সামাজিক দূরত্ববিধি শিকেয়। ছবি: পিটিআই
চতুর্থ দফার লকডাউন চলছে। তার মধ্যেই খুলে গিয়েছে বহু দোকান। ভিন্রাজ্য থেকে ট্রেনে-বিমানে ফিরছেন পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে পড়ুয়া, তীর্থযাত্রী, পর্যটকেরা। সেই সঙ্গে আমপানের (প্রকৃত উচ্চারণ উম পুন) তাণ্ডবের পরে কলকাতার কন্টেনমেন্ট জোনগুলোতে বিক্ষোভ-অবরোধ চলছে। ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং’-এর তোয়াক্কাই করছেন না শহরবাসীর একাংশ। এই সময় যদি পুলিশ-প্রশাসনের তরফে কড়াকড়ি না করা হয়, তা হলে আক্রান্তের সংখ্যা এক লাফে অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
এই সময়ে কলকাতায় কন্টেনমেন্ট জোন কমে হয়েছে ২৮৬টি। অভিযোগ, আমপানের তাণ্ডবের পর ওই সব এলাকাতে ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং’ না মেনে পথে নেমেছেন এলাকাবাসীরা। ঝড়ের আগে-পরে অনেকেই ফিরেছেন ভিন্রাজ্য থেকে। তাঁরা বাড়ি ফেরার পর আদৌ ১৪ দিন হোম কোয়রান্টিনে আছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে এলাকাবাসীদের মধ্যেই। এই পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে মঙ্গলবার রাজ্যের স্বারাষ্ট্র সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “করোনা সংক্রমিত অনেক রাজ্য থেকে বহু শ্রমিক এ রাজ্যে ফিরছেন। এটাও একটা বড় ইস্যু আমাদের কাছে।”
প্রায় ১০০টি ট্রেনে পরিযায়ীরা ফিরছেন ভিন্রাজ্য থেকে। সংক্রমিত রাজ্য থেকে ফিরছেন ওই পরিযায়ীরা। এর মধ্যে কলকাতারও বাসিন্দারা রয়েছেন। কলকাতায় ইতিমধ্যে করোনা সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা আটশো ছাড়িয়ে গিয়েছে। কো-মর্বিডিটি এবং করোনা মিলিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১৭০ ছাড়িয়ে, এ বার দু’শোর ঘরে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে করোনার সচেতনতা অনেকটাই উধাও শহর কলকাতায়।
কলকাতার উত্তর থেকে দক্ষিণ একই ছবি ফুটে উঠছে। কলকাতার ফলপট্টিতে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কারও মুখে মাস্কের কোনও বালাই নেই। উল্টে ঘেঁষাঘেঁষি করে চলছে কেনাকাটা। বাজার-দোকানেও একই ছবি। ভিড় বাড়ছে এলাকাগুলিতে। খুলে গিয়েছে চায়ের দোকান, খাবার দোকান। সেখানেই চেনা ভিড় ধরা পড়ছে। এমনকি মদের দোকানে লাইন দিয়ে কেনাটাকার মধ্যে কোথাও কোথাও নিয়ম মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।
আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্ত ৪ হাজার ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১৯৩
যেমন, হরিদেবপুর থানা এলাকার দাসপাড়া, জেমস লং সরণি ও এসপি নগর— কন্টেনমেন্ট এলাকায় দোকানপাট খুলে যাওয়ায় বাজারে বেড়েছে মানুষের ভিড়। তেমনই রাস্তাঘাটে মানুষের উপস্থিতি অনেকটাই চোখে পড়েছে। পার্ক স্ট্রিট, কড়েয়া, বন্ডেল রোড, কুষ্টিয়া রোড, তিলজলা, শিবতলা লেন, পিকনিক গার্ডেন, চক্রবেড়িয়া রোড, খিদিরপুর কমিশনারেট রোড, একবালপুর, আলিপুর রো়ড, টালিগঞ্জ, চারু মার্কেট রয়েছে কন্টেনমেন্ট জোনে। সেখানেও দূরত্ব বিধির তোয়াক্কা না করেই দোকান-বাজারে মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়েছে।
বাকি কলকাতার ছবিও খুব আলাদা নয়। উত্তর কলকাতার রবীন্দ্র সরণি, রাধাকান্ত দেব লেন, বিপিন বিহারী স্ট্রিট, রাজা মণীন্দ্র রোড, শোভাবাজার স্ট্রিট, রবীন্দ্র সরণির মতো এলাকা কন্টেনমেন্ট জোনের আওতায় রয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রচুর মানুষের ভিড় লক্ষ করা গিয়েছে গত দু’দিনে। গাড়ির উপস্থিতি এই এলাকার রাস্তায় যেমন বেড়েছে, তেমন বেড়েছে বাজারে ভিড়। দোকানও অনেক বেশি খুলতে দেখা গিয়েছে এই সব এলাকায়। একই ছবি বেলেঘাটা মেন রোড, নারকেলডাঙা মেন রোড, আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায়। তবে এই সময় যাতে কন্টেনমেন্টের নিয়ম মানা হয়, সে দিকে কলকাতা পুলিশের তরফে নজরও রাখা হচ্ছে। কলকাতা পুলিশ সূ্ত্রে জানা যাচ্ছে, রাস্তায় গাছ সরানোর পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দারা যাতে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং-এর নিয়ম মেনে চলেন, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় মাইক প্রচারও করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লকডাউন ব্যর্থ, কেন্দ্রের পরের পরিকল্পনা কী, প্রশ্ন তুললেন রাহুল
মহারাষ্ট্রে করোনা-আক্রান্তের হার রীতিমতো উদ্বেগজনক। এই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র থেকে আসছে আরও ৪১টি ট্রেন। এই ট্রেনগুলি আসবে হাওড়া স্টেশনে। পশ্চিমবঙ্গে আরও ৪১টি ট্রেন পাঠানোর কথা জানিয়েছিল মহারাষ্ট্র প্রশাসন। তাদের সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছিল রাজ্য প্রশাসন। মঙ্গলবার, রাজ্য প্রশাসন মাত্র ৩টে ট্রেন ঢোকার অনুমতি দিয়েছিল। ইতিমধ্যে ৪১টি ট্রেন এ দিনই মহারাষ্ট্র থেকে পশ্চিমবঙ্গের উদ্দেশে রওনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ২৬ তারিখ পর্যন্ত রাজ্যে কোনও ‘শ্রমিক স্পেশাল’ না পাঠানোর জন্য রেল বোর্ডকে অনুরোধ করেছে রাজ্য সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy