মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ।—ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করলেও করোনা-পরিস্থিতি দেখতে রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় দলকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করার দাবি জানাল নবান্ন। বুধবার মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ জানান, কলকাতা এবং উত্তরবঙ্গে কেন্দ্রের যে দু’টি দল রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। দলগুলি কোথাও ঘুরতে চাইলে ব্যবস্থা করার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। তবে রিপোর্ট তৈরির ব্যাপারে রাজ্য যে কেন্দ্রীয় দলের কাছ থেকে নিরপেক্ষতা আশা করছে, এ দিন তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যসচিব।
কেন্দ্রের পাঠানো কলকাতার দলটি গত কাল শহরের কিছু এলাকা ঘুরে দেখলেও ঘটনাচক্রে এ দিন কোথাও যায়নি। কলকাতায় থাকা দলের প্রধান অরূপ চন্দ্র মুখ্যসচিবকে চিঠি লিখে তাঁরা রাজ্যের কাছ থেকে কী কী তথ্য চান ও কোন কোন জায়গা পরিদর্শনে যেতে চান তা সবিস্তার জানিয়েছেন। সেই চিঠি সম্পর্কে নবান্নের প্রতিক্রিয়া রাত পর্যন্ত জানা যায়নি। কার্যত ঘরবন্দি ছিল জলপাইগুড়ির দলটিও। তারা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসনের অন্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৃহস্পতিবার দলটি পরিদর্শনে বের হতে পারেন বলে জানা গিয়েছে।
সোমবার সকালে কলকাতা ও উত্তরবঙ্গে দুই কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দলের আসা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল রাজ্য। দলের প্রতিনিধিরা এই বলে অভিযোগ করেন যে, রাজ্য প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে না। এ নিয়ে দিল্লিতে রিপোর্ট পাঠান তাঁরা। তার পর মঙ্গলবার বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভাল্লার চিঠি আসে রাজীব সিংহের কাছে। তাতে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ৩৫ নম্বর ধারা ও সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক পর্যবেক্ষণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে চলতে রাজ্য বাধ্য। রাতে কেন্দ্রকে পাঠানো তাঁর জবাবে মুখ্যসচিব জানিয়ে দেন, পর্যবেক্ষক দলের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতাই করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কিট দেওয়ার নাম নেই, বদনামের চক্রান্ত: মমতা
ওই চিঠি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্মসচিব পুণ্যসলিলা শ্রীবাস্তব আজ বলেন, “পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিবকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন যে রাজ্য প্রশাসন বিপর্যয় মোকাবিলা আইন ও সুপ্রিম কোর্টের রায় মেনে চলবে।” এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘‘আশা করব ওই দলে যে প্রতিনিধিরা আছেন তাঁদের অভিজ্ঞতার ফায়দা নিতে রাজ্য সক্ষম হবে।’’
প্রশাসনিক ভাবে কেন্দ্রীয় দলের সঙ্গে সহযোগিতার পথে হাঁটলেও রাজনৈতিক ভাবে যে তারা এখনও কেন্দ্রের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট, তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। কারও নাম না-করেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মুখে বড় বড় কথা বলে বৈঠক। একে ওকে পাঠানো। আইনশৃঙ্খলা, লকডাউন দেখে এসো। খেতে পাচ্ছে কি না, স্নান করতে পারছে কি না দেখে এসো। এত বড় কড়া চিঠি দেওয়া! তা আমিও দিতে পারি।’’
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব তাঁর চিঠিতে সুপ্রিম কোর্টের যে পর্যবেক্ষণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নবান্ন। তাদের একাংশের মতে, করোনা সংক্রমণ নিয়ে প্রকাশিত খবর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজের নিজের রাজ্যে ফেরত পাঠানো নিয়ে দায়ের হওয়া মামলার প্রেক্ষিতে শীর্ষ আদালত বলেছিল, কেন্দ্রের নির্দেশ রাজ্যগুলি মেনে চলতে বাধ্য। এর সঙ্গে রাজ্যে কেন্দ্রীয় দল পাঠানোর কোনও সম্পর্ক নেই। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণের অপব্যবহার করছে বলেই নবান্নের ওই অংশের অভিমত। মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায় উল্লেখ করা হয়েছে। আমরা সুপ্রিম কোর্টের কাছে কৃতজ্ঞ। কারণ তা ছিল পরিযায়ী শ্রমিক এবং ভুয়ো খবরের ব্যাপারে। এর বেশি কিছু বলব না। খুঁজে বের করুন কী চলছে, কী হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: আপাতত ঘরই মন্দির, মসজিদ, গুরুদ্বার: মমতা
তা হলে ‘অসন্তোষ’ সত্ত্বেও কেন সহযোগিতার পথে হাঁটল নবান্ন। নবান্ন সূত্রের ব্যাখ্যা, মুখ্যসচিব কেন্দ্রের নির্দেশ না-মানার কথা বললে তাঁকে বিপদে পড়তে হত। কারণ বিপর্যয় মোকাবিলা আইন অনুযায়ী, রাজ্যের কোনও আমলা যদি অসহযোগিতা করেন তা হলে তাঁকে গ্রেফতার পর্যন্ত করা যেতে পারে। আর রাজ্য কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করলে বা বাধা দিলে রাজ্যে সেনা বা আধা সেনা নামাতে পারে কেন্দ্র। তাই সাহায্যের কথা বলার সঙ্গে নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহের কাঁটাটিও বিঁধিয়ে রেখেছে রাজ্য।
মুখ্যসচিবের কথায়, ‘‘(ওঁরা) যাঁদের সঙ্গে ইচ্ছা কথা বলতে পারেন। নেগেটিভ বা পজ়িটিভ কী স্টোরি তাঁরা সংগ্রহ করবেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। তবে আমরা বিশ্বাস করি না যে, এক জন সরকারি অফিসার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবেন না। রাজ্য বা কেন্দ্র, যারই দল হোক না কেন, আশা করি নিরপেক্ষতা থাকবে। কেন্দ্রীয় দলও আশা করব নিরপেক্ষ অবস্থান নেবে রিপোর্ট তৈরির সময়।’’
এরই মাঝে আজ মুখ্যসচিবকে চিঠি পাঠিয়ে কলকাতায় থাকা কেন্দ্রীয় দলের নেতা অরূপ চন্দ্র রাজ্যে করোনা পরীক্ষা সম্পর্কে সবিস্তার তথ্য চেয়েছেন। কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ২৪ পরগনা ও পূর্ব মেদিনীপুর— এই চার জেলায় কতগুলি নজরদারি টিম কাজ করছে এবং প্রতিদিন হটস্পট ও কন্টেনমেন্ট জ়োনে কত জনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, তা জানাতে বলেছেন তিনি। জানাতে বলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই, মাস্ক বিতরণের খুঁটিনাটি এবং হাসপাতাল, আইসোলেশন সেন্টার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিস্থিতিও। কোনও রোগী করোনায় মারা গিয়েছেন কি না, তা রাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি কী ভাবে নির্ধারণ করছে, তা-ও জানতে চেয়েছেন তিনি।
অরূপবাবু আরও জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গী করে চার জেলার বেশ কিছু হটস্পট, বাজার এলাকা, কোয়রান্টিন সেন্টার ঘুরে দেখতে চান তাঁরা। বাছাই করা জায়গার একটি তালিকাও চিঠির সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy