ফাইল ছবি
এক দিকে যখন কাজের সুযোগ তৈরির উদ্যোগ চলছে পুরোদমে, সেই সময়েই সরকারি স্তরে সহায়কদের কাজের স্থায়িত্ব পড়ে গেল বড়সড় প্রশ্নের মুখে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানে চলা প্রকল্প শেষ হয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট সহায়কদের রুজিরোজগারের কী ব্যবস্থা হবে, অনিশ্চয়তা তা নিয়েই।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং রাজ্যের অর্থ কমিশনের যৌথ অর্থে দীর্ঘদিন ধরেই পঞ্চায়েত স্তরে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি বৃদ্ধির কর্মসূচি চলছে। পঞ্চায়েত স্তরে কাজকর্মের অধিকাংশই পরিচালিত হয় কো-অর্ডিনেটর-মেন্টর বা সমন্বয়কর্মীদের মাধ্যমে। আগামী বছর পঞ্চায়েত ভোট হওয়ার কথা। স্থির আছে, বিশ্ব ব্যাঙ্কের অনুদানভুক্ত প্রকল্পটি চলবে চলতি বছর পর্যন্ত। তার পরে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাজ আদৌ থাকবে কি না, সেই বিষয়ে জোর জল্পনা চলছে প্রশাসনিক মহলে। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, বিশ্ব ব্যাঙ্ক ওই প্রকল্প সরকারকে হাতে নিতে বলেছিল ২০১৯ সালেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হবে কি না, এখনও পর্যন্ত সেই বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা নেই।
২০০৮ সালে ‘স্ট্রেনদেনিং রুরাল ডিসেন্ট্রালাইজ়েশন’ বা গ্রামীণ বিকেন্দ্রীকরণের কাজ শুরু হয়। তখন থেকে এই কর্মসূচিতে সাহায্যকারীর ভূমিকায় অনেক লোক নিয়োগ করে রাজ্য সরকার। কিছু নিয়োগ হয় সরকারি ভাবে। বেশ কিছু নিয়োগ হয় কোনও সংস্থার মাধ্যমে। ২০১১ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় শুরু হয় ‘ইনস্টিটিউশনাল স্ট্রেনদেনিং অব গ্রাম পঞ্চায়েত’ (আইএসজিপি)-এর প্রথম পর্যায়ের কর্মসূচি। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, এতে গ্রাম পঞ্চায়েতের যাবতীয় কাজ, পরিকল্পনা তৈরি, প্রকল্পের নজরদারি, খরচের হিসেব রাখা, স্বচ্ছতা যাচাই এবং পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থের পুরো হিসেব রাখার দায়িত্ব সামলাতে হয় সমন্বয়কর্মীদের। প্রথমে ১০০০টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং ন’টি জেলায় এই কাজ শুরু হয়েছিল। এখন রাজ্যের ৩২২৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতেই আইএসজিপি-র কাজ চলছে। ২০১৭ সালে পাঁচ বছরের জন্য শুরু হয় আইএসজিপি-২ কর্মসূচি। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও রাজ্যের অর্থ কমিশনের অর্থ মিলিয়ে বরাদ্দ হয়েছে প্রায় ১৪০০ কোটি টাকা।
প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের মতে, পঞ্চায়েত স্তরে বিপুল কাজের ভার সামলাতে হয় সমন্বয়কর্মীদের। এখন রাজ্যে অন্তত ৫৫০ জন ওই পদে কাজ করছেন। তাঁদের মধ্যে চুক্তির ভিত্তিতে ২৫০ জন সরকারি ভাবে নিযুক্ত এবং বাকিরা কাজে যুক্ত হয়েছেন সংস্থার মাধ্যমে। সরকার নিযুক্ত কর্মীদের বেতন মাসে প্রায় ৪৫ হাজার টাকা, সংস্থা নিযুক্ত কর্মীরা মাসে প্রায় ২৫ হাজার টাকা পান। সুব্রত মুখোপাধ্যায় পঞ্চায়েতমন্ত্রী থাকাকালীন ওই কর্মীদের চাকরির স্থায়িত্বের বিষয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দফতর। কিন্তু আচমকাই তা কার্যত ধামাচাপা পড়ে যায়। ফলে কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের মধ্যে।
এক জেলা-কর্তা বলেন, “কাজের বার্ষিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে কিছু গ্রাম পঞ্চায়েত রাজ্যের অর্থ কমিশনের টাকা পায়। এই ধরনের গ্রাম পঞ্চায়েত বছরে ৩০-৪০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থ পেতে পারে। কিন্তু এটা সম্ভব হয় ওই সব কো-অর্ডিনেটর-মেন্টরের জন্য। তাঁদের কাজে লাগাতে না-পারলে পঞ্চায়েতের অনেক কাজই থমকে যেতে পারে। এই ৫৫০ জনের বেতন বাবদ বছরে ৪৫ থেকে ৫০ কোটি টাকা খরচ হবে সরকারের। সেটা দেওয়া হয়তো অসম্ভব নয়।’’
পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায় বলেন, “অতিমারির কারণে দু’বছর প্রকল্পের গতি কিছুটা কম ছিল। আমরা বিশ্ব ব্যাঙ্ককে এই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে অনুরোধ করেছি। এ মাসের শেষে বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসার কথা আছে। বাকিটা তাঁদের উপরে নির্ভর করছে।”
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy