(বাঁ দিকে) মহুয়া মৈত্র। মহম্মদ সেলিম (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
মুখে বললেন, পাশে দাঁড়াচ্ছেন না। কিন্তু যে যে যুক্তি দিলেন রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, তাতে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর পাশেই সিপিএম দাঁড়াল বলে মনে করছেন অনেকে। একই সঙ্গে মহুয়া-প্রশ্নে তৃণমূলকে খোঁচাও দিলেন সেলিম।
বুধবার সিপিএম রাজ্য দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে মহুয়া প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, ‘‘এখন এত হইচই কেন? কারণ, আদানির নাম এসেছে তাই। আদানি, মোদী (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী), গুজরাত সব এক জায়গায় এনে দাঁড় করানো হচ্ছে। আদানির নামে প্রশ্ন উঠলেই তড়িঘড়ি সব হয়। রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজ হয়ে যায়। আর যে এথিক্স কমিটি নারদকাণ্ডের পর ১০ বছর ধরে ঘুমিয়ে রয়েছে, রাতারাতি তারাই তদন্ত শুরু করে দিল! বেছে বেছে করা হচ্ছে।’’ বিজেপির সাংসদ নিশিকান্ত দুবের বিরুদ্ধে মহুয়া আগে ডিগ্রি জালিয়াতির অভিযোগ করেছিলেন। প্রসঙ্গত, সাংবাদিক সম্মেলনে কোনও প্রশ্নের ভিত্তিতে নয়, সেলিম ‘স্বতঃপ্রণোদিত’ ভাবেই কৃষ্ণনগরের সাংসদের প্রসঙ্গ উত্থাপন করেছিলেন।
বিজেপি সাংসদ নিশিকান্তের অভিযোগ, শিল্পপতি গৌতম আদানি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে সংসদে প্রশ্ন করার জন্য শিল্পপতি দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে ‘নগদ টাকা এবং দামি উপহার’ নিয়েছেন মহুয়া। এ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে চিঠি দিয়েছিলেন নিশিকান্ত। তিনি আরও অভিযোগ করেছেন, সংসদেরর ওয়েবসাইটে লগ ইন করার জন্য নিজের কোড এবং পাসওয়ার্ড ব্যবসায়ী হীরানন্দানিকে দিয়ে দিয়েছেন মহুয়া। ওই ব্যবসায়ী দুবাইয়ে বসে তার ‘সুযোগ’ নিয়েছেন। মহুয়া পাল্টা দাবি করেন, সমস্ত সাংসদের লগ ইন কোড এবং পাসওয়ার্ড প্রকাশ করা হোক। তা হলেই বোঝা যাবে, আরও কেউ ওই একই কাজ করেন কি না।
লোকসভার স্পিকার নিশিকান্তের অভিযোগ সংসদের এথিক্স কমিটিতে পাঠিয়েছিলেন। সেই কমিটি বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠিয়েছে নিশিকান্তকে। তারা ডেকে পাঠিয়েছেন মহুয়ার প্রাক্তন প্রেমিক জয় অনন্ত দেহাদ্রাইকেও। ইতিমধ্যে হীরানন্দানির একটি হলফনামা দিয়েছেন। যাতে নিশিকান্তের অভিযোগের ‘বৈধতা’ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অবকাশ রয়েছে। যে হলফনামা প্রসঙ্গে মহুয়া পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেছিলেন, ‘‘বয়ানটা প্রধানমন্ত্রীর দফতর লিখে দেয়নি তো?’’
বুধবার সেলিম বলেন, ‘‘এই চিঠি, পাল্টা চিঠি প্রকাশ্যে আসছে কী করে? নিশ্চয়ই কোনও একটা উদ্দেশ্য রয়েছে! না হলে তো তদন্তের পরে তা সামনে আসত।’’ উল্লেখ্য, মহুয়াও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক আরও বলেন, ‘‘অভিযোগ দেখলেই বোঝা যায় এটা আদানি স্পনসর্ড! আমি তো চাই এ নিয়ে আমায় সংসদের প্রিভিলেজ (স্বাধিকার রক্ষা) কমিটি ডাকুক।’’ তবে পাশাপাশিই মহুয়ার প্রসঙ্গে তৃণমূলকে খোঁচা দিয়েছেন সেলিম। তাঁর কথায়, ‘‘দুর্ভাগ্য একটাই— মহুয়ার মতো ভোকাল একজনের পাশে তৃণমূল দাঁড়াচ্ছে না।’’
মহুয়ার ব্যাপারে ‘দলগত’ ভাবে তৃণমূল কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বরং দলের মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন দু’দিন আগে বলেছেন, ‘‘মহুয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে তাঁর অবস্থান স্পষ্ট করার পরামর্শ দিয়েছে দল। মহুয়া ইতিমধ্যেই তা করেছেন। যে হেতু এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন এক জন নির্বাচিত সাংসদ, তাই এই নিয়ে আগে তদন্ত করুক সংসদীয় প্যানেল। তার পরেই উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেবে দল।’’ তার আগে আবার দলের আর এক মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, ‘‘যাঁকে কেন্দ্র করে বিষয়টি, তিনিই ভাল বলতে পারবেন। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের এই নিয়ে কোনও বক্তব্য নেই।’’ আবার রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘মহুয়া যে হেতু বেশি ভোকাল, তাই এ রকম করা হচ্ছে। আমি মনে করি, মহুয়ার কণ্ঠরোধ করার জন্য একটা ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তবে মহুয়া নিশ্চয়ই এটা থেকে বেরিয়ে আসবে। আমি ওর পাশে আছি।’’
মহুয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই ২০০৫ সালের ‘কোবরা পোস্ট’-এর গোপন ক্যামেরা অভিযানের প্রসঙ্গ তোলেন সেলিম। সিপিএমের পলিটব্যুরোর এই সদস্যের বক্তব্য, সেই সময়ে সাংসদদের বিরুদ্ধে ভুয়ো সংস্থার বিষয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ উঠেছিল। তড়িঘড়ি অ্যাডহক কমিটি গড়ে দিয়েছিলেন লোকসভার তৎকালীন অধ্যক্ষ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে ১০ জনের সাংসদ পদ খারিজও হয়। কিন্তু পাঁচ জনের কমিটির অন্যতম বিজেপির বিজয় মলহোত্র বহিষ্কারের সুপারিশের পক্ষে ছিলেন না। কারণ ওই ১০ জনের মধ্যে ছ’জন ছিলেন বিজেপির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy