Advertisement
৩০ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in West Bengal

অজমের-ফেরতদের গায়ে স্প্রে, উঠছে প্রশ্ন

ট্রেন থেকে নামার পরে যাত্রীদের হাতে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া ছাড়াও এক বালিকা-সহ কয়েক জনের গায়ে তা যন্ত্রের মাধ্যমে স্প্রে করা হয়।

অজমের থেকে আসা এক ব্যক্তির গায়ে স্প্রে। নিজস্ব চিত্র

অজমের থেকে আসা এক ব্যক্তির গায়ে স্প্রে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ডানকুনি শেষ আপডেট: ০৬ মে ২০২০ ০৬:১৫
Share: Save:

লকডাউনে দীর্ঘদিন আটকে থাকার পরে অবশেষে মঙ্গলবার রাজস্থানের অজমের থেকে বিশেষ ট্রেনে ফিরলেন এ রাজ্যের ১১৮৭ জন। হুগলির ডানকুনিতে ট্রেনটি আসার পরে যাত্রীদের সকলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। কারও শরীরে অসুস্থতার লক্ষণ ছিল না বলে প্রশাসনের দাবি। এ দিনই বাসে করে সকলকে তাঁদের বাড়ি পাঠানো হয়। সকলকেই আপাতত ঘরে নিভৃতবাসে থাকতে হবে।

ট্রেন থেকে নামার পরে যাত্রীদের হাতে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া ছাড়াও এক বালিকা-সহ কয়েক জনের গায়ে তা যন্ত্রের মাধ্যমে স্প্রে করা হয়। এই কাজ কতটা বিধিসম্মত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল মাইক্রো-বায়োলজি অ্যান্ড ইনফেকশন কন্ট্রোল বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দেবকিশোর মণ্ডল জানান, অ্যালকোহলযুক্ত স্যানিটাইজ়ার কনুই পর্যন্ত ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু শরীরে স্প্রে করা কোনও ক্ষেত্রেই ভাল নয়। তা চামড়ার পক্ষে ক্ষতিকর। ওই ভাবে স্যানিটাইজ়ার ব্যবহারের অনুমতিও নেই।

তা হলে কারা করল স্প্রে? ডানকুনির উপ-পুরপ্রধান দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুরসভার তরফেই স্প্রে করা হয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার মানুষের শরীরে ক্ষতিকারক নয় বলেই জানি। তাই স্প্রে করি।’’ জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও অবশ্য বলেন, ‘‘হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার তো হাতে দেওয়ার কথাই বলা হয়েছিল। কেন শরীরে স্প্রে করা হল খোঁজ নিয়ে দেখব।’’

আরও পড়ুন: রাজ্য জুড়ে নজর রাখছেন ৬০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী, ফেসবুকে হিসাব দিলেন মমতা

শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়

• সোমবার রাজ্যে ফিরলেন ১১৮৭ জন শ্রমিক
• বাড়ি-ফেরা শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষায় প্রতিটি জেলাকে নির্দেশ
• স্টেশন বা বাস-স্টপে স্ক্রিনিং কেন্দ্র
• ট্রেন-বাস থেকে নামতেই শ্রমিকদের স্ক্রিনিংয়ে মেডিক্যাল টিম
• উপসর্গ থাকলে স্ক্রিনিং কেন্দ্রেই লালারসের নমুনা সংগ্রহ
• পরিস্থিতি বুঝে কোয়রান্টিন কেন্দ্র বা হাসপাতালে ভর্তি
• উপসর্গ না থাকলে হোম-কোয়রান্টিনে
• এ দিন ফেরা প্রায় সকলেই হোম-কোয়রান্টিনে
• বীরভূমের চার জন কোয়রান্টিন কেন্দ্রে
• পরিযায়ীদের জন্য ব্যবহারের নির্দেশিকা-সহ তিন সপ্তাহের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনসালফেটের পাউচ

ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে বহু শ্রমিক রয়েছেন। বাড়ি ফিরে একচিলতে ঘরে পরিবারের সকলের মধ্যে কী করে তাঁরা নিভৃতবাসে থাকবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকদের একাংশ। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, ওই শ্রমিকদের উপরে কড়া নজর রাখা হবে।

আরও পড়ুন: কলকাতার কোন কোন এলাকা কন্টেনমেন্ট জোন, দেখে নিন

এ দিন বেলা পৌনে ১১টা নাগাদ ট্রেনটি ডানকুনির ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই প্রতিটি কামরার দরজায় জীবাণুনাশক স্প্রে করা হয়। যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে হাজির ছিলেন রাজ্যর মন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মলয় ঘটক, তপন দাশগুপ্ত এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্তারা। যাত্রীদের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে প্ল্যাটফর্মের মাঝ বরাবর মোটা দড়ি দিয়ে ভাগ করা হয়েছিল।

যাত্রীদের প্রথমে ‘থার্মাল গান’-এর সামনে দাঁড়াতে হয়। প্রত্যেককে নতুন মাস্ক দেওয়া হয়। টিকিট কাউন্টারের সামনে টেবিল পেতে বসা স্বাস্থ্যকর্মী ও চিকিৎসকেরা প্রত্যেক যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে শংসাপত্র দেন। তারপর তাঁদের ডানকুনি রেল ইয়ার্ডে অপেক্ষমাণ বাসের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁদের খাবারের প্যাকেট বিলি করা হয়। এর পরে

পর্যায়ক্রমে যাত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে পাড়ি দেয় বাস।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘‘বিকেল সাড়ে চারটের মধ্যে হুগলি থেকে মোট ৬০টি বাসকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার রওনা করিয়ে দেওয়া হয়। কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি।’’

যাত্রীদের মধ্যে শেখ আজাদি এবং শেখ নুর মহম্মদ পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুরের বাসিন্দা। তাঁরা অজমেরের একটি হোটেলে কাজ করতেন। তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা মেদিনীপুর থেকে মোট দশ জন ওখানে কাজ করতাম। লকডাউনে হোটেল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপদে পড়ে যাই। প্রশাসন ফেরানোর কথা বলতেই বুকে বল পেলাম।’’ কলকাতার খিদিরপুরের ওয়াটগঞ্জের এক মহিলা দু’টি শিশু-সহ পরিবারের সাত জনকে নিয়ে গিয়েছিলেন অজমেরে তীর্থ করতে। ১৮ এপ্রিল তাঁদের ফেরার কথা ছিল। কিন্তু ফিরতে না পেরে বিপাকে পড়েছিলেন। শেষে সোমবার উঠে বসেন এই বিশেষ ট্রেনে। তাঁর কথায়, ‘‘ফিরতে কোনও সমস্যা হয়নি। খাবারও পেয়েছি।’’

হাতে টিকিট থাকলেও তাঁদের কাউকে টিকিট কাটতে হয়নি বলে ওই যাত্রীরা জানিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে হুগলির হরিপালের অনন্তপুরের বাসিন্দা শেখ মফিজুর বলেন, ‘‘আমাদের আসতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য ট্রেনে ওঠার আগে টিকিট দেওয়া হয়। আমরা কেউই টিকিট কাটিনি।’’ তবে, টিকিটের ভাড়া কে দিলেন, এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।


(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.i• ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in West Bengal Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy