্ষকর্তা বলেন, ‘‘আমরা চাইছি যাতে রাত সাড়ে ১০টায় ১০০ জন পর্যটক ব্যারাকপুরের গঙ্গাপাড়ে আমাদের অতিথি নিবাস ‘মালঞ্চ’-য় পৌঁছে যেতে পারেন।’’ নিগমের হিসেবে বাবুঘাট থেকে জলপথে ব্যারাকপুর যেতে সময় লাগে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা, সড়কপথে দু’-আড়াই ঘণ্টা। সেই সময়ের হিসেব মাথায় রেখে ক্রুজ ও বাস রওনা হবে আলাদা সময়ে।
প্যাকেজ অনুযায়ী, ব্যারাকপুরের সরকারি অতিথি নিবাসে প্রত্যেককে আপ্যায়ন করা হবে ‘ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক’ দিয়ে। কড়া পানীয় যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁরা নিতে পারেন ককটেল। মদিরা-রসে যাঁদের রুচি নেই, তাঁদের জন্য থাকছে মকটেল। এর পর হাল্কা স্ন্যাক্স এবং মেপে কড়া পানীয় বরাদ্দ মাথাপিছু। ‘‘প্যাকেজে নির্দিষ্ট পরিমাণ মদই ধার্য থাকবে। তবে কেউ চাইলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে আরও মদ কিনতে পারেন,’’ বলছেন নিগমের এক কর্তা।
এর পরে বুফে ডিনার। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হয়ে যাবে নাচ-গান, ডিজে। নাচে পা মেলাতে না চাইলে পানভোজনে বসেই গান শুনুন। নতুন বছরকে বরণ করে আরও কিছুক্ষণ ব্যারাকপুরে থাকা। রাত আড়াইটে নাগাদ ফের রওনা কলকাতার দিকে। ক্রুজে গিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁরা ফিরবেন বাসে। আর বাসের যাত্রীরা ক্রুজে।
নিগমের পর্যবেক্ষণ, বহু মানুষই চান একটু অন্য ভাবে বর্ষবরণে মাততে। কিন্তু সব কিছু বন্দোবস্তের ঝক্কি আছে, অল্প লোক নিয়ে তা করলে খরচ বেশি পড়ে। অনেক সময়ে লোকাভাবে মাথাপিছু খরচ এতটাই বেশি যে, গোটা পরিকল্পনাই বাতিল করতে হয়। সে জন্যই এই প্যাকেজের ভাবনা।
নিগমের বক্তব্য, এখনও সেই হিসেব কষা হয়নি। তবে লোকসান হলেও পরিকল্পনা থেকে সরে আসা হবে না বলে নিগম সূত্রে খবর। তার অন্যতম কারণ— এ বছর অগস্টের মতো ‘শুখা’ মাসে (অর্থাৎ যখন পর্যটকের ভিড় তেমন হয় না) নিগম লাভ করেছে ৮৪ লক্ষ টাকা। যেখানে গত বছর অগস্টে সাত লক্ষ টাকা লোকসান হয়েছিল। গত আর্থিক বছরে নিগমের মোট লাভ হয় সাড়ে চার কোটি টাকা। এ বার অগস্ট পর্যন্ত লাভের অঙ্ক ৩ কোটি ২০ লক্ষ। নিগমের এক কর্তার কথায়, ‘‘লাভ বেশি বলেই আমরা আগ্রাসী হতে পারছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy