মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও জগদীপ ধনখড়। ফাইল চিত্র।
রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত রাজনৈতিক আক্রমণ শানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফের চিঠি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সেই চিঠিতে তিনি এক দিকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ‘জঘন্য ব্যর্থ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তেমনই বিপর্যয়ের মধ্যেও মুখ্যমন্ত্রী সংখ্যালঘু তোষণ করেছেন বলেও অভিযোগ করেছেন। যার প্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘ওঁর এই ধরনের কথার প্রতিক্রিয়া দিতেও রুচিতে বাধে!’’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল ধনখড়ের পত্র-যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বৃহস্পতিবার। মুখ্যমন্ত্রী পাঁচ পাতার কড়া চিঠি পাঠিয়ে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক ধর্ম ও শিষ্টতার গণ্ডি ছাড়িয়ে তাঁকে ও তাঁর সরকারের মন্ত্রী-আমলাদের আক্রমণ এবং রাজ্য প্রশাসনের কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছিলেন। রাতেই পাঁচ পাতার জবাবি চিঠিতে সে সব অভিযোগ অস্বীকার করে রাজ্যপাল পাল্টা মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই সাংবিধানিক রীতি না মানার অভিযোগ করেছিলেন। পাশাপাশিই জানিয়েছিলেন, তিনি আরও কিছু কথা বলবেন। সেই মতোই শুক্রবার তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন ১৪ পাতার চিঠি! যার ৩৭টি অনুচ্ছেদ মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন না করা, করোনা মোকাবিলায় ব্যর্থতা ঢাকতে নানা কৌশল নেওয়ার অভিযোগ এবং তাঁর প্রতি বিবিধ উপদেশে ঠাসা! রাজ্যপালের অভিযোগ, করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য গোপন করা বা কেন্দ্রীয় দলকে বাধা দেওয়ার মতো ঘটনা শুধু এই রাজ্যেই ঘটছে।
দ্বিতীয় দফায় দীর্ঘ চিঠি পাঠানোর পরে রাজ্যপাল টুইটে মন্তব্যে করেছেন, ‘‘রাজ্যের মানুষের কল্যাণের স্বার্থে আমি সব সময়েই সহযোগিতা করতে এবং মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে তৈরি। এখন ঐক্যবদ্ধ ভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার সময়। আশা করি, শুভবুদ্ধির উদয় হবে।’’ অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান ও বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী একই সুরে করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের গভীর সঙ্কটের সময়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার, রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানিয়েছেন সংঘাতে বিরত থাকার। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘মানুষের বিপদের কথা ভেবে এই ‘যুদ্ধ’ এখন বন্ধ রাখুন!’’
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালের পত্রযুদ্ধের ব্যাপারে সংবিধান কী বলছে?
আরও পড়ুন: বীরেন শাহ থেকে গোপালকৃষ্ণ, এমনকি তথাগত রায়ও জানতেন রাজ্যপালের এক্তিয়ার কতটুকু
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রাজ্যপাল এ দিন লিখেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি যে, পশ্চিমবঙ্গে করোনা মোকাবিলা এবং প্রতিরোধে আপনার যে জঘন্য ব্যর্থতা, সে দিক থেকে মানুষের দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যেই আপনার গোটা কৌশল রচিত হয়েছে’। রাজ্যপালের আরও অভিযোগ, ‘আপনার সংখ্যালঘু তোষণ এতই প্রকাশ্য এবং বেমানান যে, এক সাংবাদিক যখন আপনাকে নিজামউদ্দিন মরকজের ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন, তখন আপনার প্রতিক্রিয়া ছিল— আমাকে সাম্প্রদায়িক প্রশ্ন করবেন না।’
রাজ্যপাল চিঠিতে দাবি করেছেন, রাজ্যের মানুষ যখন বিপদে আছেন, সেই সময়ে তিনি রাজভবনে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। রাজ্যপালের আরও বক্তব্য, ‘রাজ্যের সব রাজনৈতিক দল সঙ্কটের সময়ে দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়ে সরকারকে সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছে। আপনিও আপনার রাজনৈতিক অ্যান্টেনা বন্ধ রাখুন, সংঘাতের মনোভাব ছেড়ে কাজেই নজর দিন’। তাঁর এবং মুখ্যমন্ত্রীর— দু’জনেরই সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব মেনে কাজ করার কথা বলে চিঠির শেষে ধনখড়ের মন্তব্য, ‘রাজভবনে আপনার এক জন বন্ধু রয়েছেন, যিনি মানুষের স্বার্থে সব সময়েই সহযোগিতায় প্রস্তুত এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে তৈরি’!
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy