Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

সৌমেনকে মানসিক চাপের অভিযোগ উঠল আদালতে

সবংয়ে ছাত্র খুনের ঘটনার মূল অভিযোগকারী, ছাত্র পরিষদ সদস্য সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর পুলিশ মানসিক চাপ তৈরি করছে— সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে এই দাবি করলেন সৌমেনের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য।

সজনীকান্ত কলেজের সামনে কংগ্রেসের অবস্থান মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন মানস ভুঁইয়া।

সজনীকান্ত কলেজের সামনে কংগ্রেসের অবস্থান মঞ্চে বক্তৃতা দিচ্ছেন মানস ভুঁইয়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৩:৩৫
Share: Save:

সবংয়ে ছাত্র খুনের ঘটনার মূল অভিযোগকারী, ছাত্র পরিষদ সদস্য সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের উপর পুলিশ মানসিক চাপ তৈরি করছে— সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে এই দাবি করলেন সৌমেনের আইনজীবী হরিসাধন ভট্টাচার্য। তাঁর আরও দাবি, বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে বারবার সৌমেনকে দিয়ে বাড়িতে ফোন করানো হচ্ছে। হরিসাধনবাবুর আবেদন, পুলিশ যেন সৌমেনের উপর মানসিক চাপ দেওয়া বন্ধ করে, এবং কেবল আইনজীবীর উপস্থিতিতেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। সিজেএম মঞ্জুশ্রী মণ্ডল হরিসাধনবাবুকে এ বিষয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। পুলিশের কাছে বিষয়টি নিয়ে রিপোর্টও তলব করেন।

সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক সৌমেনকে গত শুক্রবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। কৃষ্ণপ্রসাদ জানাকে পিটিয়ে খুন করার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে। এই ঘটনায় গোড়ায় অভিযোগের আঙুল ওঠে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যদের দিকে। প্রথমে তিন টিএমসিপি কর্মীকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দেন, ছাত্র পরিষদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বেই এই ঘটনা ঘটেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষও তখন সেই সুরেই কথা বলেন। গ্রেফতার করা হয় সৌমেন-সহ ছাত্র পরিষদের তিন সদস্যকে। বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, মামলাটি মুখ্যমন্ত্রীর ইচ্ছেমতো সাজানো হচ্ছে।


অবস্থান মঞ্চের বিপরীতে প্রশাসনের তরফে সিসিটিভি লাগানো হয়েছে গাছের ডালে।

আদালতে সৌমেনের উপর চাপের অভিযোগ তুলে সেই ইঙ্গিতই ফের দিলেন সৌমেনের আইনজীবী। এ দিন সিজেএম সৌমেনের আইনজীবীর কাছ থেকে জানতে চান, “কোন কোন নম্বর থেকে বাড়িতে ফোন গিয়েছে, তার উল্লেখ করেছেন?” হরিসাধনবাবু জানান, নম্বরগুলো তিনি তাঁর আবেদনে উল্লেখ করেছেন। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে আদালত পুলিশের কাছে এ বিষয়ে রিপোর্ট চান।

সোমবার হরিসাধনবাবু জানান, সৌমেনের বাড়ির লোকেদের কাছ থেকে তিনি জানতে পেরেছেন, রবিবার সকালে সৌমেন ফোনে তাঁর কাকা তপন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন। ফোনে সৌমেন বলেন, তাঁর বাবা-মাকে পুলিশ সুপারের অফিস, অথবা মেদিনীপুরে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে হবে। এ-ও জানান, বাবা-মা না আসতে পারলে কাকা যেন নিজে আসেন। গাড়ি দরকার হলে সবং থানা ব্যবস্থা করে দেবে।

কিছু ক্ষণ পর সৌমেন ফের তাঁর কাকাকে ফোন করেন। পরে আরও অন্য দু’টি নম্বর থেকে তাঁর কাকার কাছে ফোন যায়। প্রতিবারই সৌমেন একই কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে। হরিসাধনবাবুর দাবি, যে সব নম্বর থেকে ফোন করেন সৌমেন, তার একটি মামলার তদন্তকারী অফিসার বিশ্বজিত্‌ মণ্ডলের। বাকিগুলো অন্য পুলিশ আধিকারিকদের নম্বর।

পুলিশের দাবি, সৌমেনই চেয়েছিলেন, পরিবারের লোকজন মেদিনীপুরে এসে তাঁর সঙ্গে দেখা করুন। তাই তাঁকে ফোন করতে দেওয়া হয়। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, কেবল সৌমেনকে দিয়ে ফোন করিয়েই ক্ষান্ত হয়নি পুলিশ। রবিবার সৌমেনের বাড়িতে গিয়ে খড়্গপুরের এসডিপিও সন্তোষ মণ্ডলও মেদিনীপুরে যাওয়ার কথা বলেন। সোমবার সৌমেনের বাবা বলেন, ‘‘বাড়িতে পুলিশ এসে আমাদের মেদিনীপুরে যেতে বলেছিল। পুলিশ ফোনে সৌমেনের কথাও বলিয়ে দেয়। কেন মেদিনীপুর যেতে বলা হচ্ছে জানি না। তাই আমরা যাইনি।’’

পিটিশনে চারটি বিষয় উল্লেখ করেন সৌমেনের আইনজীবী। এক, অবিলম্বে সৌমেনের বাড়ির লোকেদের উপর মানসিক চাপ বন্ধ করা হোক। দুই, তাঁর অনুপস্থিতিতে যেন মক্কেলকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ না করে। তিন, পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন সৌমেন যেন মোবাইল ফোন ব্যবহার করার সুযোগ না পায়। এবং পুলিশ আধিকারিকদের মাধ্যমে বাড়িতে ফোন না করে। প্রতি তিন ঘণ্টা অন্তর সৌমেনের ডাক্তারি পরীক্ষা করার কথাও পিটিশনে উল্লেখ করা হয়। যদিও সরকার পক্ষের আইনজীবী দীপক সাহা দাবি করেন, পুলিশি হেফাজতে থাকাকালীন আইনজীবীর উপস্থিতিতেই ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে, এমন কোথাও বলা নেই। হরিসাধনবাবুর পাল্টা যুক্তি, এটা আদালতের নির্দেশ। পুলিশ তা অমান্য করতে পারে না।

কেন এই দাবি তুলেছেন সৌমেনের আইনজীবী? হরিসাধনবাবু আদালতে লিখিত আবেদনে জানিয়েছেন, তাঁর অনুপস্থিতিতে সৌমেনকে চাপ দিয়ে পুলিশ মিথ্যা বলিয়ে, বা স্বীকার করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা তাঁর।

আদালতের বাইরে হরিসাধনবাবুর দাবি, ‘‘পুলিশ আমার মক্কেলকে মামলা তোলার জন্য চাপ দিচ্ছে। পরিবারের লোকজনকে দিয়ে এ ব্যাপারে তাঁকে রাজি করানোর চেষ্টা করছে।’’ তাঁর আরও দাবি, সৌমেনকে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানোর চেষ্টা চলছে। তাঁকে এই মামলায় রাজসাক্ষী করতে চাইছে পুলিশ। যদিও ভারতী ঘোষের দাবি, “আদালতে জোর করে গোপন জবানবন্দি দেওয়ানো যায় না।’’

এ দিনই সবং কলেজের সামনে লাগাতার অবস্থানে বসেছে কংগ্রেস। অবস্থান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সৌমেনের বাবা বিমল গঙ্গোপাধ্যায় ও মা অঞ্জুদেবী। ছিলেন স্থানীয় কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, দলের নেতা আব্দুল মান্নান। মানস ভুঁইয়াও অভিযোগ করেন, পুলিশ সৌমেনকে দিয়ে মিথ্যা কথা বলিয়ে নেওয়ার জন্য তার উপর চাপ দিচ্ছে।

পুলিশি হেফাজতের মেয়াদ শেষে আজ, মঙ্গলবার সৌমেনকে সিজেএম আদালতে হাজির করা হবে। পরিবার সূত্রে খবর, ওই দিন ফের তাঁর জামিনের আবেদন জানানো হবে।

সবংয়ে সোমবার রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy