রাস্তার ভবঘুরেদের খাওয়াচ্ছেন স্বপন কর্মকার। জলঙ্গির নওদাপাড়ায়। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাবার বাড়িতে গিয়ে এক বেলা থাকা হয়নি কবিতাদেবীর। আর স্বামী স্বপন কর্মকার পুজো পার্বণে কী করেন? সটান উত্তর, ‘‘ঠাকুর সেবাই তো করে যাচ্ছি। নতুন করে পূজা-পার্বণের আর কী দরকার আছে আমাদের জীবনে।’’ একদল ভবঘুরে প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষকে ৩৬৫ দিন তিন বেলা মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে জীবনের স্বাদ আহ্লাদ জলাঞ্জলি দিয়েছেন সাগরপাড়া থানার নওদাপাড়া এলাকার স্বপন কর্মকার ও কবিতা কর্মকার। বিঘা দুয়েক জমি আর একটি ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে তিন সন্তানের পাশাপাশি প্রায় দিনই জনা কয়েক অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন তাঁরা।
কিন্তু কেন শুরু করলেন এই নরনারায়ণ সেবা? স্বপনবাবুর কথায়, ‘‘সে অনেক বছর আগের কথা। এক দিন চায়ের দোকানে বসেই দুপুরের খাবার খাচ্ছি, ঠিক সেই সময় এক অসহায় ভবঘুরে সামনে এসে দাঁড়ালেন। নিজের খাবারের থালা থেকে গোটাকয়েক রুটি আর সামান্য তরকারি তুলে দিলাম তাঁর হাতে। তার পর থেকে নিয়মিত আসতে থাকেন ওই ভবঘুরে। আর তাকে দেখেই একের পর এক বাড়তে থাকে সংখ্যাটা, কাউকেই ফেরাতে পারিনি।’’ তার এই কর্মকাণ্ডে পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা পরিবার। তাঁর ছেলের দাবি, ‘‘এই অতিমারির সময় ভবঘুরেরা খেতে পায় না। সবই তো বন্ধ। তাই বাবাই তাঁদের অনেকের শেষ ভরসা। আমরা খেতে পেলে, তাঁরাও পাবেন।’’
কাঠ খড়ির জ্বালানি দিয়ে তিন বেলা যিনি রান্না করেন সেই কবিতা বলছেন, ‘‘প্রথম প্রথম কষ্ট হলেও এখন এই অসহায়ের মুখে খাবার তুলে দিয়ে আনন্দ পাই।’’ এর জন্য স্বপন কোনও দিন কারও কাছে হাত পাতেননি। এলাকার বাসিন্দা অসীম মন্ডল বলছেন, ‘‘স্বপনদার দোকানে রোজই দেখি চার-পাঁচ জন অসহায় মানুষ খাওয়া-দাওয়া করছেন। একেবারে নীরবে সমাজের উপকার করে চলেছেন।’’ সামান্য চাষের জমি আর ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে এতগুলো মানুষের মুখে খাবার তোলেন কী করে? স্বপন কর্মকারের দাবি, ‘‘সত্যি করে বলছি, কী করে চালাই, সেটা আমিও বলতে পারব না। তবে এটুকু বলতে পারি আমাদের ৫ জনের সঙ্গে প্রতিদিন তিন বেলা, আরও ৫ জনের খাবার জোটাতে এখনও পর্যন্ত কষ্টের মুখে পড়তে হয়নি আমাকে। ডাল-ভাত যা জোটে আমরাও খাই ওদের সেটাই দিয়ে থাকি।’’ দুয়ারে তখন দাঁড়িয়ে রয়েছেন নতুন এক জন অতিথি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy