ছবি পিটিআই।
এখন থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের কোভিড আক্রান্তদের রাখা যাবে বাড়িতেই। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশিকার পরে এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সারা দেশে কার্যত ‘মডেল’ হয়ে ওঠা কেরলের চিকিৎসক-গবেষকদের একাংশ কোভিড-১৯ আক্রান্তদের (যে-মাত্রারই সংক্রমণ হোক না কেন) বাড়িতে কোয়রান্টিন বা আইসোলেশন পদ্ধতির উপরে তেমন ভরসা করতে এখনও নারাজ। যদিও সংক্রমণে প্রথম পাঁচটি রাজ্যের মধ্যে থাকা মহারাষ্ট্র, গুজরাত, রাজস্থান এই নতুন নীতি মেনে চলার কথাই ভাবছে। ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ (আইএমএ)-এর গুজরাত শাখার সদস্য, জেনারেল সার্জন ভাবিন কোঠারি বলেন, ‘‘আইসিএমআরের গাইডলাইন অনুসারে উপসর্গহীন বা স্বল্প উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিরা এখন বাড়িতে থাকতে পারবেন। এত দিন অবশ্য পজ়িটিভ হলে সবাইকেই হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল।’’
কেরলের চিকিৎসকদের একাংশের বক্তব্য, বাড়িতে কোয়রান্টিনে থাকাকালীন করোনা সংক্রান্ত নিয়মবিধি (মাস্ক পরা, হাত ধোয়া বা দূরত্ব বিধি) পালন করা অনেকটাই ব্যক্তির ‘ইচ্ছে-নির্ভর’ হয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালে বা কোয়রান্টিন কেন্দ্রে প্রশাসনিক নজরদারির মধ্যে থাকতে হয়।
কেরলে নিপা ভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও তার প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেওয়া ক্রিটিক্যাল কেয়ার চিকিৎসক অনুপ কুমার বলেন, ‘‘এখানে পরীক্ষায় পজ়িটিভ জানা গেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হচ্ছে। কারণ, বাড়িতে থাকলে সংক্রমণ ছড়ানোর পুরো আশঙ্কা থাকে। এখনও পর্যন্ত রাজ্যের নীতি এটাই। আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে হয়তো পরিবর্তন হতে পারে।’’ কেরলের ক্লিনিক্যাল মাইক্রোবায়োলজিস্ট জয়ন্তীর কথায়, ‘‘বাড়িতে কোয়রান্টিনের নিয়মকানুন পালনে অনেক ফাঁক থেকে যায়।’’
আরও পড়ুন: নিয়মের রকমফেরে ধোঁয়াশা লক্ষ্মণরেখায় বন্দি শহরে
তবে চিকিৎসক শিবিরের বড় অংশের ব্যাখ্যা, নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা পাওয়া এখন বড় সমস্যা। তাই প্রাথমিক লক্ষণযুক্ত ব্যক্তিরা বাড়িতে ‘আইসোলেশন’-এ থেকে যদি সুস্থ হয়ে যান, তা হলে হাসপাতালে চাপ পড়বে না। পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসাও শুরু করা যেতে পারে। ব্রিটেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করছে।
আরও পড়ুন: ছত্তীসগঢ় থেকে হেঁটে পাঁচ দিনে শহরে
তবে বাড়িতে থাকাকালীন নিয়মবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে বলে বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। মুম্বইয়ের ‘অ্যাসোসিয়েশন অব মেডিক্যাল কনসালট্যান্ট’-এর প্রেসিডেন্ট চিকিৎসক দীপক বেদ বলেন, ‘‘উপসর্গহীন বা যাঁদের অন্য রোগ নেই (কো-মর্বিডিটি) নেই, তাঁরা বাড়িতে থাকতে পারেন। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, আলাদা শৌচাগার (যদি থাকে) ব্যবহার করা-সহ সব নিয়ম মানতে হবে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে হবে। যাতে সামান্য ফাঁকও না থাকে।’’ আইএমএ-র রাজস্থান শাখার ভাইস প্রেসিডেন্ট মহেশ পোদ্দারের কথায়, ‘‘কলোনি বা বস্তি এলাকায় বাড়িতে কোয়রান্টিন বা আইসোলেশনের সুযোগ না-থাকলে কোয়রান্টিন কেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।’’
প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির লেকচারার রামানন লক্ষ্মীনারায়ণের বক্তব্য, ‘‘সারা বিশ্বেই হোম কোয়রান্টিন হল ‘স্ট্যান্ডার্ড প্রসিডিয়োর’। তবে তার নিয়ম পুরোপুরি মেনে চলতে হবে।’’ ‘ইন্ডিয়ান ভাইরোলজি সোসাইটি’-র প্রেসিডেন্ট বিজ্ঞানী অনুপম বর্মা বলছেন, ‘‘একটা পরিবারে হয়তো এক জনের রোগের সব লক্ষণ ফুটে উঠল। তখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু পরিবারের বাকি সদস্যদের যদি কোনও লক্ষণ না থাকে, তা হলে তাঁরা বাড়িতেই থাকতে পারেন। তবে কোয়রান্টিনের সব নিয়ম পালন করতে হবে।’
কিন্তু পদে পদে শৃঙ্খলা ভাঙায় যে দেশের মানুষ বার বার সমালোচিত, তাঁরা এ ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা কতটা মানবেন, সেই প্রশ্নই ভাবাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy