অঙ্ক কষে ভোটে লড়ার ভাবনা সিপিএমে। —ফাইল চিত্র।
সব আসনে লড়াই মানে পণ্ডশ্রম। তাই কিছু আসনকে চিহ্নিত করে ভোটে লড়ার কৌশল নিয়েই ২০২৪-এর লোকসভার দিকে এগোতে চাইছে বাংলার সিপিএম। সূত্রের খবর, রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী এ ব্যাপারে প্রাথমিক ভাবে সেই আসন চিহ্নিত করার কাজও সেরে ফেলেছে। সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, কংগ্রেস ও আইএসএফের সমীকরণ মাথায় রেখেই আসন চিহ্নিত করার বিষয়টি প্রাথমিক ভাবে ভেবেছেন দলীয় নেতৃত্ব। সিপিএম নেতৃত্ব ঘরোয়া আলোচনায় স্পষ্টই বলছেন, গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে লড়াই করার মতো সাংগঠনিক মাজার জোর এখন নেই। তাই যেখানে সামান্য হলেও সম্ভাবনা রয়েছে, সেই সব আসন নিয়েই যা পরিকল্পনা করার করতে হবে।
এখন প্রশ্ন হল, কোন কোন আসনকে সিপিএম চিহ্নিত করতে চাইছে? আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সূত্রে খবর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ উত্তর, কৃষ্ণনগর, রায়গঞ্জ— এই চারটি আসনকে সিপিএম নিজেদের প্রতীকে লড়ার জন্য উর্বর মনে করছে। আইএসএফের জন্য ডায়মন্ড হারবার, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুরের মতো আসন ছেড়ে দেওয়ারও প্রাথমিক ভাবনা রয়েছে সিপিএমের। সিপিআই রাজি থাকলে, বসিরহাট আসনও নওশাদ সিদ্দিকিদের ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে সিপিএম। কংগ্রেসের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত বোঝাপড়া কী হবে তা নিয়ে এখনও সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী নিশ্চিত নয়। তা-ই আলিমুদ্দিনের খেরোর খাতায় যে তালিকা আপাতত করা রয়েছে, তা আদৌ কতটা বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নেতাদেরও।
প্রকাশ্যে অবশ্য সিপিএম নেতৃত্ব এ কথা স্বীকার করছেন না যে, তারা ‘পাখির চোখ’ করে লড়তে চান। নেতারা সে কথা যে প্রকাশ্যে বলবেন না, সেটাই বাস্তব। কারণ, একটি এলাকার কথা বলতে গেলে অন্য এলাকার কর্মী-সমর্থকেরা হারার আগেই হেরে বসে থাকবেন। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আমরা আসন চিহ্নিত করে লড়ার পরিকল্পনা করিনি। আমরা সারা রাজ্যেই লড়ব। তবে নানা বিন্যাস দেখে অগ্রাধিকার করা হয় ঠিকই। সেই সময় এখনও আসেনি।’’
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে সিপিএম কংগ্রেসের জোট হয়েছিল। কিন্তু ভোট মেটার পর সেই জোট কার্যত কর্পূরের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছিল। বিধানসভায় তৎকালীন বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নানের সঙ্গে সিপিএমের সুজনদের সমন্বয় থাকলেও, বাইরে কোনও যৌথ আন্দোলন ছিল না। দেখা যায়, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে আসন বোঝাপড়া হবে হবে করেও শেষ মুহূর্তে ভেস্তে গিয়েছিল। ২০১৪-র লোকসভায় সিপিএমের দু’জন সাংসদ ছিলেন বাংলা থেকে। রায়গঞ্জ থেকে মহম্মদ সেলিম, মুর্শিদাবাদ থেকে বদরুদ্দোজা খান। কংগ্রেস ওই দু’টি আসন সিপিএমকে ছাড়েনি গত লোকসভায়। তাতে দেখা যায়, মুর্শিদাবাদ জেতে তৃণমূল আর রায়গঞ্জ জেতে বিজেপি। আবার সিপিএম দু’টি আসনে প্রার্থী দেওয়া থেকে বিরত ছিল সিপিএম। বহরমপুর ও মালদহ দক্ষিণ। সেই দু’টিই জেতে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী এবং আবু হাসেম খান চৌধুরী (ডালু)। কংগ্রেসের বক্তব্য, সিপিএম যদি তাড়াহুড়ো করে একতরফা প্রার্থী ঘোষণা না-করে দিত, তা হলে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বোঝাপড়ায় কোনও সমস্যা হত না।
সিপিএম প্রাথমিক ভাবে যে আসনগুলিতে রুপোলি রেখা দেখছে তার মধ্যে রায়গঞ্জ, মালদহ উত্তর ও মুর্শিদাবাদ আসন এ বার ও কংগ্রেস ছাড়বে কি না তা নিয়ে সংশয়ে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা তৃণমূল বিরোধিতায় অটল থাকলেও, শেষ পর্যন্ত হাই কম্যান্ডের সঙ্গে কালীঘাটের কী বোঝাপড়া হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সিপিএম নেতৃত্ব। আবার আইএসএফ ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা করেছে ফুরফুর শরিফের পীরজাদাদের অনেককে তারা প্রার্থী করবে লোকসভায়। নওশাদ নিজেও বলেছেন, দল চাইলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি ডায়মন্ড হারবারে লড়তে রাজি। কংগ্রেসের সঙ্গে আইএসফের সমীকরণ কী হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে সিপিএমের অনেকের।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট যে যে আসনগুলিকে চিহ্নিত করেছে, সেখানে বাকি আসনগুলিতে কংগ্রেসের শক্তি ও সংখ্যালঘুদের মধ্যে আইএসএফের প্রভাব থাকলেও কৃষ্ণনগর আসনে তেমন সমীকরণ নেই। থাকলেও তা বাকিগুলির মতো স্পষ্ট নয়। কিন্তু কৃষ্ণনগর নিয়ে অন্য কারণে আশাবাদী সিপিএম। তা হল, ২০২১-এর পরবর্তীতে দলের ফলাফল। এই পঞ্চায়েত ভোটেও কৃষ্ণনগর লোকসভার অন্তর্গত নাকাশিপাড়া, পলাশিপাড়া, তেহট্ট-সহ একাধিক এলাকায় দলের ভোট ৩০ শতাংশের বেশিতে পৌঁছেছে। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, লোকসভায় অবাধ হলে সেই ভোট ৪০ শতাংশের কাছে পৌঁছতে পারে।
শেয পর্যন্ত কী হবে তা সময়ই বলবে। তবে সিপিএম একটি বিষয় ঠিক করে ফেলেছে, সব আসনে হয়তো নামকাওয়াস্তে প্রার্থী দেওয়া হবে, কিন্তু খাতা খুলতে গেলে কয়েকটি আসনকে চিহ্নিত করেই লড়তে হবে। না হলে এ বারও আর্যভট্টের যুগান্তকারী আবিষ্কার নিয়েই থাকতে হবে। শূন্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy