ফাইল চিত্র।
শুধু নির্দিষ্ট কিছু নিয়মবিধি পালনের নির্দেশিকা জারি করলেই কাজ শেষ হবে না। অতিমারি রুখতে হলে জনগণের মধ্যে সচেতনতার প্রসার জরুরি বলে বরাবরই জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞ-চিকিৎসকেরা। এই বিষয়ে কলকাতার আট চিকিৎসকের একটি গবেষণা দেখিয়েছে, সচেতনতা কত দূর প্রসারিত হচ্ছে, তার জন্য নিয়মিত সমীক্ষা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া বা সমাজমাধ্যমকেই সমীক্ষার হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তাঁরা।
ওই গবেষকেরা জানান, নিয়মিত সমীক্ষা থেকেই যাচাই করা সম্ভব, সমাজের কোন স্তরে কতটা সচেতনতা প্রসারের জোর দেওয়া দরকার এবং কী কী পদক্ষেপ জরুরি। গবেষণাপত্রটি গত এপ্রিলে ‘জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক রিসার্চ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র বিশেষ স্বীকৃতিও পেয়েছে সেটি। ঠাঁই পেয়েছে হু-র কোভিড ‘গ্লোবাল লিটারেচার’ তালিকায়।
গত বছর অতিমারির শুরুতে লকডাউন ঘোষণার পরেই গবেষণা শুরু করেন পিয়ারলেস হাসপাতালের আট চিকিৎসক— শুভ্রজ্যোতি ভৌমিক, সক্ষম পারোলিয়া, শুভম জানা, দেবারতি কুণ্ডু, সুজিত করপুরকায়স্থ, কৃষ্ণাংশু রায়, নীনা দাস ও অশোককুমার মণ্ডল। শুভ্রজ্যোতি জানান, ১০টি প্রশ্ন ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়্যাটসঅ্যাপেরমাধ্যমে এক হাজার জনের কাছে পাঠানো হয়েছিল। প্রশ্নগুলিকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছিল। প্রথমত, কোভিড সম্পর্কে ধারণা কী। দ্বিতীয়ত, কোভিড প্রতিরোধ সম্পর্কে কী মনোভাব। তৃতীয়ত, উত্তরদাতারা কী কী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন।
শুভ্রজ্যোতি জানান, ৩৫৫ জন প্রশ্নগুলির উত্তর দেন। তাতে দেখা যায়, মূলত শহরাঞ্চলের বাসিন্দারাই উত্তর দিয়েছেন এবং তাঁদের মধ্যে কলকাতার বাসিন্দাই বেশি। উত্তরদাতাদের বেশির ভাগেরই বয়স ১৮-৩০ বছর। চিকিৎসকদের দাবি, একেবারে প্রাথমিক স্তরে শহরাঞ্চলের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই সচেতনতার বেশি প্রসার ঘটেছিল, ওই সমীক্ষায় সেটা উঠে এসেছে। গবেষকদের মতে, তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তি ব্যবহারে বেশি দক্ষ হওয়ায় তাঁরা অধিক সংখ্যায় উত্তর দিতে পেরেছেন। গবেষকদের সিদ্ধান্ত, গ্রামাঞ্চলে স্বাস্থ্য পরিষেবা তুলনায় কম বলেই সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা কম।
শুভ্রজ্যোতি জানান, এই ধরনের সমীক্ষা এক বার নয়, অন্তত ছ’মাস অন্তর করা দরকার। তা হলেই বোঝা যাবে, সচেতনতা প্রসারে কোথায় খামতি থাকছে। গবেষণাপত্রে কিছু খামতির কথাও স্বীকার করেছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, প্রাথমিক ভাবে খুবই অল্প মানুষকে নিয়ে সমীক্ষা চালানো হয়েছে এবং লকডাউনের মধ্যে বেছে নেওয়া হয়েছিল সমাজমাধ্যমকে। তার
ফলে প্রযুক্তি ব্যবহারে সক্ষম এবং ইংরেজি ভাষা জানেন, এমন মানুষজনের উপরেই সমীক্ষা চালানো হয়েছে। তবে এই ধরনের সমীক্ষা বিস্তারিত ভাবেও করা সম্ভব বলে মনে করেন তাঁরা।
গবেষকদলের তরফে জানানো হয়েছে, দ্বিতীয় ঢেউ চলাকালীনও তাঁরা আবার বিশদ ভাবে সমীক্ষা করেছেন। সেই সমাক্ষায় প্রাপ্ততথ্য বিশ্লেষণের কাজ চলছে। তার থেকে এ বার আরও নতুন কিছু তথ্য উঠে আসতে পারে বলেও তাঁদের আশা।
শুভ্রজ্যোতি জানান, এই ধরনের সমীক্ষার উপযোগিতাকে মান্যতা দিয়েছে হু। বিভিন্ন দেশ, যাঁরা এই ধরনের গবেষণা করতে অক্ষম, তাঁদের জন্যই ওই ‘গ্লোবাল লিটারেচার’ তালিকা করা হয়। ‘‘আমরা বাঙালি হিসেবে বিশ্বের গরিব দেশগুলোর পাশে আমাদের গবেষণাপত্র নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছি, তাঁর জন্য ভাল লাগছে,’’ বলেন শুভ্রজ্যোতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy