(বাঁ দিকে) মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। কলতান দাশগুপ্ত (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
সাধারণত সিবিআই বা ইডির মতো কেন্দ্রীয় সংস্থা কোনও দলের নেতা-নেত্রীকে ডাকলে সেই দলে উৎকণ্ঠা তৈরি হয়। কিন্তু আরজি কর-কাণ্ডে যুবনেত্রী মিনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে সিবিআই ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করায় ‘খুশি’ সিপিএম নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার সিবিআইয়ের তলবে সিজিও কমপ্লেক্সে গিয়ে হাজিরা দেন মিনাক্ষী। একই দিনে অডিয়ো-মামলায় জামিন পান যুব সংগঠনে মিনাক্ষীরই সতীর্থ কলতান দাশগুপ্ত। সিপিএম মনে করছে, যুগপৎ একই দিনে দু’টি ঘটনায় ‘স্বস্তি’ হয়েছে তাদের।
সিপিএম নেতৃত্ব গোড়া থেকেই দাবি করে আসছেন, মিনাক্ষীর নেতৃত্বেই গত ৯ অগস্ট রাতে আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার শববাহী শকট রুখে দিয়েছিলেন সিপিএমের ছাত্র-যুবরা। সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন ভাবে সেই প্রচারও চালিয়েছে বামেরা। কিন্তু সিপিএম নেতৃত্ব মানছেন, সেই প্রচার যে কোনও কারণেই হোক, তেমন ‘জুতসই’ করে তুলতে পারা যায়নি। এখন মিনাক্ষীকে সিবিআই তলবে তা অনেক বেশি গতি পেয়েছে বলে দাবি সিপিএম নেতাদের। রাজ্য সিপিএমের প্রথম সারির এক নেতার কথায়, “কেন দ্রুততার সঙ্গে নির্যাতিতার দেহ হাসপাতাল থেকে নিয়ে গিয়ে পানিহাটি শ্মশানঘাটে দাহ করা হয়েছিল, সেই বিষয়টি সিবিআইয়ের আতশকাচের নীচে রয়েছে। ৯ অগস্ট সেটাই রুখতে চেয়েছিলেন মিনাক্ষীরা।”
প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষযাত্রার পরে তাঁর দেহ দান করা হয়েছিল নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত ৯ অগস্ট এনআরএস থেকেই আরজি করে পৌঁছে গিয়েছিলেন মিনাক্ষীরা। ওই দিন মিনাক্ষীর পাশে অনেকের মতো ছিলেন কলতানও। নির্যাতিতার এক আত্মীয়ও সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, সেই রাতে মিনাক্ষী ঝাঁপিয়ে পড়ে চেষ্টা করেছিলেন শববাহী শকট আটকানোর। কিন্তু পুলিশের তৎপরতায় শেষ পর্যন্ত তা সম্ভব হয়নি। সিপিএম নেতৃত্বের বক্তব্য, এত দিন তাঁরা মিনাক্ষীর ভূমিকা প্রচারে আনছিলেন। কিন্তু তা রাজনৈতিক পরিসরে খুব একটা দাগ কাটতে পারেনি। তবে মিনাক্ষীকে সিবিআই তলব করায় সেই রাতে দলের ছাত্র-যুবদের ‘ভূমিকা’ জনমানসে তুলে ধরতে সুবিধা হবে।
অন্য দিকে, অডিয়ো-মামলায় কলতানের গ্রেফতারিতে প্রাথমিক ভাবে সিপিএম নেতৃত্ব বিড়ম্বিত হলেও পরে একযোগে দলের সকলেই গোটা বিষয়টিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেছিলেন। নিম্ন আদালত কলতানকে সাত দিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মেয়াদ শেষের আগেই কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে যুবনেতার জামিনের আবেদন জানানো হয়। বুধ এবং বৃহস্পতিবার দু’দফায় বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে সওয়াল করেন রাজ্যসভায় সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য। তার পরে বৃহস্পতিবার আদালত কলতানকে শুধু জামিনই দেয়নি, ‘রক্ষাকবচও’ দেওয়া হয়েছে। সিপিএমের যুবনেতার গ্রেফতারের প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে আদালত। যদিও তৃণমূলের তরফে দাবি করা হয়েছে, প্রক্রিয়াগত বিষয় যা-ই হোক, ওটা যে কলতানের গলা নয়, তা কিন্তু সিপিএমের কেউ বলছেন না। তবে কলতানের জামিনকে আদালতে ‘জয়’ হিসাবেই দেখছে সিপিএম।
আরজি কর আন্দোলনে দু’রকম কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সিপিএম। এক, নাগরিক ঝান্ডাহীন নাগরিক আন্দোলনে মিশে থাকছেন দলের কর্মীরা। দুই, পৃথক ভাবে বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন করা। যুবভারতীতে ডার্বি বাতিলের পর থেকে নাগরিক আন্দোলনে ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান এবং মহমেডান সমর্থকদের মিলিয়ে দেওয়ার নেপথ্যেও সিপিএমের অনেক নেতার ভূমিকা ছিল। আলিমুদ্দিন নজর রাখছিল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন এবং ধর্না কোন পথে এগোয়। বৃহস্পতিবার রাতে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে থেকে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা করেছেন, শুক্রবার দুপুরে স্বাস্থ্য ভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করার পরে তাঁরা ধর্না তুলে নেবেন। তবে আন্দোলন জারি থাকবে। শনিবার থেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কাজে যোগ দেবেন তাঁরা। তবে সিপিএম চায়, নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে আন্দোলন জিইয়ে রাখতে। সে ক্ষেত্রে পুজোকে ব্যবহার করতে চান সিপিএমের ছাত্র-যুব নেতৃত্ব। তার আগে মিনাক্ষী এবং কলতান প্রশ্নে তাঁরা খানিকটা ‘স্বস্তি’ই পেলেন বলে মনে করছেন আলিমুদ্দিনের নেতারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy