রয়টার্সের প্রতীকী ছবি।
পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং আরও পরীক্ষা। ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করে র্যাপিড অ্যান্টিবডি নির্ভর রক্তপরীক্ষা এবং আরও বেশি লালারস নমুনা পরীক্ষা করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তার ঠেকানো সম্ভব বলে মত চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
উপসর্গ থাকলে তবে লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হবে, এমন নীতিতে বহু দিন আটকে ছিল কেন্দ্র। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় নীতি পরিবর্তন করে ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ’ (আইসিএমআর) এপ্রিলের প্রথমে জানায়, যে এলাকাগুলিতে আক্রান্ত বেশি (হটস্পট) বা যেখানে বহু লোকের জমায়েত হয়েছে, সেখানে ব্যাপক হারে, র্যাপিড অ্যান্টিবডিনির্ভর রক্তপরীক্ষা করা হবে। বৃহস্পতিবার রাতে সেই নির্দেশিকায় ফের পরিবর্তন এনে তারা জানায়, হটস্পট এলাকায় ফ্লু-এর উপসর্গ (জ্বর, নাক দিয়ে ক্রমাগত জল পড়া, গলা ব্যথা, কাশি) থাকলে সরাসরি লালারসের নমুনা পরীক্ষা করাতেই হবে। তবে যাঁরা এই উপসর্গ নিয়েই সাত দিন কাটিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের প্রথমে র্যাপিড অ্যান্টিবডিনির্ভর রক্তপরীক্ষা করতে হবে। প্রসঙ্গত, ফ্লু-এর উপসর্গ থাকলে র্যাপিড টেস্ট-এ রক্ত পরীক্ষা করে দেখা হয়, তাতে বিশেষ অ্যান্টিবডি রয়েছে কি না। তা থাকলে লালারস নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।
বেশি নমুনা পরীক্ষা করে সংক্রমণ প্রতিরোধে সাফল্যের বিষয়টি নজরে আসে দক্ষিণ কোরিয়াকে কেন্দ্র করে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানান, আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন এমন প্রত্যেককে সে দেশে কড়া নজরদারির আওতায় আনা হয় প্রথমেই। প্রাথমিক ভাবে ৬০০টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মাধ্যমে তিন লক্ষেরও বেশি মানুষের নমুনা পরীক্ষা হয়েছিল। পালমোনোলজিস্ট রাজা ধর বলেন, ‘‘শুধু লকডাউন করে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আক্রান্তদের সংস্পর্শে এসেছেন বা হাল্কা বা মাঝারি মাত্রায় উপসর্গ যাঁদের রয়েছে, তাঁদের চিহ্নিত করে পরীক্ষা করতে হবে। উপসর্গ নেই, কিন্তু দেহে ভাইরাস লুকিয়ে রয়েছে এমন সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে এ ধরনের রোগীদের চিহ্নিত করে নমুনা পরীক্ষা না হলে, লকডাউন থেকে বেরোতে পারব না।’’
এ প্রসঙ্গে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে আসা রোগীদের (সিভিয়র অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইলনেস) পরীক্ষায় গুরুত্ব দেওয়ার পক্ষপাতী কমিউনিটি মেডিসিনের প্রবীণ চিকিৎসক সমীর দাশগুপ্ত। তাঁর কথায়, ‘‘টেস্টিং সেন্টারে যাতে দ্রুত নমুনা পৌঁছয়, তারও ব্যবস্থা করতে হবে।’’ প্রসঙ্গত, ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত আইসিএমআর-এর নির্দেশ মেনে বিভিন্ন রাজ্যে ‘সারি’ পরীক্ষার প্রথম পর্যায়ের রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ২৫৬ জন সারি-রোগীর করোনা পরীক্ষা হয়েছে। তাতে রাজ্যের ৬ জেলার ৯ জনের করোনা ধরা পড়ে।
বস্তুত, অ্যান্টিবডি নির্ভর পরীক্ষা বা লালারস নমুনা পরীক্ষা বেশি হলে করোনা আক্রান্ত অনেক বেশি নজরে আসবেন অর্থাৎ তাঁদের সংখ্যা স্বাভাবিক নিয়মে বাড়বে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা যেমন কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ করে জানিয়েছেন, মহারাষ্ট্র, ছত্তীসগঢ়, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কেরল প্রথম থেকেই বেশি নমুনা পরীক্ষায় জোর দিয়েছিল। ফলে সেখানে আক্রান্ত বেশি ধরা পড়ায় সামগ্রিক পরিস্থিতি বুঝতে সুবিধা হয়েছে। দিল্লিতে যেমন সম্প্রতি হটস্পটগুলিতে আরও পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেজরীবাল সরকার। পশ্চিমবঙ্গের সাতটি জায়গা ‘হটস্পট’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে বলে ইতিমধ্যেই জানিয়েছে নবান্ন। র্যাপিড টেস্ট প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিংহ আগেই জানিয়েছেন, বিষয়টি বিবেচনাধীন।
নাইসেডের অধিকর্তা শান্তা দত্তের কথায়, ‘‘হটস্পট থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা থাকে। আইসিএমআরের পরামর্শকে প্রাধান্য দিয়ে হটস্পটগুলিতে র্যাপিড পরীক্ষা শুরু করা উচিত।’’ তিনি জানান, এ রাজ্যে ১৭ মার্চ প্রথম আক্রান্তের হদিস মেলার পরে নজরদারির কাজ অনেক গতি পেয়েছে। অন্য রাজ্যগুলিতে সেই কাজ অনেক আগে শুরু হয়েছে। ফলে সে সব রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যাও বেশি। এখন যে আরও বেশি করে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে, সে বিষয়ে একমত নাইসেড প্রধান।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy