Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
CPM

বামেদের ইস্তাহারেও কড়া সমালোচনার মুখে ইডি আর সিবিআই, মমতার লাইনেই কি চলছে সিপিএম?

সিবিআই, ইডি ও আয়কর দফতরের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে বামফ্রন্ট। আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের ইস্তাহারে এ হেন সমালোচনায় শাসকদল তৃণমূলের সুর প্রতিধ্বনিত হয়েছে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Sujan Chakraborty

সুজন চক্রবর্তী। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২৩ ১৩:৫৪
Share: Save:

কড়া সমালোচনা সিবিআই এবং ইডির। সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্টের ভোটের ইস্তাহারে। বুধবার প্রকাশিত পঞ্চায়েত ভোটে ইস্তাহারের একটি অংশে প্রত্যাশিত ভাবেই আক্রমণ করা হয়েছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে। কিন্তু পাশাপাশিই অভিযোগ করা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্থা সিবিআই, ইডি এবং আয়কর দফতরকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের বর্ণনা করা হয়েছে ‘দমনপীড়নের হাতিয়ার’ বলে। ঘটনাচক্রে, যা দীর্ঘ দিন ধরে বলে আসছেন পশ্চিমবঙ্গের শাসক তৃণমূল। বলছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শাসক শিবিরের অন্যতম শীর্ষনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

তবে তাঁদের সমালোচনার সুরে যে তৃণমূলের সুর ‘প্রতিধ্বনিত’ হচ্ছে, প্রত্যাশিত ভাবেই তা মানতে চাননি রাজ্য বামফ্রন্টের বর্ষীয়ান নেতারা। কেউ বলেছেন, তৃণমূল-বিজেপি যোগের ফলে সিবিআই দোষীদের শাস্তি দিতে অক্ষম। কেউ আবার সিবিআই-ইডির তদন্তের ‘সাফল্য’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তবে মুখে না বললেও তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের ‘পর্যবেক্ষণ’ মিলে যাওয়াটা যে খুব একটা ‘স্বস্তি’র বিষয় নয়, তা বামনেতাদের একাংশও জানেন। তবে তাঁরা বরাবরের মতোই তৃণমূল এবং বিজেপিকে একই বন্ধনীতে রেখে রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়েছেন। ফলে তাঁদের মতে, ইডি-সিবিআই-আয়কর দফতর নিয়ে তাঁদের ওই ‘পর্যবেক্ষণ’ একনিষ্ঠ এবং একক। তার সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই। তাদের সুরে সুর মেলানো তো দূরস্থান!

বামফ্রন্টের ইস্তাহারের একটি অংশে লেখা হয়েছে, ‘‘দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। প্রতিবাদ, সমালোচনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার মতো সংবিধানপ্রদত্ত মানুষের মৌলিক অধিকারগুলিকে অস্বীকার করা হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জনস্বার্থবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, সমালোচনা বন্ধ করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।’’ পাশাপাশিই লেখা হয়েছে, সিবিআই, ইডি, আয়কর দফতরকে দমনপীড়নের হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে।’’ ওই ইস্তেহার পত্রে সম্মতি দিয়েছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়, ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপি নেতা তপন হোড়, আরসিপিআই নেতা সুভাষ রায়, মার্কসবাদী ফরওয়ার্ড ব্লকের আশিস চক্রবর্তী, ওয়ার্কাস পার্টির নেতা শিবনাথ সিন্‌হা এবং বলশেভিক পার্টির প্রবীর ঘোষ।

ইডি-সিবিআই সংক্রান্ত অভিযোগের নিরিখে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা সুজন চক্রবর্তীকে বৃহস্পতিবার প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূলের সঙ্গে আমাদের দাবিকে কখনওই এক করে দেখা উচিত নয়। কারণ, আমরা দশকের পর দশক ধরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলে আসছি। আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বরাবর সিবিআই তদন্তের পক্ষেই সওয়াল করে এসেছিলেন! এখন তাঁর দলের চুরি কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে ধরা পড়ে যাওয়ায় বিরোধিতা করছেন। আবার কোনও দিন হয়তো সিবিআইয়ের পক্ষেই কথা বলবেন। আমাদের অভিযোগের সঙ্গে তৃণমূলের অভিযোগকে এক করে দেখা ঠিক হবে না।’’

বামশরিক ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা নরেনের কথায়, ‘‘আমাদের ও তৃণমূলের দাবির মধ্যে তফাত আছে। সিবিআই-ইডি অভিযুক্তদের ধরছে না। শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থাও করতে পারছে না। শুধু খোঁচা দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে দোষ প্রমাণ করে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির। সারদা-নারদ তদন্তের তো কত দিন হয়ে গেল। এখনও কোনও ফল হয়নি।’’ সিপিআই নেতা প্রবীর দেবের কথায়, ‘‘তৃণমূলের সমালোচনা আর বামফ্রন্টের সমালোচনা এক করে দেখা উচিত নয়। প্রথমত, সময় বুঝে আমরা অবস্থান বদল করি না। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিরুদ্ধে আমরা আগাগোড়াই কথা বলে আসছি। আমাদের কোনও নেতা চুরির দায়ে সিবিআই, ইডির জেরা বা তদন্তের সম্মুখীন হননি। তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগও নেই। তাই তৃণমূল আর বামফ্রন্টের দাবিকে মিলিয়ে দেওয়া উচিত নয়।’’ প্রবীরের আরও বক্তব্য, ‘‘আমরা মনে করি বিজেপি-তৃণমূল গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। ফলে অন্যায় করেও তৃণমূল নেতারা ছাড় পেয়ে যাচ্ছেন। সারদা, নারদ-সহ একাধিক ঘটনায় সিবিআই বা ইডির তদন্ত হলেও কোনও ক্ষেত্রেই তাঁরা শাস্তি পাননি।’’

বর্ষীয়ান আরএসপি নেতা মনোজ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘আমরা ইডি বা আয়কর দফতরকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক ব্যবহারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছি। পশ্চিমবঙ্গে সিবিআই-সহ কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি আদালতের নির্দেশে তদন্ত করছে। সে বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু গত দু’বছরে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলি এ রাজ্যে ৩৬৫টি কেস হাতে নিয়েছে। ৪০০-র বেশি লোককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু শাস্তির হার মাত্র ১২ শতাংশ! পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অন্য রাজ্যে মোদী যে ভাবে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন করাচ্ছেন, তার বিরুদ্ধেই মূলত আমাদের প্রতিবাদ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sujan Chakraborty CPM laders ED CBI
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE