১৮-৪৫ বছর পর্যন্ত টিকাকরণের ঘোষণা হলে গেলেও, টিকার জোগান নেই বলে অভিযোগ উঠছে সর্বত্র। —ফাইল চিত্র।
টিকাকরণ শুরু হয়েছে চার মাস হতে চলল। কিন্তু রাজ্যের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৩ শতাংশেরই সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। টিকার জোগানে ঘাটতি নিয়ে যখন ভূরি ভূরি অভিযোগ উঠে আসছে, সেই সময় কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানেই বাংলায় টিকাকরণ ঘিরে এমন উদ্বেগের ছবি ধরা পড়ল। তাতে দেখা গিয়েছে, রাজ্যের মোট জনসংখ্যা যেখানে প্রায় ১০ কোটি, সেখানে এ যাবৎ বাংলার মোট জনসংখ্যার মাত্র ৩.৩ শতাংশের সম্পূর্ণ টিকাকরণ হয়েছে। এই মুহূর্তে রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণের হার ৩১.৩ শতাংশ। তবে শুধুমাত্র একটি টিকা নিয়েছেন, এমন মানুষও রয়েছেন, মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮.৮ শতাংশ। তাঁদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ হলে সামান্য হলেও পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশাবাদী চিকিৎসা মহল।
দেশের কোথায় টিকাকরণের কাজ কতদূর এগিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের কোউইন অ্যাপেই তার বিশদ হিসেব রয়েছে। টিকাকরণের আগে ওই অ্যাপে নাম নথিভুক্ত করাও বাধ্যতামূলক। তবে বহু জায়গায় অ্যাপে নাম তুলতে গিয়ে সমস্যায় পড়ছেন সাধারণ মানুষ। কেন্দ্র যদিও ওই অ্যাপেই টিকাকরণ সংক্রান্ত যাবতীয় পরিসংখ্যান তুলে ধরেছে। তাতে দেখা গিয়েছে, বাংলায় ১৬ জানুয়ারি থেকে টিকাকরণ শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত বাংলায় মোট ১ কোটি ২১ লক্ষ ৯ হাজার ৯৯২ জন টিকা পেয়েছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড এবং ভারত বায়োটেক এবং আইসিএমআর-এর তৈরি কোভ্যাক্সিন ব্যবহার করেই এই মুহূর্তে টিকাকরণ চলছে দেশে। করোনা প্রতিরোধে এক থেকে দু’মাসের ব্যবধানে কোভিশিল্ড এবং কোভ্যাক্সিনের দু’টি টিকা নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু কেন্দ্রের হিসেব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত বাংলার ৩২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৮৩৮ মানুষকেই দু’টি টিকা দেওয়া গিয়েছে। শুধুমাত্র একটি টিকা পেয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা ৮৮ লক্ষ ৪৫ হাজার ১৫৪।
ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে প্রথমে জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নাগরিক এবং বয়স্কদের টিকাকরণে জোর দেওয়া হয়েছিল। তবে বয়সের নিরিখে টিকাকরণের যে হিসেব দেওয়া রয়েছে, তাতে দেখা গিয়েছে, ৩৭ লক্ষ ৬৯ হাজার ৫৫০ জন ষাটোর্ধ্ব নাগরিককে টিকা দেওয়া হয়েছে রাজ্যে। ৪৫ থেকে ৬০ বয়সিদের মধ্যে বয়স এমন ৩৯ লক্ষ ৮২ হাজার ৮৮৭ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। ৩০ থেকে ৪৫ বছর বয়সি ৮ লক্ষ ১০ হাজার ৭৪২ জন টিকা পেয়েছেন। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সি ২ লক্ষ ৮১ হাজার ১২০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে কোভ্যাক্সিনের চেয়ে কোভিশিল্ডেই বেশি ব্যবহার করা হয়েছে টিকাকরণে। ১ কোটি ৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৪৬৯ জন কোভিশিল্ড টিকা নিয়েছেন। কোভ্যাক্সিন নিয়েছেন ১২ লক্ষ ৯৩ হাজার ৫২৩ জন।
রাজ্যে জেলাগুলির মধ্যে কলকাতাতেই করোনার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। সোমবার পর্যন্ত রাজ্যে মোট সংক্রমিতের সংখ্যা ছিল ২ লক্ষ ৩০ হাজার ৮৩১। মারা গিয়েছেন ৩ হাজার ৭১২ জন করোনা রোগী। শহর কলকাতার মোট জনসংখ্যা যেখানে প্রায় দেড় কোটি, সেখানে টিকা দেওয়া হয়েছে ১৫ লক্ষ ৩৭ হাজার ২৮২ জন নাগরিককে। অর্থাৎ গোটা রাজ্যের তুলনায় কলকাতায় টিকাকরণের গতি তুলনামূলক ভাল। মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি মানুষ এখনও পর্যন্ত টিকা পেয়েছেন কলকাতায়। তবে দু’টি টিকা পেয়েছেন মাত্র ৩ লক্ষ ৮৬ হাজার ৭৪৩ জন। একটি টিকা নিয়ে দ্বিতীয়টির অপেক্ষা করছেন ১১ লক্ষ ৫০ হাজার ৫৩৯ জন।
কলকাতার পর উত্তর ২৪ পরগনাতেই সবচেয়ে বেশি টিকাকরণ হয়েছে। সেখানে একটি টিকা নিয়েছেন সব মিলিয়ে ৯ লক্ষ ৯৪ হাজার ২৭২ জন। ৩ লক্ষ ৩৫ হাজার ৫৬৮ মানুষকে দু’টি টিকাই দেওয়া হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় একটি টিকা পেয়েছেন ৭ লক্ষ ৩০ হাজার ২১৫ জন। ২ লক্ষ ৮৫ হাজার ৭৭৩ জনকে দু’টি টিকা দেওয়া গিয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে ৫ লক্ষ ৯৪ হাজার ৩৪৪ জনকে একটি টিকা দেওয়া হয়েছে। দু’টি টিকা পেয়েছেন ২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৩৮ জন। হাওড়ায় ৪ লক্ষ ৫৩ হাজার ০৩৩ জন একটি টিকা পেয়েছেন। দু’টি টিকা পেয়েছেন ১ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫৪৩ জন। পশ্চিম মেদিনীপুরে একটি টিকা পেয়েছেন ৩ লক্ষ ৯১ হাজার ২৪৭ জন। ১ লক্ষ ৪৮ হাজার ৬২২ জন দ্বিতীয় টিকা পেয়েছেন সেখানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy