ফাইল চিত্র
করোনার সংক্রমণ বাড়ছে দিল্লিতে। গত তিন দিন টানা সেখানে গড়ে হাজারের কাছাকাছি ব্যক্তি আক্রান্ত হয়েছেন করোনায়। সংক্রমণের হার প্রায় পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি। রাজ্যেও সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্বাস্থ্য শিবিরের একাংশের ধারণা, জুলাই-অগস্ট নাগাদ বঙ্গে ফের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে। চিকিৎসক মহলের ব্যাখ্যা, গত ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় ঢেউ কমতে শুরু করেছিল। সেই হিসেবে মাস ছয়েক পরে রাজ্যে আবার করোনার ঢেউ আসার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে।
রাজ্যে নতুন ঢেউ কতটা বিপজ্জনক হবে, সেই বিষয়ে এখনও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছে না স্বাস্থ্য শিবির। শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারের প্রাথমিক অনুমান, পরবর্তী ঢেউয়ে সংক্রমণ বেশি হলেও মৃত্যু কম হবে। তাঁর কথায়, ‘‘উপসর্গ বেশি হবে না, ছোট ছোট ঢেউ আসবে। সাত-দশ দিন করে সংক্রমিতের সংখ্যা বাড়বে, আবার কমে যাবে। তাই সংক্রমণ বৃদ্ধির থেকেও মৃত্যু বাড়ছে কি না, সে দিকে নজর রাখতে হবে।’’ রাজ্যের এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘দিল্লিতে ওমিক্রনের যে উপপ্রজাতি মিলেছে, তা প্রবল সংক্রমণ ছড়ালেও প্রাণঘাতী, এমন তথ্য মেলেনি। কিন্তু এ রাজ্যে সেটাই আসবে, না কি অন্য কিছু, তা পরবর্তী সময়ে বলা যাবে।’’
দিল্লিতে হঠাৎ সংক্রমণ বৃদ্ধির পিছনে ওমিক্রনের উপপ্রজাতি বিএ২.১২-কেই দায়ী করেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ওই প্রজাতির সংক্রমণ ক্ষমতা ওমিক্রনের চেয়ে অনেক বেশি। তবে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যায় সেই অর্থে কোনও বৃদ্ধি দেখা যায়নি। গত দু’সপ্তাহের জিনোম পরীক্ষার ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান সার্স কোভ জিনোমিক্স কনর্সোটিয়াম জানিয়েছে, মোট নমুনার ৫২ শতাংশে বিএ২.১২ উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছে। ১১ শতাংশ নমুনায় পাওয়া গিয়েছে বিএ২.১০। সংস্থার মতে ওমিক্রনের মূল প্রজাতির চেয়ে বিএ২.১২ উপপ্রজাতির সংক্রমণের হার অনেকটাই বেশি। মূল প্রজাতির চেয়ে সপ্তাহে ৩০ থেকে ৯০ শতাংশ বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে উপপ্রজাতি। দুশ্চিন্তার হল, ওই উপপ্রজাতি ছড়িয়ে পড়েছে উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানাতেও। এর মধ্যে ওমিক্রনের আরও একটি উপপ্রজাতির উপস্থিতি দিল্লিবাসীর নমুনায় পেয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বিএ২.১২.১ নামে ওমিক্রনের উপপ্রজাতি সংক্রমণের প্রশ্নে বেশ শক্তিশালী। বর্তমানে আমেরিকায় যে সংক্রমণের যে নতুন ঢেউ এসেছে, তার জন্য বিএ২.১২.১-কেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সম্ভবত বিদেশ থেকে আসা কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে ওই উপপ্রজাতিটি দিল্লিতে পৌঁছেছে।
পশ্চিমবঙ্গে জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই-ও জানাচ্ছেন, তৃতীয় ঢেউয়ে দেখা গিয়েছিল মূল ওমিক্রনের থেকে ৩০% বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে উপ প্রজাতি বিএ.২। এ বার দেখা যাচ্ছে ওই বিএ.২-র থেকেও ২৩-২৭% বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে নতুন দু’টি উপপ্রজাতি। তবে তাঁর কথায়, ‘‘যেহেতু কয়েক মাস আগেই বহু মানুষ ওমিক্রন ভেরিয়েন্টে সংক্রমিত হয়েছেন, তাঁদের শরীরে এখনও ইমিউনিটি রয়েছে। তাই তাঁদের তেমন ভয় থাকার কথা নয়।’’
বর্তমানে দেশে কোভিড ভাইরাসের আটটি প্রজাতি সক্রিয়। যার মধ্যে সংক্রমণের প্রশ্নে ওমিক্রনের উপপপ্রজাতিগুলি সবথেকে শক্তিশালী বলেই মত বিশেষজ্ঞদের। সেই কারণে বয়স্ক ও ছোটদের অত্যন্ত সাবধানে রাখার উপরে জোর দিয়েছেন দিল্লির ইনস্টিটিউট অব লিভার অ্যান্ড বাইলারি সায়েন্সের অধিকর্তা এস কে সারিন। তাঁর মতে, ‘‘যেহেতু ছোটদের এখনও টিকাকরণ হয়নি, তাই তাদের সাবধানে রাখা উচিত। বড়দের উচিত আগের মতো মাস্ক পরা ও কোভিড বিধি মেনে চলা।’’ ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও বলছেন, ‘‘প্রত্যেককে টিকা নিতে হবে। কারণ, টিকা নেওয়া থাকলে শরীরে তৈরি হওয়া টি-মেমোরি সেল বা কোষ ত্রাতার ভূমিকা নেবে। এর সঙ্গে বর্মের মতো মাস্কে নাক-মুখ ঢাকতে হবে।’’
কিন্তু এখন মাস্ক পরে কে? বেশ কিছু রাজ্যে মাস্ক পরা ফের বাধ্যতামূলক হয়েছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। বঙ্গে তা করা হচ্ছে না এখনও। কিন্তু করোনার বিপদের কথা জানার পরেও, এক শ্রেণির মানুষ এ রাজ্যে যে বেপরোয়া মনোভাব দেখাচ্ছেন, তা চরম উদ্বেগের বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের সকলেই বলছেন, সংক্রমণ যাতে বেশি না ছড়ায় তার জন্য একমাত্র হাতিয়ার মাস্ক। কিন্তু সেটাই তো উধাও!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy