Advertisement
২৮ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

‘এটাও অভিযান, ঘরে বসে থাকলেই সামিট’

২০১৭ সালে পাপুয়া নিউ গিনির সর্বোচ্চ কারস্টেনৎজ় শৃঙ্গ জয় করে পাঁচ দিন পাহাড়ি ক্যাম্পে আটকে ছিলেন সপ্তশৃঙ্গজয়ী ও সপ্ত আগ্নেয়গিরিজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

স্বাতী মল্লিক
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০২০ ০৬:৫৮
Share: Save:

আট হাজারি ধৌলাগিরি অভিযানে সামিট পুশে বেরিয়েও মাঝপথেই ফিরে আসতে হয়েছিল মলয় মুখোপাধ্যায়কে। সহ-অভিযাত্রী বসন্ত সিংহরায় এবং দেবাশিস বিশ্বাসের অপেক্ষায় টানা দেড় দিন একা কাটিয়েছিলেন সামিট ক্যাম্পে। উৎকণ্ঠার প্রহর গুনতে গুনতেই দেখেছিলেন, আট ফুট দূরে দাঁড়ানো দাওয়া শেরপা অকস্মাৎ খাদে তলিয়ে গেলেন! ২০১৩ সালের সেই অভিযানেই ফেরার পথে সারা রাত খোলা আকাশের নীচে কাটাতে হয়েছিল বসন্তবাবুকে। একা। আঙুলে ফ্রস্টবাইট নিয়ে কোনও ক্রমে বেঁচে ফেরেন বিধ্বস্ত এভারেস্টজয়ী।

২০১৭ সালে পাপুয়া নিউ গিনির সর্বোচ্চ কারস্টেনৎজ় শৃঙ্গ জয় করে পাঁচ দিন পাহাড়ি ক্যাম্পে আটকে ছিলেন সপ্তশৃঙ্গজয়ী ও সপ্ত আগ্নেয়গিরিজয়ী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। হেলিকপ্টারের অপেক্ষায় গহীন অরণ্যঘেরা সেই দুর্গম পাহাড়ে মানুষ বলতে ছিলেন শুধু তাঁরা চার জনই। সীমিত যোগাযোগ, খাবার তলানিতে, হাঁটাচলায় নিষেধাজ্ঞা, আগুন জ্বালালে হিংস্র আদিবাসীদের হাতে অপহৃত হওয়ার আশঙ্কা— সব মিলিয়ে অভাবনীয় পরিস্থিতি। বাঁচার তাগিদে সে সময়ে ফেলে দেওয়া পুরনো সসেজের প্যাকেট ইঁদুরের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছিলেন।

করোনার জেরে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। দফায় দফায় বাড়ছে তার সময়সীমা। ক্রমেই গভীর হচ্ছে আর্থিক মন্দা, হতাশা। রয়েছে লকডাউনের নিয়মবিধি না-মানার প্রবণতাও। তবে পর্বতারোহীরা জানাচ্ছেন, এমন বন্দিদশা তাঁদের কাছে নতুন কিছু নয়। অভিযানে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাঁবু-বন্দি বা দুর্গম গিরিপথে আইসোলেশনে থাকার অভিজ্ঞতা তাঁদের ভূরি ভূরি। ‘‘ব্যাপারটা পুরোটাই মানসিক। আমি আগে শুধু রাতে ঘুমোতে বাড়ি ফিরতাম। সেই আমিই দেড় মাস হাওড়ার ছোট্ট ফ্ল্যাটের বাইরে বেরোইনি। ভেবে নিয়েছি, এটাও একটা অভিযান। যেখানে সচেতন হয়ে ঘরে বসে থাকলে তবেই সামিট হবে।’’— বলছেন এভারেস্টজয়ী মলয়।

বাইরে বেরোলে সংক্রমণের আশঙ্কার মতোই অভিযানে গিয়ে বন্দিদশার নিয়ম না-মানার অর্থ যে সাক্ষাৎ মৃত্যু, তা বারবার উপলব্ধি করেছেন পর্বতারোহীরা। কী ভাবে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেন তখন?

ইন্ডিয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলীয় শাখার চেয়ারম্যান দেবরাজ দত্তের কথায়, ‘‘২০১৩ সালে সিয়াচেনের কাছে মাউন্ট প্লেটো অভিযানে গিয়ে খারাপ আবহাওয়ার কারণে টানা সাত দিন তাঁবু ছেড়ে বেরোনো যায়নি। ছোট্ট তাঁবুতে তিন জন গাদাগাদি করে থাকতাম। মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকতে রান্না করতাম। এ ছাড়া, আড্ডা, গান, ডায়েরি লেখা, রেডিয়ো শোনা তো আছেই।’’

সত্যরূপ আবার শুনিয়েছেন আন্টার্কটিকায় ঝড়ের মধ্যেও সহযোদ্ধার নিশ্চিন্তে ঘুমের গল্প। তাঁর কথায়, ‘‘আন্টার্কটিকার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফে গিয়ে ভয়ঙ্কর ঝড়ে দু’দিন তাঁবু-বন্দি ছিলাম। বাইরের ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাঁবুর কাপড় কাঁপছে, সানগ্লাসটাও দুলছে— স্লিপিং ব্যাগে শুয়ে এ সবই দেখতাম। যখন মনে হচ্ছে তাঁবু এ বার ভেঙে উড়ে যাবে, তখনও দিব্বি নাক ডেকে ঘুমোচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের সহ-অভিযাত্রী! ওঁকে দেখে মনে বল এসেছিল।’’ ২০০৭ সালে কামেট অভিযানে ২০-২২ দিনের লম্বা অজ্ঞাতবাসে পেম্বা শেরপার মধ্যে আবার আপনজনকে খুঁজে পেয়েছিলেন মলয়। যে সম্পর্ক অটুট ছিল ‘পেম্বাজি’র মৃত্যুর আগে পর্যন্ত।

তবে পাহাড়ের চেয়ে সমতলের এই আইসোলেশন কতটা আলাদা?

সত্যরূপের উপলব্ধি, ‘‘তাঁবুর বদলে বাড়িতে থাকাটাই বিশাল ব্যাপার। পাহাড়ে তো অভিযানের ভবিষ্যৎ কী, বেঁচে ফিরব কি না সে উৎকণ্ঠাও থাকে।’’ আপাতত শরীরচর্চা, বই লেখা, ভিডিয়ো কলে ‘পেপ টক’ দেওয়ার মতো কাজে নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন বাংলার পর্বতারোহীরা। দেবরাজের মতো কেউ কেউ আবার দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে সরাসরি পথে নেমেছেন।

তবে তালাবন্দি দেশে মনোবল বাড়ানোর পরিকল্পনা করার পরামর্শ দিচ্ছেন পর্বতারোহীরা। সত্যরূপ-দেবরাজদের যুক্তি— ‘‘বন্দিদশা নয়, বরং এই লকডাউনকে জীবনের একটা সুযোগ হিসেবে দেখুন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy