Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Alphabet

Education: এবিসি ভুলেছে দ্বিতীয় শ্রেণি, বোর্ডে বাংলা অক্ষর দেখে লিখতে গিয়ে হোঁচট তৃতীয় শ্রেণির!

একটি বেসরকারি সংস্থা সমীক্ষা করে সম্প্রতি জানিয়েছিল, প্রায় দু’বছরের করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় মারাত্মক পিছিয়ে পড়েছে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। সেই সমীক্ষা-রিপোর্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

স্কুলে ফেরার আনন্দে। সিউড়িতে বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কুলে ফেরার আনন্দে। সিউড়িতে বুধবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৬:৫৫
Share: Save:

নানান মাপের কচি পায়ের চঞ্চল ছন্দে আগমন। ফুলে-বেলুনে-চন্দনে তাদের বরণ-অভ্যর্থনা। তার পরে পঙ্‌ক্তিবদ্ধ প্রার্থনা। বুধবারের সকালে এ-পর্যন্ত এক সুরে বাঁধা ছিল প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে প্রাথমিকের স্কুলে ফেরার পর্ব।

তাল কাটল ক্লাস শুরু হতেই। শিক্ষক-শিক্ষিকারা দেখলেন, যে-পড়া সেরে ফেলার কথা প্রাক্‌-প্রাথমিকে, এখন সেটা পড়াতে হচ্ছে দ্বিতীয় শ্রেণির অনেক ছাত্রছাত্রীকে! লিখতে দিয়ে তাঁরা দেখলেন, এবিসিডি ভুলে গিয়েছে দ্বিতীয় শ্রেণির পড়ুয়াদের অনেকেই। তৃতীয় শ্রেণির বহু পড়ুয়া ব্ল্যাক বোর্ড দেখে বাংলা লিখতে গিয়ে হোঁচট খাচ্ছে বার বার। অতিমারিতে ‘লার্নিং গ্যাপ’ বা ‘শিক্ষা-ফাঁক’ যেন একটা ভয়াবহ ফাটলের রূপ নিয়েছে। নবপর্যায়ে পাঠ শুরুর আনন্দে ছায়া ফেলেছে সেই ফাটল আর উদ্বেগ।

একটি বেসরকারি সংস্থা সমীক্ষা করে সম্প্রতি জানিয়েছিল, প্রায় দু’বছরের করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকায় পড়াশোনায় মারাত্মক পিছিয়ে পড়েছে প্রাথমিকের পড়ুয়ারা। সেই সমীক্ষা-রিপোর্ট দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এ দিন প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুল খুলে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার পরে দেখা গেল, সমীক্ষা-রিপোর্টের আশঙ্কাই ঠিক। অনেক স্কুলের খুদেরা ভুলে গিয়েছে তাদের শ্রেণির পড়া। অগত্যা পুরনো পড়া ফের ঝালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

মেট্রোপলিটন স্কুলে দেখা গেল, শিক্ষিকা নন্দিনী মাইতি ব্ল্যাকবোর্ডে ছোট ও বড় হাতের এবিসিডি লিখতে দিয়েছেন। খুব কম পড়ুয়াই ছোট হাতেরটা লিখতে পারল। শিক্ষিকারা জানালেন, এবিসিডি মোটেই দ্বিতীয় শ্রেণিতে শেখার কথা নয়। এটা প্রাক্‌-প্রাথমিকের পড়া। পাশেই চলছিল প্রথম শ্রেণির বাংলার ক্লাস।

সেখানেও দেখা গেল, পুরনো ক্লাসের পড়া ঝালিয়ে নিচ্ছেন বাংলার শিক্ষিকা হীরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমরা নিয়মিত অনলাইন ক্লাসও করেছি। কিন্তু এখন স্কুল খোলার পরে বোঝা যাচ্ছে, অনলাইন ক্লাস এত ছোট পড়ুয়াদের বিশেষ কাজে আসেনি।”

এই বিবর্ণ ছবির মধ্যে প্রথম দিনের হাজিরা উল্লেখ করার মতো। প্রাথমিকে হাজিরার হার ছিল ৭৩.৩৩%, উচ্চ প্রাথমিকে ৬০.৭৩%। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্য জুড়ে প্রাথমিকে উপস্থিতির হার খুব ভাল।” অনেক খুদে পড়ুয়া এ দিনই প্রথম স্কুলের দরজা ডিঙোল। উল্টোডাঙার মুরারিপুকুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের প্রথম শ্রেণির পড়ুয়া অভিজিৎ ঘোষ প্রথম স্কুলে এসেছে মায়ের হাত ধরে। নতুন নতুন বন্ধু হওয়ায় সে খুব খুশি। অভিজিতের মা সুমনাদেবী বলেন, “কবে স্কুল খুলবে, সে-দিকেই তাকিয়ে ছিলাম।” চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া জয় চৌধুরী বলল, “পাড়ায় শিক্ষালয়ের ক্লাস করছিলাম। তবে স্কুলে ফিরতে পেরে খুব খুশি হয়েছি।”

কোভিড বিধি মানতে অনেক স্কুলই সব শ্রেণিকে একসঙ্গে আনেনি। যোধপুর পার্ক বয়েজ স্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিত সেন মজুমদার জানান, তাঁরা এনেছেন প্রাক্‌-প্রাথমিক, প্রথম ও পঞ্চম শ্রেণিকে। ষষ্ঠ ও সপ্তমের মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণিকে স্কুলে আনা হয়েছে। অমিতবাবু জানান, স্কুলে পোস্টার আঁকা, স্লোগান প্রতিযোগিতাও হয়েছে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের মধ্যে।

এ দিন অনেক স্কুলেই কোভিড বিধি মানা সম্ভব হয়নি বলে অভিযোগ উঠছে। সব স্কুলের গেটে থার্মাল গান দিয়ে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। কিছু স্কুলে এত বেশি পড়ুয়া চলে আসে যে, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে সকলকে ক্লাসে বসানো সম্ভব হয়নি বলেও অভিযোগ।

হিন্দু স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, সকালের প্রাথমিকের ছুটি এবং দিবা বিভাগের ক্লাস শুরুর মুখে পড়ুয়াদের গা ঘেঁষাঘেষি ভিড়। এক অভিভাবক জানান, সব সেকশনে শিক্ষক ছিলেন না। ফলে চঞ্চল পড়ুয়ারা পারস্পরিক দূরত্ব রক্ষার রাস্তায় হাঁটেনি।

জেলার প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের উৎসাহ ছিল ভালই। উত্তরের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক স্কুলগুলিতে ফুল, চকলেট উপহার এবং চন্দনের ফোঁটা দিয়ে পড়ুয়াদের স্বাগত জানানো হয়। মালদহের জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারপার্সন বাসন্তী বর্মণ গাজলের একটি স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে মিড-ডে মিল খান। পড়ুয়াদের মিষ্টি খাওয়ানো হয় বীরভূমে সাঁইথিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরের দু’টি প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের মধ্যে পায়েস বিলি করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বাঁকুড়ার কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, খেলাচ্ছলে স্বাস্থ্যবিধির পাঠ দেওয়া হয়েছে পড়ুয়াদের। ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবির চলায় এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুরের নারায়ণগড় ও কেশিয়াড়ির বেশ কয়েকটি প্রাথমিক স্কুলে কোনও ক্লাস হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Alphabet School Reopening
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy