প্রতীকী ছবি।
কেবল ভোটে বেশি সংখ্যায় আসন জয় বা বিধায়ক ভাঙিয়ে নানা জায়গায় বিজেপির ক্ষমতা পাওয়াই নয়। দেশ জুড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) গভীর প্রভাব যে ভাবে বেড়ে চলেছে, সেটাই আসল উদ্বেগের কারণ বলে চিহ্নিত করল সিপিআই। তাদের মতে, আদর্শগত লড়াই এবং সামাজিক স্তরে সক্রিয়তা বাড়ানো ছাড়া এই প্রবণতার মোকাবিলা করা কঠিন। শুধু বিভিন্ন বিরোধী দলের নির্বাচন-কেন্দ্রিক জোট আরএসএসের টক্কর নেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
সরকারে বিজেপি থাকলেও তার মূল চালিকা শক্তি যে আরএসএস, সে কথা বারেবারেই বলে থাকেন বাম নেতৃত্ব। দেশের নানা প্রান্তে বিভাজনের রাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বাতাবরণ মাথা চাড়া দেওয়ার জন্য সঙ্ঘকেই দায়ী করেন তাঁরা। আরএসএসের বর্তমান কর্মকাণ্ডকেই এ বার আরও বিশদে বিশ্লেষণ করেছে সিপিআই। দলের আসন্ন ২৪তম পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে তারা বলেছে, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ভাবে আরএসএসের মোকাবিলা করতে না-পারার ফলে হিন্দুত্ববাদী কৌশল আরও জাঁকিয়ে বসছে। সাধারণ মানুষের জীবনের জ্বলন্ত সমস্যা নিয়ে আরও তীব্র গণ-আন্দোলন এবং সামাজিক ভাবে বামেদের সক্রিয়তা বাড়ানোর পক্ষেই সওয়াল করেছে সাবেক কমিউনিস্ট পার্টি।
অন্ধ্রপ্রদেশের বিজয়ওয়াড়ায় আগামী অক্টোবরে হতে চলছে সিপিআইয়ের পার্টি কংগ্রেস। তার আগে রাজ্যে রাজ্যে এখন চলছে আঞ্চলিক ও জেলা স্তরের সম্মেলন-পর্ব। বাংলায় সিপিআইয়ের রাজ্য সম্মেলন হওয়ার কথা সেপ্টেম্বরে মেদিনীপুরে। পার্টি কংগ্রেসে পেশ করার জন্য খসড়া রাজনৈতিক প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে: ‘আগে মূলত শহরের উচ্চ বর্ণ এবং ব্যবসায়ী ও ওই ধরনের ক্ষুদ্র বুর্জোয়া অংশের মধ্যে আরএসএসের প্রভাব ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে এবং বাড়তি সুযোগ-ক্ষমতা পেয়ে তাদের প্রভাব এখন সমাজের প্রায় সব অংশের মধ্যে কম-বেশি প্রসারিত হয়েছে। আইএএস-আইপিএসের মতো প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি, সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আরএএসএসের লোক আছেন, তাঁরা নিজেদের জায়গায় সঙ্ঘের ভাবনা ও পরিকল্পনা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এমনকি, প্রতিরক্ষা ও বিচার বিভাগের মধ্যেও এখন আরএসএসের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে! গ্রামীণ এলাকাতেও সঙ্ঘের মদত নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন কৃষক, ক্ষেতমজুর এবং কৃষিজীবীদের নিজেদের প্রভাবাধীন করার চেষ্টা করছে’। সিপিআইয়ের মতে, ‘জাত-পাতের ব্যবস্থার মধ্যে যাঁরা নীচের দিকে আছেন, তাঁরা বিভিন্ন রকম পীড়ন ও বঞ্চনার শিকার। কিন্তু বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার কোনও তারতম্য না ঘটিয়ে একটা বৃহত্তর হিন্দু পরিচিতি সামনে রেখে আরএসএস এখন অনগ্রসর এবং তফসিলি অংশের মধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে’।
সিপিআইয়ের জাতীয় কার্যনির্বাহী কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপির সরকার থাকার সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকারি প্রকল্পের প্রচারের সূত্রেও আরএসএসের লোকজন সমাজের বিভিন্ন অংশের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। সামাজিক স্তরে পাল্টা সক্রিয় না হলে এই বিপদের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। সঙ্ঘের আদর্শগত প্রতিদ্বন্দ্বী যে বামেরাই, সেটা ওরাও জানে। সেই আদর্শগত মোকাবিলাতেই জোর দিতে হবে।’’
খসড়া প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে, পরপর কিছু নির্বাচনে বামেদের শক্তিক্ষয় এবং তার জেরে কর্মী-সমর্থকদের হতোদ্যম হয়ে পড়ার ফলে আদর্শগত লড়াই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার সুবিধা সঙ্ঘ পেয়েছে। এই প্রসঙ্গে কংগ্রেসকেও আদর্শগত দ্বিধা কাটানোর এবং নেহরুর অর্থনীতি ও সমাজতান্ত্রিক মডেলে ফের জোর দেওয়ার ডাক দিয়েছে সিপিআই। তাদের মতে, হিন্দুত্বের পাল্টা ‘নরম হিন্দুত্ব’ বা নব্য উদারনীতির পাল্টা নব্য উদার আর্থিক নীতি দিয়ে লড়াই করা যাবে না। যেতে হবে আরএসএস-বিজেপির উল্টো দিকে। ‘নীতি-নির্ভর বিরোধী ঐক্যে’র পাশাপাশিই ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তি ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের স্বার্থে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সংযুক্তির কথা বলছে সিপিআই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy