গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
রাজ্যের নানা প্রান্তে আটকে পরিযায়ী শ্রমিকরা। আবার ভিন্রাজ্যে আটকে এ রাজ্যের বহু। প্রায় প্রত্যেকের জন্য সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সক্রিয় তো বটেই, দিল্লিতে বসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে সক্রিয় ডেরেক ও’ব্রায়েনও। দিনভর গৃহবন্দি থেকে সক্রিয় আর এক জনও। তিনি অধীররঞ্জন চৌধুরী। একের পর এক ফোন কলে বাংলার বাইরে আটকে থাকা বাঙালিদের অভাব-অভিযোগ সামলানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনিও।
১৮টা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ইতিমধ্যেই চিঠি লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লকডাউনের জেরে ওই সব রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের যে শ্রমিকরা আটকে পড়েছেন, তাঁদের আশ্রয়, খাবার এবং ওষুধ পেতে যাতে কোনও সমস্যা না হয়, তা নিশ্চিত করার অনুরোধ করেছেন। অন্যান্য রাজ্যের যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে আটকে রয়েছেন, এ রাজ্যের সরকার যে তাঁদের দেখভাল যত্নের সঙ্গেই করছে, সে কথাও মমতা নিজের চিঠিতে জানিয়েছেন।
শুক্রবারও রাজ্য সরকারের তেমনই একটা নির্দেশ সামনে এসেছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব চিঠি লিখেছেন কলকাতার পুর কমিশনারকে। তাতে মুখ্যসচিব জানিয়েছেন যে, পশ্চিমবঙ্গের নানা প্রান্তে পরিযায়ী শ্রমিকরা আটকে রয়েছেন। ওই শ্রমিকদের নিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁদের কর্মস্থলে বা আশ্রয়স্থলেই যাতে তাঁদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা আপাতত করা যায়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুর কমিশনারকে। অত্যাবশ্যক জিনিসপত্র জোগাড় করতে যাতে তাঁদের সমস্যা না হয়, তার জন্য নিয়োগকারীরা আপাতত যাতে শ্রমিকদের রোজ মজুরি দিতে থাকেন, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে পুর কমিশনারকে।
হুমায়ুন রোডের বাংলোয় বসে সারা দিনই ফোনে ব্যস্ত লোকসভায় বিরোধীপক্ষের প্রধান নেতা অধীর চৌধুরী। সামলাচ্ছেন বাংলার বাইরে আটকে পড়া বাঙালিদের অভাব-অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: নয়াবাদের করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি
রাজ্য সরকারের হস্তক্ষেপে বিভিন্ন রাজ্যে আটকে থাকা বেশ কিছু বাঙালি শ্রমিক যে ইতিমধ্যেই সুরাহা পেয়েছেন, সে খবর সামনেও এসেছে ইতিমধ্যেই। মহারাষ্ট্রে আটকে থাকা ৭৮৫ জন বাঙালি শ্রমিকের থাকা-খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ছেলে তথা মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে টুইট করে জানিয়েছেন যে, সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনের কাছ থেকে ফোনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা পান তিনি। তার পরেই ওই শ্রমিকদের থাকাখাওয়ার ব্যবস্থা করেন। ডেরেক আবার রিটুইট করেছেন আদিত্যর সেই টুইটটাকে। বাংলার যে যেখানে আটকে রয়েছেন, সেখানেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে রাজ্য সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন।
বাইরে আটকে থাকা বাঙালিদের জন্য নিরন্তর খেটে চলেছেন আরও এক জন। তিনি লোকসভায় বিরোধী পক্ষের প্রধান নেতা তথা বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে নয়াদিল্লির হুমায়ুন রোডের বাংলোতেই বন্দি অধীর। কিন্তু তাঁর ফোন থামছে না। কেউ ওড়িশা থেকে, কেউ উত্তরপ্রদেশ থেকে, কেউ ঝাড়খন্ড থেকে, কেউ মহারাষ্ট্র থেকে, কেউ তামিলনাড়ু থেকে, কেউ অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে, কেউ উত্তরাখন্ড থেকে— নিরন্তর ফোন করে চলেছেন অধীরকে। একটা কল শেষ করে ফোন টেবিলে নামানোর সুযোগ পাচ্ছেন না, আর একটা কল ঢুকে যাচ্ছে। অধীর মন দিয়ে শুনছেন সবার কথা। কোন ঠিকানায় আটকে, কোন থানা, কোন রাজ্য, ক’জন আটকে, সব জানছেন। যোগাযোগের নম্বর এবং নাম নোট করে নিচ্ছেন। তার পরে সময় মতো সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার বা জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সুরাহার ব্যবস্থা করছেন।
রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনও গৃহবন্দি। কিন্তু তিনিও সারা দিন ফোন নিয়েই ব্যস্ত। সামলাচ্ছেন বিভিন্ন রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সমন্বয়ের কাজ। নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: নয়াবাদের করোনা-আক্রান্ত বৃদ্ধের শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি
অধীরের এই উদ্যোগে বিভিন্ন রাজ্যে ফলও পেয়েছেন অনেকেই। সে কথা যত ছড়াচ্ছে, ততই নিবেদনের পাহাড় জমছে। ফোন ক্রমশ আরও ব্যস্ত হয়ে উঠছে।
করোনা আক্রান্ত কণিকা কপূরের পরোক্ষ সংস্পর্শের জেরে সংসদের আর এক বাঙালি নেতাও দিল্লিতে গৃহবন্দি। তিনি ডেরেক ও’ব্রায়েন, রাজ্যসভার তৃণমূল দলনেতা। হোম কোয়রান্টিনে রয়েছেন। কিন্তু অধীরের মতোই নিরন্তর ফোনে ব্যস্ত তিনিও। দল যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা পালন করার জন্য দিল্লির রাজনীতিতেই বেশি সময় দিতে হয় ডেরেককে। আর সেই সুবাদেই প্রায় সব রাজ্যে রাজনৈতিক যোগাযোগও রয়েছে তাঁর। সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে দিল্লি থেকে সমন্বয়ের কাজটা অনেকটাই দেখছেন ডেরেক। ভিন্রাজ্যে যাঁরা আটকে রয়েছেন, তাঁদের বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে বা অন্য কোনও রাজনৈতিক স্তরে যোগাযোগ করছেন ডেরেক।
কিন্তু যে কারণেই হোক না কেন, অনেক দিন পরে তো এই ভাবে টানা সপ্তাহ তিনেক ঘরে থাকার সুযোগ মিলল। পরিবারের সঙ্গে একটু ‘কোয়ালাটি টাইম’ কাটাচ্ছেন না? ডেরেক বলছেন, ‘‘এই মুহূর্তে অন্য কিচ্ছু ভাবার সময় নেই। বাংলার অনেকে বাংলার বাইরে আটকে রয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এখন তাঁদের পাশে দাঁড়ানোটাই মূল কাজ। সেই কাজটা ছাড়া আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবছি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy