২১ জুন, ১৯৭৭। মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিচ্ছেন জ্যোতি বসু —আনন্দবাজার আর্কাইভস
২১ জুন, ১৯৭৭। এই দিনটিতেই বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা ভোটে শূন্য হয়ে যাওয়া সিপিএম এখন পুরনো স্মৃতি কাজে লাগিয়েই উজ্জীবিত করতে চাইছে দলের বর্তমান প্রজন্মকে। সেই প্রচেষ্টায় এবার আক্রমণের তালিকা থেকে বাদ রাখা হল ১৯৭২-৭৭ সালের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের সরকারকে। সম্প্রতি সাঁইবাড়ির ঘটনার বর্ষপূর্তিতে সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের নেটমাধ্যমে করা একটি পোস্টকে ঘিরে গোলমাল বাঁধে কংগ্রেস-সিপিএমের মধ্যে। ওই পোস্টে সাঁইবাড়ির ঘটনার কথা উল্লেখ করে ‘কংগ্রেসি গুন্ডা’ শব্দটি ব্যবহার করেন বিকাশ। সঙ্গে ‘কংগ্রেসি গুন্ডাদের’ হাতে সিপিএম নেতা-কর্মীদের নিহত হওয়ার কথা ফলাও করে লেখেন তিনি। প্রকাশ্যেই কলকাতার প্রাক্তন মেয়রের পোস্টকে ঘিরে কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। এই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে একটি চিঠিও পাঠান প্রদেশ কংগ্রেসের নেতারা। যদিও বিষয়টিতে সিপিএম আমল না দিতে চাইলেও, ঘটনাকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে পারেনি।
তাই বর্ষপূর্তি পালনের ক্ষেত্রে প্রথম থেকেই সাবধানী পদক্ষেপ করেছে রাজ্য সিপিএম নেতৃত্ব। রবিবার রাত ১২টার পর থেকেই সিপিএমের সর্বস্তরের নেতারা নেটমাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে ১৯৭৭ সালের ২১ জুলাই প্রথম বামফ্রন্ট সরকার গঠনের দিনটিকে স্মরণ করেন। সূর্যকান্ত মিশ্র থেকে যুবনেত্রী মিনাক্ষি মুখোপাধ্যায়ের নেটমাধ্যমের একাউন্টে একই ভিডিও পোস্ট হয়েছে। পোস্টের সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘আজ একুশে জুন। ১৯৭৭ সালের আজকের দিনটিতে পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে একটি স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। এই দিনে কমরেড জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে প্রথম বামফ্রন্ট সরকার পথ চলা শুরু করে। আজ আমরা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সকল শহিদ, কমরেডস এবং বাংলার শ্রমজীবী মেহনতী মানুষকে, যাঁরা বামফ্রন্ট সরকার প্রতিষ্ঠার পথিকৃৎ। মানুষই ইতিহাস রচনা করেন’। সঙ্গে হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে, ‘৩৪ইয়ারসএলএফগভ’ ও ‘গর্বের৩৪’। কোনও ক্ষেত্রেই ৭০-এর দশকের প্রতিপক্ষ কংগ্রেস বা তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের নাম উল্লেখ করেনি সিপিএম। কিন্তু বছর ছয়েক আগে পর্যন্ত সিপিএমের যে কোনও স্তরের নেতারা মঞ্চে বক্তৃতা করতে উঠলেই ’৭২-’৭৭ সালের কংগ্রেসের ‘অপশাসনের’ কথা তুলে ধরতেন জোরালো ভাবে। কিন্তু কালের প্রবাহে সেই কংগ্রেসের সঙ্গেই দু’বার জোট করে বিধানসভা ভোটে লড়াই করেছে সিপিএম।
এক্ষেত্রে নিজেদের কৃতিত্ব স্মরণ করলেও, কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তাঁদের লড়াই বা শাসনপদ্ধতি নিয়ে তাঁদের অভিযোগের কথা তুলতে চায়নি রাজ্য নেতৃত্ব। সম্প্রতি বিকাশের পোস্ট নিয়ে তৈরি হওয়া বিতর্কের ঘটনা আর পুনরাবৃত্তি চায় না সিপিএম। আবার সদ্যসমাপ্ত ২ দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও সিদ্ধান্ত হয়েছে, সিপিএম কারও সঙ্গেই জোট ভাঙার দায় বহন করবে না। তাই বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষমতার আসার বর্ষপূর্তির উদ্যাপন করতে গিয়ে যাতে অহেতুক কোনও বিতর্ক দানা না বাঁধে, সে দিকেই সজাগ নজর থেকেছে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বর্ষীয়ান কমরেডদের। সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতার কথায়, ‘‘বামফ্রন্ট সরকারের ক্ষমতায় আসা এবং ৩৪ বছরের শাসনকাল আমাদের পার্টি কর্মীদের কাছে স্মরণীয় বিষয়। কিন্তু এই ঘটনা স্মরণ করতে গিয়ে যাতে কোনও জোট শরিক আঘাতপ্রাপ্ত না হন, সে দিকেও এবার নজর রাখা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy