কিশোর ভারতী স্টেডিয়ামে তৈরি করা হচ্ছে সেফ হোম। ফাইল চিত্র।
কোভিড সংক্রমিতের সংখ্যা যে ভাবে প্রায় প্রতিদিন লাফিয়ে বাড়ছে, তাতে এক-দু’সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হওয়ার সম্ভাবনা। সে কথা মাথায় রেখেই এই সময়ের মধ্যে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসা-পরিকাঠামোর বিস্তার এবং প্রস্তুতি তুঙ্গে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল রাজ্য।
এখন থেকে কোভিড শয্যা ও অন্যান্য চিকিৎসা-পরিকাঠামো যথাসম্ভব বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সোমবার বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে এ কথা বলা হয়েছিল। মঙ্গলবার নির্দেশ গেল সরকারি হাসপাতালগুলিতেও। একই সঙ্গে, রাজ্যে বাড়ি ফিরতে চাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ব্যবস্থাপনা করে রাখার প্রস্তুতি নিতে সব জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য।
এ দিন বাঙ্গুর, এসএসকেএম, শম্ভুনাথ পণ্ডিত, মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর, এন আর এস, ন্যাশনাল মেডিক্যাল, কে এস রায়, সাগরদত্তের মতো সরকারি হাসপাতালগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব, স্বাস্থ্যসচিব ও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, পরিকাঠামো বাড়াতে প্রত্যেক হাসপাতালকে চূড়ান্ত ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। এতে টাকা বরাদ্দ না-হওয়া, লাল ফিতের ফাঁস যে বাধা হবে না, সে বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন মুখ্য ও স্বাস্থ্যসচিব।
স্বাস্থ্য-কর্তারা জানাচ্ছেন, আগামী দিনে সংক্রমণ কতটা বাড়বে, তা অনুমান করে স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোও বাড়াতে হবে সমান্তরাল ভাবে। যাতে সংক্রমণ আগ্রাসী হারে বাড়লেও, তার মোকাবিলায় তৈরি থাকা যায়। এ জন্য যে কোনও পদক্ষেপে ছাড়পত্র দিচ্ছে প্রশাসনের শীর্ষমহল। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, কোভিড-বিধি উড়িয়ে যে ভাবে ভোট-প্রচারে ভিড় হয়েছে, তা সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পক্ষে অনুকূল। এ ছাড়া, আমজনতার একাংশের মধ্যে কোভিড-বিধি মানার ক্ষেত্রে ‘থোড়াই কেয়ার’ মনোভাব এখনও রয়েছে। গণ পরিবহণ জারি। গ্রাম, মফসস্ল ও শহরের মধ্যে আসা-যাওয়া অনিয়ন্ত্রিত। ফলে গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে।
সেই কারণে হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি এক-একটি সরকারি হাসপাতালের নিয়ন্ত্রণে একাধিক সেফ হোমের বন্দোবস্ত করা হচ্ছে। যাতে তেমন বাড়াবাড়ি হয়নি কিন্তু বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকার সুবিধা নেই, এমন রোগীদের সেখানে রাখা যায়। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কলকাতার হাসপাতালে রোগী না-পাঠাতে বলা হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য-কর্তাদের। চিকিৎসা-পরিকাঠামো বিস্তারে কলকাতা এবং শহরতলির অন্তত ১২টি হোটেলে ৬৫৮টি
ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে। রাজ্য
এ দিন ৬টি বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড চিকিৎসার জন্য সাময়িক ভাবে অধিগ্রহণ করেছে।
এতে সাধারণ, আইসিইউ ও এইচডিইউ মিলিয়ে মোট ৫৬৩টি শয্যা বাড়বে।
এক স্বাস্থ্য-কর্তার কথায়, “সরকার আগে থেকে প্রস্তুত থাকতে চাইছে। শিশু, মহিলা, অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসা এবং ট্রমা ওয়ার্ডগুলি এড়িয়ে কী ভাবে শয্যা বাড়ানো যায়, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। বেসরকারি হাসপাতালেও এক ছবি। অতি জরুরি চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার ছাড়া বাকি সব আপাতত স্থগিত রেখে কোভিড সামলাতে হবে। পরিকল্পনা, এই সপ্তাহের শেষে অন্তত ৮,০০০ শয্যা প্রস্তুত করা।”
পরিযায়ী কর্মীদের ফেরার বিষয়েও এখন থেকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য। তাঁদের গতিবিধির উপরে আলাদা ভাবে নজর রাখতে বলা হয়েছে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে। প্রত্যেকের জন্য কোভিড পরীক্ষা, নিভৃতবাস বা সেফ হোমের পরিকাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তৈরি করতে হবে মেডিক্যাল ক্যাম্পও। যাঁরা রাজ্যে ঢুকবেন, তাঁদের শারীরিক পরীক্ষা এবং জীবাণুনাশের ব্যবস্থা করতে হবে জেলা পুলিশ প্রশাসনকে। দূরপাল্লার পরিবহণে কী ভাবে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ আনা যায়, তা নিয়েও পরিকল্পনা করতে বলা হয়েছে পরিবহণ কর্তাদের। মহারাষ্ট্র, গুজরাত, কর্নাটক, রাজস্থান, কেরলের মতো কোভিড কবলিত রাজ্যগুলি থেকে যাঁরা ট্রেনে আসবেন, তাঁদের কোভিড পরীক্ষা বাধ্যতামূলক। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে।
এক কর্তার বক্তব্য, “গত বার কোভিডের সময়ে ভিন্ রাজ্য থেকে যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে ফিরেছিলেন, তাঁদের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তাও তখন পদ্ধতির বেশিরভাগই অজানা থাকায় সেই চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছিল প্রশাসনকে। এ বার তাই আগে থেকে গতবারের মতো প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy