গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
বঙ্গে সংক্রমণের দৌড় কি স্থিতাবস্থায় পৌঁছেছে? স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিনে প্রতিদিনের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বিচার করে এ প্রশ্ন উঠতেই পারে। তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আপাতদৃষ্টিতে সূচক স্বস্তির মনে হলেও আড়ালে অস্বস্তিকর বার্তা থাকতে পারে। আর সব চেয়ে বড় কথা, মাস্ক পরা-সহ যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সামান্যতম শিথিলতা দেখা দিলেই ঘোর বিপদ।
জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহের গোড়ায় এ রাজ্যে মাত্র ন’দিনের ব্যবধানে এক হাজার থেকে দু’হাজারের ঘরে ঢুকে পড়েছিল ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা। তবে তার পর তিন হাজারের গণ্ডি অতিক্রম করতে লেগেছিল ২৬ দিন। আর তিন হাজারের ঘর অতিক্রম করলেও অগস্টে বেশিরভাগ দিনই দু’হাজার ন’শোর ঘরে আটকে ছিল প্রতি দিনের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা।
এ ছাড়া, প্রতি দিন নমুনা পরীক্ষার সংখ্যায় বৃদ্ধি হলেও সে ভাবে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়েনি। জুনে এ রাজ্যের ৫১টি ল্যাবরেটরিতে ২৪ ঘণ্টায় মাত্র সাড়ে ন’হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হত। অগস্টের শেষে স্বাস্থ্য দফতরের পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যে ৭০টি সরকারি-বেসরকারি ল্যাবরেটরি মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার পরীক্ষা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অগস্টে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের তুলনায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা বেশি হওয়ার নজিরও দেখা গিয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বঙ্গে সংক্রমণের হার থিতু হচ্ছে কি না, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছে।
(গ্রাফের উপর হোভার বা টাচ করলে প্রত্যেক দিনের পরিসংখ্যান দেখতে পাবেন।)
সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, আপাত স্বস্তির ইঙ্গিত মিললেও আচমকা আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি ঘটতে পারে। এ প্রসঙ্গে দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কর্নাটকের উদাহরণ টেনে তাঁরা জানান, সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিতে একই ধারণা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেখানে ভাইরাস ফের ঊর্ধ্বমুখী দৌড় শুরু করেছে। কমিউনিটি মেডিসিনের প্রফেসর তথা চিকিৎসক কুণাল মজুমদার বলেন, ‘‘করোনা ভাইরাসের স্বভাবই এরকম। চিন, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন— সর্বত্র আক্রান্তের সংখ্যা কমে ফের বাড়ার নজির রয়েছে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে বেড়েছে, যার ছাপ পরিসংখ্যানে পড়েছে।’’
আরও পড়ুন: ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সিরা বেশি আক্রান্ত
কিন্তু জুনের তুলনায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার পরও আক্রান্তের সংখ্যায় তেমন বৃদ্দি তো ঘটেনি। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, এই প্রশ্নের সদুত্তর পেতে হলে কোথায় এবং কাদের পরীক্ষা, তা বিশ্লেষণ করা জরুরি। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে যুক্ত এক জনস্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘উপসর্গযুক্ত সারি-আইএলআই রোগীদের খুঁজে আগের মতো নমুনা পরীক্ষা করানোর কাজ কি হচ্ছে? জ্বর-কাশির উপসর্গযুক্তদের তো র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করানো উচিত।’’
বস্তুত, জনস্বাস্থ্য আধিকারিকদের একাংশের মতে, আলিপুরদুয়ার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর— রাজ্যের সর্বত্র এক দিনে করোনা আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু কলকাতা, হাওড়ায় তো প্রতি দিনের আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। জুলাইয়ের আঠাশ তারিখ কলকাতায় প্রতি দিনের আক্রান্তের সংখ্যা আটশোর ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল। অগস্টের শেষে তা গড়ে পাঁচশোর ঘরে। বুধবারের বুলেটিন অনুযায়ী, কলকাতায় এক দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৯৩ জন। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের পরে এ দিনই প্রথম চারশোর নীচে নামল কলকাতার আক্রান্তের সংখ্যা। উত্তর ২৪ পরগনার ক্ষেত্রেও কেসের সংখ্যাবৃদ্ধি কমেছে। স্বাস্থ্য দফতরে কর্মরত এক অভিজ্ঞ এপিডিমিয়োলজিস্টের অবশ্য প্রশ্ন, ‘‘আলিপুরদুয়ারের মতো প্রত্যন্ত জেলায় যেখানে আক্রান্তের সন্ধান মিলছে, সেখানে কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়ার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এই পরিবর্তন কী ভাবে সম্ভব?’’
মঙ্গলবারের পরে দেশের মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কর্নাটক, দিল্লির পরে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। দেশের করোনা মানচিত্রে শীর্ষে থাকা প্রথম পাঁচটি রাজ্যে সংক্রমণ স্থিতাবস্থায় না-পৌঁছনো পর্যন্ত এ রাজ্যেও সেই সম্ভাবনা দেখছেন না বিজ্ঞানীরাও। ন্যাশনাল সায়েন্স চেয়ার পার্থ মজুমদার বলেন, ‘‘জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গে আর-নট ভ্যালু (এক জনের থেকে কত জন সংক্রমিত হচ্ছে) ছিল ১.৬৬। আর-নট ভ্যালু এক হলে সংক্রমণের হার স্থিতিশীল হয়েছে বলতে পারব। প্রতি দিন তিন হাজার কেস কিন্তু কম নয়।’’
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্সের অধিকর্তা তথা ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের (আইআইএসসি) প্রফেসর সৌমিত্র দাসের কথায়, ‘‘উপসর্গহীন ব্যক্তির কাছ থেকে কেউ সংক্রমিত হওয়ার সময় ভাইরাস দুর্বল অবস্থায় রয়েছে কি না তা দেখতে হবে। এ নিয়ে এখনও পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য তথ্য নেই। আনলক ফোরের পরে পরিস্থিতি কী হয়, সেটাও দেখা দরকার। ফলে স্বস্তির জায়গা নেই।’’
(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।
• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy