পঞ্চায়েত নির্বাচনে হিংসার প্রতিবাদে ধর্মতলা থেকে এন্টালি পর্যন্ত মিছিলে বাম, কংগ্রেস এবং আইএসএফ-এর কর্মী-সমর্থকেরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
আসন জয়ের নিরিখে পঞ্চায়েত ভোটে তারা তৃতীয় স্থানে। কিন্তু ফলপ্রকাশের পরেই পঞ্চায়েতে ‘ভোট লুট’ এবং ভাঙড়ে ‘হত্যাকাণ্ডে’র প্রতিবাদে শহরের রাস্তায় চোখে পড়ার মতো ভিড় টানল বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও আইএসএফের যৌথ মিছিল। বাম ও কংগ্রেস এর আগে অনেক বার একত্রে পথে নেমেছে। সিপিএম এবং আইএসএফ-ও একসঙ্গে কর্মসূচি করেছে। কিন্তু গত বিধানসভা ভোটের সময় থেকে তিন দলের একসঙ্গে রাস্তায় নামা এই প্রথম। ‘জাল শংসাপত্রে’ পঞ্চায়েত দখল করে মানুষের প্রতিবাদ বন্ধ করা যাবে না বলে রাস্তায় দাঁড়িয়েই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিন দলের নেতৃত্ব। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস অবশ্য সিপিএম ও কংগ্রেসকে ‘রিগিংয়ের আবিষ্কর্তা’ বলে পাল্টা খোঁচা দিয়েছে!
ধর্মতলা থেকে এন্টালি বাজার পর্যন্ত বৃহস্পতিবারের মিছিলে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, ফরওয়ার্ড ব্লকের নরেন চট্টোপাধ্যায়, আরএসপি-র মনোজ ভট্টাচার্যদের পাশাপাশি ছিলেন আইএসএফের চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকী। বাম সূত্রের খবর, প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহণের জন্য প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়েছিল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সেলিমের। তবে মিছিলে এ দিন প্রদেশ কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতাদের কাউকে দেখা যায়নি। কংগ্রেসের তরফে ছিলেন আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়, তপন আগরওয়াল, প্রদীপ প্রসাদ, রানা রায় চৌধুরী, সুমন রায় চৌধুরী প্রমুখ এবং দলের কর্মী-সমর্থকেরা।
মিছিল শেষে লুট এবং অপকর্মের বিরুদ্ধে রাস্তার লড়াই আরও তীব্র করার ডাক দিয়েছেন সেলিম, নওসাদেরা। এন্টালিতে বিক্ষোভ-সভায় সেলিম বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর প্রথম ভোটের সময়ে জাল পিএইচডি-র সার্টিফিকেট দেখিয়েছিলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রীও জাল সার্টিফিকেট বানিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। আমাদের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জাল সার্টিফিকেট বানিয়েই ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। কিন্তু এই জাল সার্টিফিকেটে তৈরি পঞ্চায়েত মানবেন না বাংলার মানুষ।’’ বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ, গুজরাত বা ত্রিপুরার মডেলই বাংলায় চলছে বলে অভিযোগ তাঁর। সেলিমের বক্তব্য, ‘‘বিজেপি মানুষকে ভাগাভাগি করছে। মেরুকরণের ফায়দা নিতে চাইছে তৃণমূলও। কিন্তু এই দ্বিমেরুর তত্ত্ব আর চলবে না!’’ দলীয় পরিচয় না দেখে পঞ্চায়েত ভোট ঘিরে হিংসায় নিহত সকলের জন্যই আগামী ৭ দিন গ্রামে গ্রামে বামেদের তরফে শোক পালনের কথা বলেছেন সেলিম।
ভাঙড়ে লাগাতার সন্ত্রাসের বিবরণ দিয়ে নওসাদের অভিযোগে, তাঁদের প্রার্থী জাহানারা বিবি জেতার পরেও তাঁকে জোর করে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে, তার পরে গুলি চালিয়েছে শাসক দলের বাহিনী। ওই ঘটনার পর থেকে জাহানারার খোঁজ নেই বলে অভিযোগ করে নওসাদেরও হুঁশিয়ারি, ‘‘মার খেয়েও মানুষ লড়াই ছাড়েননি। এই লড়াই আরও তীব্র হবে।’’ রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ করেছেন, ‘‘নিজেরা যেখানে জিতেছে, আবির খেলেছে। আর যেখানে হেরেছে, সেখানে নাকি ভোট জালিয়াতি! এ এক অদ্ভুত রোগ বিরোধীদের! এ রোগের চিকিৎসা জানা নেই। বৈজ্ঞানিক রিগিংয়ের আবিষ্কর্তাদের কাছে রিগিংয়ের কথা শুনব না!’’
এরই মধ্যে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ফের দাবি করেছেন, সিপিএম ও কংগ্রেস ‘ছদ্মবেশে’ তৃণমূলকে সাহায্য করছে। নানা জায়গায় অল্প ভোট পেয়ে তারা তৃণমূলকে জিতিয়ে দিয়েছে! সুকান্তের মন্তব্য, ‘‘আগামী ২০২৪-এর পরে বাঘে-গরুতে এক ঘাটে জল খাবে। রাজ্যে ২০২৬-এর নির্বাচনে তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস একজোট হয়ে লড়াই করলেও অবাক হব না!’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর পাল্টা মন্তব্য, ‘‘তৃণমূলের লোক নিয়ে বিজেপি চালাচ্ছেন। আবার বিজেপি থেকে লোক যাচ্ছে তৃণমূলে। উদ্ভট কথা না বলে নিজেদের দিকে দেখুন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy