চার শ্মশানবন্ধু। নিজস্ব চিত্র
করোনায় মৃত্যু হলে সৎকারের সময়ে সে ভাবে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারছেন না পরিজন। এ সব দেখে খারাপ লাগত ওঁদের। তাই করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে এলে, নিজেরাই ফুল-মালা কিনে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন পূর্ব বর্ধমানে কালনা শ্মশানের চার কর্মী। দেহ চুল্লিতে তোলার আগে মৃতের জন্য প্রার্থনাও করছেন তাঁরা।
কালনা পুরসভার শ্মশানঘাটে রমেশ মল্লিক, রাজা মল্লিক, সঞ্জিত মল্লিক ও নন্দ মল্লিক সৎকার-কর্মী (ডোম) হিসেবে কাজ করেন। রাজা ও রমেশ স্থায়ী কর্মী। অন্য দু’জন রয়েছেন ঠিকাকর্মী হিসেবে। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত প্রায় একশো করোনা আক্রান্তের দেহ সৎকার হয়েছে এই শ্মশানে। রাত বাড়লেই দেহ আনা হয়। ঝটপট পিপিই পরে কাজে নেমে পড়েন ওই চার জন। দেহ গাড়ি থেকে নামানোর ফাঁকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীর কাছে রাখা ফুল-মালা নিয়ে আসেন। দেহের উপরে তা রেখে প্রার্থনা করেন। তার পরে নিয়ে যান চুল্লিতে। সৎকার শেষ না হওয়া পর্যন্ত চার জনই দাঁড়িয়ে থাকেন চুল্লির কাছে।
রাজা, সঞ্জিতেরা জানান, এখন গড়ে প্রতি রাতে করোনায় মৃত দু’তিনটি দেহ আসে। দেহ পিছু ফুল-মালা কিনতে ৬০-৭০ টাকা খরচ হয়। তা নিজেরাই ভাগ করে মেটান তাঁরা। বেশিটা বহন করেন রমেশ ও রাজা। কেন এই উদ্যোগ? রমেশরা বলেন, ‘‘খবরে প্রায়ই দেখছি, করোনায় মৃতদের দেহ নদীতে ভেসে যাচ্ছে। কোথাও আবার মৃতদেহ টানাহ্যাঁচড়া করছে কুকুর-শেয়ালের দল। এ সব দেখেই ঠিক করি, আমরা প্রতিটি দেহকে শ্রদ্ধা জানাব। যত দিন করোনায় মৃতদের দেহ সৎকারের দায়িত্ব থাকবে, এটা করে যাব।’’ সঞ্জিত, নন্দের কথায়, ‘‘করোনায় মৃত্যু হলে প্রশাসন সৎকারের ব্যবস্থা করছে। বাড়ির লোকজন থাকতে পারছেন না। প্রিয়জনকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর সুযোগ থাকছে না তাঁদের। তাই আমরা সাধ্যমতো মৃতকে সম্মান জানানোর ব্যবস্থা করছি। এই কাজ করার সময়ে নিজেদের মৃতের পরিবারের সদস্য বলে মনে হয়।’’
কালনায় করোনায় মৃত এক ব্যক্তির ছেলে বলেন, ‘‘বাবাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে পারিনি। কিন্তু শ্মশানে কর্মীরা ফুল-মালা দিয়েছেন শুনে কিছুটা সান্ত্বনা পেয়েছি।’’ ওই শ্মশানঘাটের কর্মী প্রদীপ স্বর্ণকার বলেন, ‘‘ওঁদের চার জনের আন্তরিকতায় আমরা মুগ্ধ। রাতে ওঁরা যে ভাবে ফুল জোগাড় করে শ্রদ্ধা জানিয়ে পরম যত্নে দেহগুলি সৎকার করেন, তা সাধুবাদের যোগ্য।’’ কালনার বিধায়ক দেবপ্রসাদ বাগ বলেন, ‘‘এই কাজের কথা শুনে মন ভরে গিয়েছে। দেশের নানা প্রান্তে যখন করোনায় মৃতদের দেহ নিয়ে বিভিন্ন অমানবিক দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, সেই সময়ে ওঁদের এই উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাই। ওঁদের পুরস্কৃত করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy