প্রতীকী ছবি।
স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরে অভিযোগের আঙুল সিএসসি বা কলেজ সার্ভিস কমিশনের দিকে। ঘুরপথে স্কুলশিক্ষকের চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে যেমন এক ‘রঞ্জন’-এর নামে অভিযোগ উঠেছে, কলেজে চাকরি দেওয়ার ক্ষেত্রে একই রকম জল্পনা চলছে ‘ভূপেশ’ নামে এক চাঁইকে ঘিরে। এক দল কর্মপ্রার্থী রবিবার সাংবাদিক বৈঠক ডেকে সিএসসি-র মাধ্যমে কলেজে সহকারী অধ্যাপক নিয়োগে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ করেন এবং স্কুলের মতো কলেজের সেই সব নিয়োগ নিয়েও সিবিআই তদন্তের দাবি জানান। তবে কলেজ সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান দীপক কর এই ধরনের অভিযোগকে আদৌ গুরুত্ব দিতে রাজি নন।
স্কুলে বেআইনি নিয়োগের নালিশ জানিয়ে মামলার প্রেক্ষিতে কলকাতা হাই কোর্ট সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আগেই। বেশ কিছু শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের পাশাপাশি কয়েক জনকে নিয়োগের নির্দেশও দিয়েছে উচ্চ আদালত। এই অবস্থায় হাতে নির্দিষ্ট তথ্য থাকা সত্ত্বেও কলেজের চাকরিপ্রার্থীরা এখনও আদালতের দ্বারস্থ হননি কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হয়েছিল ২০১৮ সালে সিএসসি-র প্যানেলভুক্ত প্রার্থীদের সংগঠনের নামে। অভিযোগ, বহু নেতা,মন্ত্রী-সহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির এমন কিছু আত্মীয়কে কমিশন নিজেদের নেওয়া ‘সেট’ পাশ করিয়ে নিয়োগপত্র দিয়েছে, যাঁদের যোগ্যতা অত্যন্ত কম এবং যাঁদের মেধা-তালিকায় নাম থাকার কথাই নয়। ‘ভূপেশ’ নামধারী এক ব্যক্তি এ-পর্যন্ত ন’জনকে কলেজে শিক্ষকের চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন।
প্রার্থী সংগঠনের পক্ষে বিনয়কৃষ্ণ পাল অভিযোগ করেন, কলেজে নিয়োগের ক্ষেত্রে চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ হয়েছে। ইন্টারভিউয়ে নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে ৪০-৪৫ শতাংশ নম্বর রেখে কম যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের ইন্টারভিউয়ে প্রায় পূর্ণ নম্বর দিয়ে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে ঘুরপথে। হাই কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও এ-পর্যন্ত যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নম্বর, তাঁরা কোথায় চাকরি করছেন, কলেজে পড়ানোর যোগ্যতা তাঁদের আছে কি না, সেই সব তথ্য প্রকাশ করেনি কমিশন।
অভিযোগ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে প্রথম প্রিয়াঙ্কা কুণ্ডুও দুর্নীতির কারণে চাকরি পাননি। অথচ একটি কলেজের পরিচালন সমিতির সম্পাদক ছিলেন, এমন এক তৃণমূল বিধায়ক নিজের জামাতাকে সেই কলেজে চাকরি পাইয়ে দিয়েছেন। অন্য এক তৃণমূল নেতা ও মন্ত্রীর ভাইপো অসংরক্ষিত তালিকার প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁকে সংরক্ষিত পদে চাকরি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। প্রিয়াঙ্কা বললেন, “এমন দুর্নীতির তথ্য রয়েছে ভূরি ভূরি। আমরা সকলেই মেধা-তালিকাভুক্ত প্রার্থী। আমাদের কেউ ওয়েটিং লিস্টের প্রার্থী নন। মেধা-তালিকার প্রথম জন চাকরি পেয়ে গেলে আমরা পাব না কেন?’’
পদ তৈরির আগেই সেই পদে নিয়োগ, অনেক আগে চাকরির বয়স পেরিয়ে যাওয়া প্রার্থীদের নিয়োগ, এক-এক জনকে দু’-তিন বার কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ, ইচ্ছামতো কিছু বিষয়ের মেধা-তালিকার মেয়াদ বাড়িয়ে নিয়ম ভেঙে মেধা-তালিকা প্রকাশের অনেক পরে আসনমঞ্জুর করে বহু নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয় এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকে। অভিযোগ, কোনও কোনও বিষয়ের মেধা-তালিকার সব প্রার্থীকে নিয়োগপত্র দেওয়া হলেও কিছু বিষয়ে খুব কম নিয়োগ হয়েছে।
ওই চাকরিপ্রার্থীদের দাবি, কলেজে নিয়োগ দুর্নীতির যথাযথ বিচার বিভাগীয় ও সিবিআইতদন্ত হোক। দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকের শাস্তির পাশাপাশি সিএসসি-র চেয়ারম্যানের পদত্যাগও চান তাঁরা। সেই সঙ্গেই ওই প্রার্থীদের দাবি, ২০১৮ সালে সিএসসি-র মেধা তালিকাভুক্ত সব প্রার্থীকে দ্রুত নিয়োগ করতে হবে।
সিএসসি-র চেয়ারম্যান দীপকবাবু অবশ্য ওই চাকরিপ্রার্থীদের অভিযোগ ও দাবিকে আমল দিতে চাননি। তাঁর বক্তব্য, সব নিয়ম মেনেই প্যানেল তৈরি হয়। শূন্য পদের দেড় গুণ প্রার্থী থাকেন সেই তালিকায়। প্যানেলের মেয়াদ এক বছর। প্যানেল যখন বেরোয়, তখন কোনও অভিযোগ ওঠেনি। এক বছর পরে প্যানেলের মেয়াদ শেষ হলে যখন দেখা যায়, কোনও কোনও প্রার্থী চাকরি পাননি, তখন অভিযোগ শুরু হয়। ‘‘এই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন’’ বলে মন্তব্য করেন কমিশন-প্রধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy