প্রতীকী ছবি।
আচমকাই শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল বছর পঞ্চাশের ব্যক্তির। পরিচিত চিকিৎসক পরামর্শ দেন, অবিলম্বে অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। হাজারো খোঁজ করেও রাতে কোনও হাসপাতালের ব্যবস্থা করতে পারলেন না প্রৌঢ়ের পরিজন। অগত্যা সিদ্ধান্ত নিলেন, বাড়িতেই অক্সিজেন দিয়ে কোনও মতে রাতটা কাটাবেন। কিন্তু অক্সিজেন সিলিন্ডার মিলবে কোথায়?
প্রায় সারা রাত ধরে একের পর এক ফোন ঘুরিয়ে, এমনকি শহরের বিভিন্ন জায়গায় হন্যে হয়ে খোঁজ চালিয়েও সিলিন্ডার জোগাড় করতে পারেননি ওই প্রৌঢ়ের পরিজন। অগত্যা শেষমেশ ভাগ্যের উপরেই পুরো বিষয়টি ছেড়ে দিয়েছিলেন। করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে এমন ঘটনার সাক্ষী থাকছেন অনেকেই। প্রতিবেশী রাজ্যগুলির মতো বঙ্গের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেনের ঘাটতি এখনও দেখা দেয়নি ঠিকই। তবে পোর্টেবল অক্সিজেন সিলিন্ডার প্রায় ‘শূন্য’ হয়ে গিয়েছে খোলা বাজার থেকে। আগে বিভিন্ন ওষুধের দোকানেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ভাড়া পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তার আকাল দেখা দিয়েছে। সব দেখে দেখেশুনে চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, ‘‘যে ভাবে দৈনিক সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে ঠিক মতো অক্সিজেনের জোগান না-থাকলে বঙ্গেও এক সময়ে চূড়ান্ত সমস্যা
দেখা দেবে।’’
ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও অক্সিজেন সরবরাহ যাতে ঠিকঠাক থাকে, তার আবেদন জানিয়েছেন। এ দিন অক্সিজেনের বিষয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, এ রাজ্যের সরকারি, আধা-সরকারি বা বেসরকারি ক্ষেত্রে উৎপন্ন অক্সিজেন যাতে বাইরে না নিয়ে যাওয়া হয়, তার জন্য কেন্দ্রকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
গত বছরের থেকে এ বারে প্রতিটি হাসপাতালেই অক্সিজেনের চাহিদা কয়েক গুণ করে বেড়েছে। আগামী দিনে আরও সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলে তার সঙ্গেই সঙ্কটজনক রোগীও বাড়বে, তখন দৈনিক কত টন অক্সিজেন লাগবে, সেটাই ভাবাচ্ছে স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদেরও। অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি জানাচ্ছেন, বাড়িতে সামাল দেওয়ার মতো অক্সিজেনের আকাল মেটাতে হলে অবিলম্বে রাজ্যে ২-৩ হাজার সিলিন্ডার প্রয়োজন। তিনি বলেন, ‘‘কিন্তু তা সম্ভব হচ্ছে না। উত্তর ভারতে ওই সমস্ত সিলিন্ডার প্রস্তুতকারী সংস্থা রয়েছে। রাজ্যের ছোট ডিলাররা অর্ডার দিলেও সিলিন্ডার সরবরাহ হচ্ছে না।’’
তাঁর মতো অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরও ব্যবসায়ীরা তাঁদের অসহায়তার কথা স্বীকার করছেন। দমদমের এক অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থার কাছে ৭০০-৮০০র মতো সিলিন্ডার ছিল। এখন সেই ভাঁড়ারও প্রায় শেষ। সংস্থার কর্তা আরিয়ান সাউ বলেন, ‘‘গতবারে দিনে ১০০-২০০টি ফোন আসত। এ বারে দিনে দু’হাজার ফোন আসছে। কোথা থেকে এত জনকে দেব! তাও চেষ্টা চালাচ্ছি।’’ পরিস্থিতি এতটাই ভয়ঙ্কর যে, বাণিজ্যিক সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের ফোনও ঘনঘন বেজে উঠছে। খুব পরিচিত হলে তাঁদের জন্য চেষ্টা করে কিছু ব্যবস্থা করতে পারলেও সকলের জন্য না পারার আক্ষেপ রয়েছে অনেকেরই। যেমন আর এক ব্যবসায়ী মাধব বণিক বলেন, ‘‘ভয়ঙ্কর চাহিদা মেডিক্যাল অক্সিজেনের। আমার বাণিজ্যিক সিলিন্ডারের ব্যবসা জেনেও লোকে ফোন করছেন। কোথায় এত পাব? রাতে বাড়ি ফিরে ভয়ে ফোনে বন্ধ করে দিই।’’ পরিস্থিতি এতই জটিল যে, অনেকে বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে রাখছেন। ৮-১০ হাজার টাকা খরচ পড়ে ১০ লিটারের অক্সিজেন সিলিন্ডার ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে। উত্তর কলকাতার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘অক্সিজেনের জোগানে সমস্যার আশঙ্কা থেকে কিছু বড় হাসপাতাল, আবার কেউ ব্যক্তিগত ভাবে কিনে নেওয়াতে সমস্যা হচ্ছে।’’
গতবারের থেকে দ্বিতীয় ঢেউয়ে কিছু রোগীর খুব দ্রুত শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন সংক্রমণ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায়। তিনি বলেন, ‘‘রোগীর সংখ্যা বাড়ছে বলেই অক্সিজেনের চাহিদাও বাড়ছে। তবে বাড়িতে সিলিন্ডার নিয়ে কোনও লাভ নেই। তাতে সময় নষ্ট হয়।’’ একই মত প্রকাশ করে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বান দলুই বলছেন, ‘‘করোনা চিকিৎসায় দু’টি মূল থেরাপি হল, অক্সিজেন ও স্টেরয়েড। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে অক্সিজেনের মাত্রা অনেকটা কমলেও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে না। কিন্তু বুকের সিটি স্ক্যানে বা এক্সরে-তে দেখা যাচ্ছে নিউমোনিয়া ছড়িয়েছে। তখন বাড়িতে শুধু অক্সিজেন দিলে হবে না। স্টেরয়েড দিতে হবে। তার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়ে উপযুক্ত পর্যবেক্ষণে থেকে স্টেরয়েড ও অক্সিজেন চালাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy