আর এক মন্ত্রী শশী পাঁজার কটাক্ষ, ‘‘যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে অন্য সব কর্মসূচি বাতিল করে কাশীপুরে চলে গিয়েছিলেন, সে ভাবে কোনও সফরসূচি বাতিল করে তো ললিতপুর, প্রয়াগরাজ, হাথরস বা উন্নাওয়ে যেতে দেখিনি তাঁকে!’’
ফাইল চিত্র।
কাশীপুরের বিজেপি যুব মোর্চার নেতা অর্জুন চৌরাসিয়ার মৃত্যু হয়েছিল গলায় ফাঁস লেগে। আলিপুর সেনা হাসপাতালে করা ময়না তদন্তের রিপোর্ট কলকাতা হাই কোর্টে জমা পড়ার পরে এ বার ওই ঘটনাকে হাতিয়ার করে স্বয়ং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে সরব হল তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির নেতাদের অভিযোগ ছিল, তাঁদের যুব নেতা তথা দলীয় কর্মীকে মেরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। ময়না তদন্তে অবশ্য মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার কোনও প্রমাণ মেলেনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ময়না তদন্তের রিপোর্ট উল্লেখ করে এ বার তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, ‘মিথ্যাচার’ করতে গিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখ পুড়েছে!
রাজ্য বিজেপির নেতারা যদিও বলছেন, ময়না তদন্তে গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যুর কথা জানা গিয়েছে। কিন্তু ওই ঘটনা আত্মহত্যাই না খুন, তার স্পষ্ট ইঙ্গিত ময়না তদন্তে নেই। এই রিপোর্টে থাকার কথাও নয়। আদালতের নজরদারিতে রহস্য-মৃত্যুর সিবিআই তদন্তের দাবিই বজায় রেখেছেন তাঁরা। অর্জুনের পরিবারের দাবিও সেই রকমই।
আদালতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট জমা পড়ার পরে রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য মঙ্গলবার দাবি করেছেন, ‘‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাশীপুরে এসে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। সে দিন তিনি অসত্যের ঝুড়ি সাজিয়ে নিয়ে এসেছিলেন! আমাদের সেই দাবি যে সত্য, তা ময়না তদন্তের রিপোর্টে প্রমাণিত। একটা গল্প তৈরি করা হয়েছিল, সেটা টেঁকে না, তা প্রমাণিত হল।’’ তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘ দিন ধরেই তৃণমূলকে কলুষিত করার চেষ্টা করছেন বিজেপি নেতারা এবং তা বিফলে যাচ্ছে। চন্দ্রিমার মন্তব্য, ‘‘রাজনীতির কারণে তাঁকে (অর্জুন) মারা হয়েছে বলে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আঙুল তুলে গিয়েছেন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কাছে এই রকম দায়িত্বজ্ঞানহীনতা আশা করি না! উনি মিথ্যা বলেছেন।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র কর্তাদের মতে, কোনও সন্দেহজনক মৃত্যু কী ভাবে হয়েছে, তা ময়না তদন্ত ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তাতে ভুল ব্যাখ্যার সম্ভাবনা থেকে যায়। কিন্তু কাশীপুরে অর্জুনের ক্ষেত্রে কেন তড়িঘড়ি শাহ খুনের অভিযোগ করেছিলেন, তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কেউই মুখ খুলতে চাননি। তবে বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি কর্মীদের বেছে বেছে হত্যা করছে শাসক শিবির। এ ক্ষেত্রেও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব মনে করেছিলেন, সম্ভবত রাজনৈতিক হিংসারই শিকার হয়েছেন অর্জুন। সেই আশঙ্কাই রাজ্য সফররত শাহকে জানানো হয়েছিল। তবে অর্জুনের হত্যার পিছনে শাসক শিবিরের কারও প্ররোচনা বা তাঁর উপরে কোনও রাজনৈতিক চাপ ছিল কি না, তারও তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলেই মনে করছে বিজেপি।
ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ রাজনৈতিক হত্যার অভিযোগ করেছিলেন। সেনা হাসপাতাল ময়না তদন্ত রিপোর্টে জানিয়েছে, গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যু হয়েছে। ফাঁস লাগার আগেই মৃত্যুর প্রমাণ নেই। প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছিল, তা তদন্তের ভার পুলিশকেই দিয়েছে হাই কোর্ট। ওই রিপোর্ট জমা পড়ার পরে খুনের তত্ত্ব থেকে কিছুটা সরে এসে অর্জুনের মায়ের আইনজীবীরা এ দিন কোর্টে দাবি করেন, আত্মহত্যা হলেও তার পিছনে চাপ ছিল। অর্জুনকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলেও অভিযোগ করেন তাঁরা। যদিও কোনও নির্দিষ্ট হুমকির ঘটনার কথা আদালতে শোনা যায়নি।
রাজ্যে বিধানসভা ভোট-পরবর্তী ‘সন্ত্রাসে’র শিকার ‘শহিদ’ পরিবারগুলিকে নিয়ে বিজেপির ধর্না কর্মসূচি ও রাজভবনে দরবার করতে গিয়ে এ দিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্য, ‘‘অর্জুনকে খুন করা হয়েছে। ময়না তদন্তের রিপোর্টে বলা আছে, গলায় ফাঁস লেগে মৃত্যু। সেটা হত্যা না আত্মহত্যা, সেটা ওই রিপোর্ট থেকে বোঝা যাচ্ছে না। এই ঘটনায় আদালতের নজরদারিতে সিবিআই তদন্ত চাই।’’
শাসক দল অবশ্য শাহ ও তাঁর দলকে নিশানা করতে ছাড়ছে না। চন্দ্রিমার বক্তব্য, ‘‘কোনও তদন্ত ছাড়াই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলে দিলেন, রাজনৈতিক খুন! ছেলেটির মৃত্যু গলায় ফাঁস লাগার আগে হয়নি। মৃতের শরীরে ধস্তাধস্তির কোনও চিহ্নও নেই। মেরে ঝুলিয়ে দেওয়ার যে কথা বলা হয়েছিল, তার কোনও ভিত্তি নেই।’’ আর এক মন্ত্রী শশী পাঁজার কটাক্ষ, ‘‘যে ক্ষিপ্রতার সঙ্গে অন্য সব কর্মসূচি বাতিল করে কাশীপুরে চলে গিয়েছিলেন, সে ভাবে কোনও সফরসূচি বাতিল করে তো ললিতপুর, প্রয়াগরাজ, হাথরস বা উন্নাওয়ে যেতে দেখিনি তাঁকে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy