Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Government of West Bengal

বাড়ছে বকেয়া, কমছে রাজস্ব, খরচে লাগাম

কোভিডের দু’টি ঢেউয়ের ধাক্কায় রাজস্ব ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে চিন্তায় রাজ্য সরকার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৫:৩৬
Share: Save:

বিপুল আর্থিক বকেয়ার দাবির মধ্যেই চলছে রাজস্ব ঘাটতির হিসেব। আর সেইমতো চলতি আর্থিক বছরে খরচের অগ্রাধিকার স্থির করার কাজ শুরু করল রাজ্য সরকার।

কোভিডের দু’টি ঢেউয়ের ধাক্কায় রাজস্ব ঘাটতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে চিন্তায় রাজ্য সরকার। চলতি আর্থিক বছরের (২০২১-২২) বাজেটে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, চলতি পরিস্থিতিতে তা পাওয়া আদৌ সম্ভব কি না, তারই বিশ্লেষণ শুরু করেছে অর্থ দফতর। হিসেব কষা চূড়ান্ত হলে তার ভিত্তিতে পূর্ণাঙ্গ বাজেটে দফতরভিত্তিক খরচের প্রস্তাব এবং অনুমতি দেওয়া হবে বলে প্রশাসনিক সূত্রের দাবি। তবে এই মুহূর্তে সরকারের অগ্রাধিকারের ক্রমতালিকায় রয়েছে কোভিড মোকাবিলা, সামাজিক ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি পূরণ এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের মতো বিষয়গুলি। রাজ্যের আর্থিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অবশ্য জানাচ্ছেন, গত আর্থিক বছরের মতো এ বারও ‘অপ্রয়োজনীয়’ খরচে রাশ টেনেই রাখবে সরকার।

প্রশাসনিক সূত্রের দাবি, গত আর্থিক বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের বকেয়ার মোট পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রের আরও দাবি, পূর্ণাঙ্গ হিসেব কষা এখনও বাকি থাকলেও চলতি আর্থিক বছরে সেই বকেয়ার পরিমাণ ৭৭ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। যদিও এই প্রশ্নে কেন্দ্র-রাজ্যের দাবি কখনওই মেলে না। তার উপরে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় গত ছ’মাসে দু’হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ খরচ করতে হয়েছে রাজ্যকে। আগামী দিনেও এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে টাকার সংস্থান রাখতে হবে। তার উপরে সামাজিক, বেতন-পেনশন এবং দৈনন্দিন জরুরি খাতে বরাদ্দগুলিকে বিবেচনায়
রাখতে হচ্ছে। এই অবস্থায় নিজেদের আয়ের উৎস নতুন করে যাচাই করতে হচ্ছে রাজ্যকে।

অর্থ-কর্তাদের একাংশের দাবি, এ বছর যতটা রাজস্ব আদায়ের অনুমান করা হয়েছিল, চলতি পরিস্থিতিতে তা আদৌ পাওয়া যাবে কি না, তাতে সন্দেহ রয়েছে। ততটা রাজস্ব পাওয়া না গেলে তার সর্বনিম্ন পরিমাণ কতটা হতে পারে, সেই অঙ্ক এখন থেকেই কষতে হচ্ছে রাজ্যকে। সেই হিসেব চূড়ান্ত হলে তার ভিত্তিতে দফতরগুলিকে খরচের অনুমতি দেওয়া হবে। এক কর্তার কথায়, “কেন্দ্রের কাছে বকেয়া সব খাতগুলি মিলিয়ে, কেন্দ্রের থেকে পাওনা আসা বা না-আসা ধরে অঙ্ক কষা চূড়ান্ত হলে বকেয়ার মোট পরিমাণ বলা সম্ভব। তবে এখনও পর্যন্ত মনে করা হচ্ছে, বকেয়া অর্থ ৭৩-৭৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করতে পারে।”

কোভিড-ধাক্কায় পূর্ণাঙ্গ লকডাউন না হলেও কার্যত তেমনই নিয়ন্ত্রণবিধি আরোপ করতে হয়েছে রাজ্যকে। ‘অপ্রয়োজনীয়’ সব গতিবিধি এবং দোকান বন্ধ। এই অবস্থায় রাজ্যের আয়ের অন্যতম উৎস আবগারির রাজস্বও কার্যত ধুঁকছে। প্রশাসনিক ব্যাখ্যায়, গত মাসে প্রায় তিন
হাজার কোটি টাকা রাজস্ব এসেছিল আবগারি থেকে। কিন্তু এ মাসে তার পরিমাণ নিতান্তই নগণ্য। এক কর্তার বক্তব্য, “দোকান খোলা থাকলে যতটা রাজস্ব আসত, তা এখন সম্ভব নয়। তবে অনলাইন গতিবিধি চালু
থাকায় এই রাজস্বের পুরোটা বন্ধ হবে না। তবে তার পরিমাণ অনেক কম হতে পারে।”

সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, ২০২০-২১ আর্থিক বছরেও রাজ্যের জিডিপি ২.৭ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে ২.৯ গুণ। সেই তত্ত্বেই ২০২১-২২ আর্থিক বছরের বাজেট প্রস্তাবে প্রায় ১১ হাজার ৯৭৩ কোটিটাকার রাজস্ব ঘাটতির অনুমান করেছিল রাজ্য। মনে করা হয়েছিল, রাজকোষ ঘাটতি হতে পারে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা। ঋণ পরিশোধ বাবদ প্রায় ৬৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ধরে রেখেছে সরকার। বেতন, মজুরি, ভাতা, পেনশন এবং অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা মিলিয়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা খরচের অনুমান রাখতে হয়েছে রাজ্যকে। কিন্তু কোভিডের দ্বিতীয় ধাক্কা সেই পরিকল্পনাকে অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছে। সেই কারণেই নতুন করে অঙ্ক কষতে হচ্ছে। প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গত আমপানের ধাক্কা যেমন অতিরিক্ত ছিল, তেমনই আসন্ন ইয়াস কতটা ক্ষতি করবে, তা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। অতীত অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, যতটা ক্ষতিই হোক, তা মেরামতে প্রাথমিক খরচ রাজ্যকেই করতে হবে। কেন্দ্রের থেকে কতটা অনুদান পাওয়া যাবে, তা পরে বোঝা যাবে। সব মিলিয়ে খরচের বোঝা ক্রমে বেড়েই চলেছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Government of West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy