মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি পিটিআই।
সিঙ্গুরে কৃষিজ শিল্প পার্ক গড়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই প্রকল্পের জন্য ১১ একর জমিতে বিনিয়োগকারীদের আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী স্লোগান দিয়েছেন, ‘কৃষি আমাদের গৌরব, শিল্প আমাদের সম্পদ’। ক্ষমতায় আসার ১০ বছরের মাথায় মমতার এই ঘোষণায় তাদের শিল্পায়নের নীতির ‘মান্যতা’ এবং নৈতিক জয়’ই দেখতে পাচ্ছে সিপিএম। তাদের দাবি, সিঙ্গুরে টাটার প্রকল্পে বাধা দিয়ে রাজ্যে শিল্প সম্ভাবনার অপমৃত্যু ঘটানোর জন্য মানুষের কাছে তৃণমূলের ক্ষমা চাওয়া উচিত।
বামফ্রন্ট জমানায় জমি-বিতর্ক শুরু হয়েছিল সিঙ্গুর থেকেই। সে সময়ে বামফ্রন্টের স্লোগান ছিল, ‘কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ’। শিল্পের নামে বাম সরকার কৃষকদের জমি কেড়ে নিচ্ছে, এই প্রচারে সিপিএমকে পরাস্ত করে ‘পরিবর্তন’ এনেছিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রাম ছিল সেই সময়ে বিরোধীদের প্রচারের মূল হাতিয়ার। তার পরে আদালতের রায়ে সিঙ্গুরের জমি ফেরত দেওয়া হয়েছে মালিকদের। সেই জমিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা গিয়ে বীজ ছড়িয়ে এলেও সেখানে কৃষি আর প্রাণ পায়নি, শিল্পও হয়নি। রাজ্য রাজনীতিতে বহু জল গড়িয়ে যাওয়ার পরে সেই সিঙ্গুরে শিল্প করতে চাওয়ার ঘোষণা শুনেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অসুস্থ শরীরে প্রকাশ্যে তিনি আর মুখ খোলেননি। তবে সহকর্মীদের কাছে তাঁর মত, ইতিহাস নির্মোহ দৃষ্টিতে গোটা বিষয়ের মূল্যায়ন করবে বলেই তিনি আজও মনে করেন।
তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় অবশ্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন, তাঁরা শিল্পের বিরোধী ছিলেন না। সিঙ্গুরে ‘অনিচ্ছুক’দের জমি ফেরানোর দাবিতে তাঁদের আন্দোলন ছিল। সৌগতবাবুর বক্তব্য, ‘‘জমি অধিগ্রহণ বেআইনি বলে রায় দিয়েছিল আদালত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জমি ফেরত দিয়ে প্রতিশ্রুতি রেখেছেন। এখন তিনি শিল্পের ঘোষণা করেছেন, সেটাও করে দেখাবেন।’’
ঘটনাচক্রে, মমতা যে দিন সিঙ্গুরে শিল্পের ঘোষণা করছেন, সেই দিনটি ছিল টাটা-পর্বের সময়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের দ্বিতীয় মৃত্যুদিন। সিপিএম এই অবসরে পুরনো কথাই ফের সামনে নিয়ে এসেছে। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের মন্তব্য, ‘‘তরুণ প্রজন্মের বিপুল কর্মসংস্থানের চাহিদা পূরণ করতে গেলে শিল্প ছাড়া পথ নেই, এই বাস্তব বামফ্রন্ট বহু আগেই উপলব্ধি করেছিল। তখন তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি, মাওবাদী, বামপন্থীদের একাংশ এবং আরও নানা রকমের শক্তি মিলে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি করে শিল্পায়নের চেষ্টায় বাধা দেওয়া হয়েছিল। এখন ভোটের আগে বলতে হচ্ছে, সিঙ্গুরে শিল্পই হবে!’’
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ‘‘সিঙ্গুরে শিল্প হবে শুনলে ঘোড়াতেও হাসবে! দিদিমণির হাত ধরে শিল্প আসবে না। উনি খেলা, মেলা ও পুজোর উদ্বোধন করেছেন। কোনও শিল্পের উদ্বোধন করতে দেখা যায়নি মুখ্যমন্ত্রীকে।’’ সিপিএমের তরফে সেলিম অবশ্য বিজেপিকেও পাল্টা বিঁধেছেন। তাঁর অভিযোগ, ‘‘শিল্প-বিরোধিতায় তৃণমূলের সঙ্গেই ছিলেন বিজেপির রাজনাথ সিংহেরা। আর নরেন্দ্র মোদীর জমানায় কত শিল্প এসেছে? বছরে দু’কোটি চাকরি দেওয়ার তো কথা ছিল ওঁদের!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy