Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

নেওয়ার লোক নেই? অ্যাম্বুল্যান্সে করোনা রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ

নৈহাটির হাজিনগর ফাঁড়ির বাসিন্দা ওই রোগী গত ২ জুলাই কল্যাণী কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। পাশে বসে চালক। শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল  কলেজে। নিজস্ব চিত্র

অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে রোগীর। পাশে বসে চালক। শনিবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। নিজস্ব চিত্র

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২০ ০৪:০৬
Share: Save:

এক কোভিড হাসপাতাল থেকে করোনা পজ়িটিভ রোগীকে রেফার করা হল আর এক কোভিড হাসপাতালে। সেখানে খাতায়কলমে ভর্তি হলেও রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামিয়ে ট্রলিতে হাসপাতালের ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার লোক পাওয়া গেল না বলে অভিযোগ। টানা প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষার পর হাসপাতাল চত্বরে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরেই বছর ষাটের সেই রোগীর মৃত্যু হয় বলেই অ্যাম্বুল্যান্স চালক দাবি করেন।

নৈহাটির হাজিনগর ফাঁড়ির বাসিন্দা ওই রোগী গত ২ জুলাই কল্যাণী কার্নিভাল কোভিড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে তাঁর শারীরিক জটিলতা বাড়ায় ৩ জুলাই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়েছিল। মেডিক্যাল এখন কোভিড হাসপাতাল। শনিবার ভোরে কল্যাণী জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘১০২ নম্বর ডায়াল’ পরিষেবার অ্যাম্বুল্যান্সে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে আনা হয়। রাত পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ না-হলেও মেডিক্যালের সুপার ইন্দ্রনীল বিশ্বাস জানিয়েছেন, বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে ওয়ার্ডে নেওয়ার জন্য প্রতি শিফটে ৬ জন করে গ্রুপ ডি কর্মী থাকেন। তখন কেউ ছিলেন কি না, না-থাকলে কেন ছিলেন না বা থাকলে কেন রোগীকে নেওয়া হল না, সেগুলোই খতিয়ে দেখতে বলেছি।’’

কলকাতায় সম্প্রতি করোনা-নিয়মের জটিলতায় মৃত বৃদ্ধের দেহ বাড়িতে ডিপ ফ্রিজারে রাখতে হয়েছিল। মৃত্যুর পরে কয়েক ঘণ্টা মিষ্টির দোকানের মধ্যেই পড়েছিল করোনায় মৃত দোকানের এক কর্মীর দেহ। এ বার অ্যাম্বুল্যান্সেই পড়ে থেকে রোগী-মৃত্যুর অভিযোগ উঠল।

যে অ্যাম্বুল্যান্সে ওই রোগীকে আনা হয়েছিল, তাঁর চালক উজ্জ্বল রায়ের অভিযোগ, ‘‘ভোর সাড়ে পাঁচটায় কল্যাণী থেকে বেরিয়ে সাতটা কুড়ির মধ্যে মেডিক্যালে পৌঁছে গিয়েছিলাম। সেখানকার অফিসে আর ইমার্জেন্সিতে ডাক্তারবাবুদের বারবার গিয়ে বললাম, এত দূর আসার পরে রোগীর অবস্থা খুব খারাপ। খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাড়াতাড়ি ভর্তি নিন। তাঁরা শুধু ফোন করতে লাগলেন। আমাকে বললেন, ‘কল্যাণী আগে থেকে কিছু জানায়নি। খোঁজ নিতে হবে।’ আর এক জন বললেন, ‘জানালেই তো হবে না। ফোন এলেও একটু অপেক্ষা করতে হবে। এই ভাবে প্রায় ৪০ মিনিট পেরিয়ে গেল।’’

উজ্জ্বলবাবুর বক্তব্য, ‘‘এর মধ্যে রোগী কেমন আছে দেখতে আবার অ্যাম্বুল্যান্সে ছুটে গেলাম। ভদ্রলোক আমার হাত ধরে বললেন, ‘আমি আর বাঁচব না।’ চিকিৎসকদের বার-বার কাকুতিমিনতি করেও রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলাম না। ৮টা ১০ নাগাদ ভর্তির কাগজ নিয়ে গ্রিন বিল্ডিংয়ে চারতলায় গেলাম। সেখানকার এক নার্স জানিয়ে দিলেন, আমাকেই রোগীকে আনতে হবে। করোনা রোগীকে নিয়ে আসার মতো লোক তাঁদের নেই। আমি বললাম, অন্তত এক জনকে সঙ্গে না দিলে রোগীকে ট্রলিতে এত দূর আনব কী করে? কিন্তু তিনি শুনলেন না। এই ভাবে ছুটোছুটি, অনুরোধে আরও অনেকটা সময় কেটে গেল। ন’টা চার নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সে গিয়ে দেখি, রোগী মারা গিয়েছেন। অপরাধী মনে হচ্ছে নিজেকে।’’

যে হাসপাতাল থেকে রোগীকে রেফার করা হয়েছিল, সেই কার্নিভাল হাসপাতালের নোডাল অফিসার অয়ন ঘোষের বক্তব্য, ‘‘এত খারাপ লাগছে বোঝাতে পারব না। জেলায় কোভিড হাসপাতালে সব পরিষেবা থাকে না। ওই রোগীর কো-মর্বির্ডিটি ছিল। সিওপিডি ও হার্টের সমস্যা ছিল। নদিয়ায় কার্ডিয়োলজির চিকিৎসা নেই বললেই চলে। কল্যাণী গাঁধী হাসপাতাল নামেই হৃদ্‌রোগের হাসপাতাল। কোনও পরিষেবা মেলে না। তাই একেবারে নিরুপায় হয়ে, জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক, ডিএম, কলকাতা মেডিক্যাল, স্বাস্থ্যভবন সবাইকে বিস্তারিত জানিয়ে রেফার করেছিলাম। তার পরেও মেডিক্যালে এমন সমন্বয়ের অভাব ঘটল কী করে জানি না।’’

অর্থাৎ, এই ঘটনা এ প্রশ্নও তুলে দিচ্ছে যে, জেলায় জেলায় যে কোভিড হাসপাতাল খোলা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতে রোগীর কো-মর্বিডিটির চিকিৎসা করার মতো পরিকাঠামো কি রয়েছে? চেস্ট, হার্ট, ইএনটি-তে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা কি সেখানে মিলছে? নাকি রোগী রেফারের মতো অবস্থা তৈরি হচ্ছে? দ্বিতীয়ত, কোভিড হাসপাতালগুলিতে কর্মীদের কাউন্সেলিং হলেও করোনা রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি করে ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া কি সুষ্ঠু ভাবে চলছে?

যিনি এর কোনও উত্তর পেলেন না, সেই পিতাহারা পুত্র শনিবার সন্ধ্যায় মেডিক্যালে যাওয়ার পথে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘‘আমার বাবাকে অত ক্ষণ অ্যাম্বুল্যান্সে ফেলে রাখা হল কেন? এর উত্তর চাই। লিখিত অভিযোগ করার মানসিকতা এখন নেই। তবে নিশ্চয় করব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Medical College
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy