প্রতীকী ছবি।
তিন ডজনের বেশি বুথে বাম প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ‘নোটা’র সমান অথবা তার থেকেও কম। কুড়ির বেশি বুথে একটি ভোটও পড়েনি কাস্তে-হাতুড়ি-তারা চিহ্নে। তিনশোর বেশি বুথে বাম প্রার্থী পেয়েছেন দশ বা তার চেয়েও কম ভোট! হাতে গোনা কয়েকটি বুথে জুটেছে একশোর সামান্য বেশি ভোট।
লোকসভা নির্বাচনের বুথওয়াড়ি ফল বলছে, উত্তর কলকাতার সাড়ে তিনশোর বেশি বুথে আক্ষরিক অর্থেই ‘সাফ’ হয়ে গিয়েছে সিপিএম। অতীতে এই এলাকা থেকে জিতে লোকসভায় গিয়েছেন মহম্মদ সেলিম বা সুধাংশু শীলের মতো সিপিএম নেতারা। কলকাতা উত্তর-সহ বেশ কিছু এলাকার বুথওয়াড়ি হিসেব দেখে বাম নেতারা অবশ্য এই ফলকে ‘অস্বাভাবিক’ বলেই মনে করছেন।
কলকাতা উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী কনীনিকা বসু (ঘোষ) পেয়েছেন ৭১ হাজারের কিছু বেশি ভোট। ওই কেন্দ্রে এমন ৪৩টি বুথ দেখা যাচ্ছে, যেখানে কনীনিকার প্রাপ্ত ভোট ‘নোটা’র সমান অথবা তার থেকেও কম। আবার ২১টি এমন বুথ আছে, যেখানে বাম প্রার্থীর ঝুলিতে যায়নি একটি ভোটও! সিপিএম প্রার্থী ১০ অথবা তার কম ভোট পেয়েছেন, এমন বুথের সংখ্যা তিনশোর বেশি।
এই ‘অদ্ভুত’ ফলের ব্যখ্যা করতে গিয়ে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম এবং প্রার্থী কনীনিকা ‘ভোট লুটে’র অভিযোগই করছেন। সেলিমের অভিযোগ, ‘‘ওখানে তো অনেক জায়গায় ভোটই হয়নি। রিগিং হয়েছে পুরোমাত্রায়। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু ভোট করাতেই পারেনি।’’ কনীনিকা বলেন, ‘‘উত্তর কলকাতায় তৃণমূল ভোট লুট করেছে বললে কম বলা হবে! ওখানে ডাকাতি হয়েছে! পুনর্নির্বাচনের দাবি জানালেও কোনও লাভ হত না। ফের ভোট হলেও সেই একই ঘটনা ঘটত।’’
ভোটের পরিসংখ্যান বলছে, জোড়াসাঁকো বিধানসভা এলাকার ২০টি বুথে একটিও ভোট পাননি বাম প্রার্থী। এই তথ্য অবাক করেছে বামেদের। কনীনিকার প্রশ্ন, ‘‘এর অর্থ কী? ওই বুথগুলিতে আমাদের এক জনও নেতা বা কর্মী নেই! পূর্ণমাত্রায় রিগিং চলেছে ওই সব এলাকায়। মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল কমিশন।’’ ওই বিধানসভা কেন্দ্রের ২৮৭টি বুথের মধ্যে ১১৩টিতে কনীনিকা পেয়েছেন ১০ অথবা তার কম ভোট। চৌরঙ্গি বিধানসভায় ৬টি বুথে বাম প্রার্থী পেয়েছেন ‘নোটা’র থেকেও কম ভোট। ওই বিধানসভায় এমন ৭টি বুথ রয়েছে, যেখানে ‘নোটা’ এবং কনীনিকার প্রাপ্ত ভোট সমান। বেলেঘাটা বিধানসভা এলাকার ৩২৫টি বুথের মধ্যে ৪৪টিতে কনীনিকা পেয়েছেন ১০ অথবা তারও কম ভোট। একাধিক বুথে তিনি একটি ভোটও পাননি। মাত্র তিনটি বুথে একশোর বেশি ভোট পেয়েছেন বেলেঘাটায়। বেলেঘাটা, জোড়াসাঁকো-সহ কিছু এলাকায় ভোটের দিন ব্যাপক লুটের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। বাম নেতৃত্বের অভিযোগ, এমন ‘অস্বাভাবিক’ ভোটপ্রাপ্তি লুটেরই ফল। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, ফলপ্রকাশের পরেই উত্তর কলকাতায় বামেদের মিছিলে কিন্তু লোক হয়েছিল ভালই। আর শুধু কলকাতা উত্তর নয়, ডায়মন্ড হারবার, যাদবপুর বা উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ— নানা লোকসভা কেন্দ্রেই বুথওয়াড়ি হিসেব দেখাচ্ছে, সেখানে বামেরা ‘সাফ’!
তৃণমূল নেতৃত্ব লুটের অভিযোগ উড়িয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, মেরুকরণের জেরে সংখ্যালঘু নানা এলাকায় তাঁরা নিরঙ্কুশ ভোট পেয়েছেন। তৃণমূল সাংসদ শুভাশিস চক্রবর্তী উদাহরণ দিচ্ছেন, ‘‘শুধু ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা এলাকায় আমরা ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ভোটে ‘লিড’ পেয়েছি। অভিযোগ করলেই তো হল না। এ বারের ভোটের ধরনটা দেখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy